সাতজন বিচারপতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এবং একজন পদত্যাগ করেছেন।
Published : 08 Feb 2025, 11:46 PM
দলবাজ আখ্যা দিয়ে বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে ছুটিতে পাঠানো ১২ বিচারপতির বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে সর্বোচ্চ আদালত; যাদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল।
শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের অক্টোবরে হাই কোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।
“এই ১২ জনের মধ্যে ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি একজন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। দুইজন বিচারপতি হাই কোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি; আরও দুইজন বিচারপতি ইতোমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছেন।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আরও চার বিচারকের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান কার্যক্রম এবং তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
তবে এসব বিচারকের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্ত নামার তথ্য দিয়েছিল।
সেদিন বলা হয়েছিল, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্দেশনা পাওয়ায় কাউন্সিল পরের সপ্তাহে তা তদন্ত শুরু করবে।
তারও আগে গত ১৫ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, হাই কোর্টের ‘কয়েকজন’ বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।
উভয় সময়েই তদন্তের আওতায় আসা বিচারকদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজন বিচারককে অপসারণের দাবি ওঠার পর গত ১৬ অক্টোবর ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
হাই কোর্টের যে বিচারকদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল, তারা হলেন- বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন, বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন, বিচারপতি খিজির হায়াত ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।
এদিকে বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করে গত ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দিয়েছে।
এর ফলে বিচারপতি অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে গত সরকারের সময় যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান ঘটে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হলে সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে টানাপড়েন তৈরি হয়।
এরপর এক রিট মামলার রায়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে আপিল বিভাগ।
২০১৭ সালের ওই রায়েই বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলা হয়। তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের ওই রায় সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের টানাপড়েনে নতুন মাত্রা দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও পরে আর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি।
গত অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে রিভিউ আবেদনটির শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হককে ২০১৯ সালের অগাস্টে বিচারকাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
এরপর থেকে তারা বিচারিক দায়িত্বের বাইরেই ছিলেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর এ বছর ১৯ নভেম্বর তাদের পদত্যাগের খবর জানানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে।
আরও কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত করবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল
'কয়েকজন' বিচারপতির বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে জুডিশিয়াল কাউন্সিলের
বিচারপতি অপসারণ হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে: রিভিউ
তিন বিচারপতির 'দুর্নীতির' অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর খবর
বিচারপতি অপসারণ হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে
আপাতত বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না ১২ বিচারপতি