কয়েকজন উপদেষ্টা বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনের বিষয়ে তুলে ধরবেন।
Published : 15 Jan 2025, 10:09 AM
রাষ্ট্র সংস্কারের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নিয়ে চার খাতের সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে বুধবার।
নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধানের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সদস্যরা এদিন তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রতিবেদন জমা দিতে বুধবার চারটি সংস্কার কমিশন আসবেন রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অন্য উপদেষ্টারাও থাকবেন। প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর একটু আলাপ হবে, পুরো জিনিসটি তারা বলবেন কী কী ফাইন্ডিংস আছে, কী কী বিষয় আছে বিশদ বর্ণনা থাকবে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আশা করছি এই মিটিং হবে।”
তিনি জানান, কয়েকজন উপদেষ্টা বেলা ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনের বিষয়ে তুলে ধরবেন।
“কমিশনের প্রতিবেদনের সামারি (সারসংক্ষেপ) আপনারা পাবেন। গণমাধ্যমে মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। পরে পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে যখন ডিসকাসন হবে তা পুরোটা তুলে ধরা হবে।”
নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছিল ৩ অক্টোবর। আর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল ৬ অক্টোবর।
এরপর গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা হয় গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমার কথা থাকলেও প্রথম ধাপে গঠিত ছয়টি কমিশনের মেয়াদ পরে বাড়ানো হয়। এর মধ্যে চার কমিশন বুধবার প্রতিবেদন দিচ্ছে।
কমিশনগুলো ওয়েবসাইট খুলে মতামত সংগ্রহ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, মতবিনিময়, জরিপ ও লিখিতভাবে মতামত সংগ্রহ করেছে। সুপারিশমালা প্রস্তুতে এসব প্রস্তাব ও মতামত পর্যালোচনা করা হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখে এক গুচ্ছ সুপারিশ করতে যাচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন, যার মূল লক্ষ্য রাষ্ট্র ও সরকারে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণ।
কমিশনের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, এক ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, সাংবিধানিক সংস্থা বাড়ানো ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাড়ানোসহ সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ থাকছে কমিশনের প্রতিবদনে।
তিনি বলেন, “এককেন্দ্রীকরণ থেকে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরির প্রস্তাব থাকছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা থাকবে সুপারিশে। মূল কথা হচ্ছে আমরা এককেন্দ্রিকতা থেকে বেরোতে চাই জবাবদিহিমূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে।”
স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, নারী আসন বাড়ানো ও তাদের সরাসরি নির্বাচনসহ নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন সভা নিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ থাকবে প্রতিবেদনে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচনি আইন পরিবর্তনের পাশাপাশি কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের সুপারিশ থাকছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনেরও সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিশন।
অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একগুচ্ছ সুপারিশ রাখবে বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইনে সংশোধন, ইসির ক্ষমতা বাড়ানো ও জবাবদিহিতা তৈরি, নির্বাচনি শাস্তি ও ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানগুলো কিছু ক্ষেত্রে আরও সুনির্দিষ্ট করা, হলফনামার ছকে পরিবর্তন, হলফনামার তথ্য যাচাই বাধ্যতামূলক করার কথা থাকতে পারে সুপারিশে।
পাশাপাশি নির্বাচনে ‘না’ ভোটের সুযোগ যুক্ত করা, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনা, ন্যূনতম ভোটার ছাড়া নির্বাচন বাতিল, জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা ইসির অধীনে রাখা, দুই কক্ষের পার্লামেন্ট ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রণয়নসহ বেশ কিছু সুপারিশ থাকছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, আইনের পাশাপাশি নির্বাচিইন আচরণবিধিতেও স্পষ্ট পরিবর্তন এনে কঠোর তদারকির সুপারিশ করার সম্ভাবনা রয়েছে প্রতিবেদনে। এতে অধ্যায় থাকবে অন্তত এক ডজন।
“আদালতের রায়ে গণভোট ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরার পথ তো খুলছে। বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতির পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি সুপারিশের কথাও ভাবছি আমরা। দুই কক্ষের পার্লামেন্টের কথাও বিবেচনায় রয়েছে।”
পুলিশ সংস্কার কমিশন
সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বাধীন এ কমিশন পুলিশ সংস্কারের জন্য সাধারণ মানুষের মত নিয়েছিল।
সেই সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৮.৭ শতাংশ মানুষ এ বাহিনীকে ‘রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত’ করার ওপর জোর দেন।
বাহিনীতে নিয়োগ, বদলি, বেতনভাতা ও পদোন্নতি, বৈষম্য নিরসনসহ নানা বিষয়ে সুপারিশ থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, সব জায়গায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। সেটা ঠিক করতে না পারলে কোনোভাবেই পুলিশ সংস্কার সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক আমলাতন্ত্রের কারণে পুলিশ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে পুলিশকে স্বতন্ত্র কমিশনের অধীনে রাখার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সুপারিশে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জুলাই-অগাস্টে হতাহতের জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির সুপারিশ এবং পুলিশ যেন রাজনৈতিক দলের বাহিনীতে পরিণত না হয় ও বল প্রয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়েও সুপারিশ থাকতে পারে।
দুদক সংস্কার কমিশন
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদককে স্বাধীন ও কার্যকর করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে ৪৭ দফা সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিচ্ছে এ সংস্কার কমিশন।
এ কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মোটা দাগে দুই ধরনের সংস্কারের সুপারিশ রেখে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
“একটিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের সরাসরি সংস্কার; আরেকটিতে রয়েছে এই সংস্কার কার্যকর করার জন্য পুরো রাষ্ট্রকাঠামোয় পরিবর্তন আনার সুপারিশ।”
পুরনো খবর
দুদক সংস্কারে ৪৭ সুপারিশ কমিশনের
ক্ষমতার ভারসাম্য, বিকেন্দ্রীকরণ এবং আর যা থাকছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে
'রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত না হলে পুলিশ সংস্কার স্থায়ী হবে না'
পুলিশকে 'রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত' দেখতে চায় ৮৮.৭% মানুষ
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে কী সুপারিশ থাকছে?