“নিয়ম অনুযায়ী হাই কোর্টে রায়দানকারী বিচারপতি আপিল বেঞ্চে আপিলের শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না। এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য আসবে।”
Published : 27 Apr 2025, 01:04 PM
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড মামলায় ৪৯ আসামিকে খালাসের হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের আবেদন আগামী ৪ মে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে।
আবেদনটি রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় থাকলেও বেঞ্চ পুনর্গঠন না হওয়ায় এদিন শুনানি হয়নি।
বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল শোনার জন্য আগামী রোববার ঠিক করে দিয়েছে।
শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আসামিপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি মো. শিশির মনির বলেন, হাই কোর্টের যে বেঞ্চ এ মামলার রায় দিয়েছিল, তার দুই বিচারকের মধ্যে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান এখন আপিল বিভাগের বিচারক। তিনিও এদিন আপিল বেঞ্চে ছিলেন।
“নিয়ম অনুযায়ী হাই কোর্টে রায়দানকারী বিচারপতি আপিল বেঞ্চে আপিলের শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না। এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য আসবে।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তোলে।
সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা। তারা সহযোগিতা নেয় বিদেশি জঙ্গিদের। আর এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা দুই মামলার রায় দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় সেই রায়ে।
এরপর আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর রায় দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
তাতে জজ আদালতের রায় বাতিল করে যারা আপিল করেছেন এবং যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়।
আসামিদের সবাই খালাস পাওয়ায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার কি তাহলে সুবিচার পাবে না?
সেই প্রশ্নের উত্তর আসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৭৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে।
সেখানে বলা হয়, ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে ‘একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক’ ঘটনা, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী রহমানও ছিলেন।
“নিহতদের আত্মার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যা এ পর্যন্ত এই মামলায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে।
“এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত, যাতে সঠিক এবং দক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”
আদালতের রায়ের এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এই আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
এরপর চলতি বছর ১৯ মার্চ হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে হাই কোর্টের রায় বাতিল চাওয়া হয়।
জজ আদালতে কার কী সাজা হয়েছিল?
১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড: সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, পিন্টুর ভাই হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মাইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন
১৯ জনের যাবজ্জীবন: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মো. খলিল, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, আরিফ হাসান সুমন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন।
১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড: সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, মামলার প্রথম দিকের তদন্ত কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আব্দুর রশীদর ৩ বছরের জেল।
সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা ও আইজিপি শহিদুল হক, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক এটিএম আমিন আহমদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদারের ২ বছরের কারাদণ্ড।
পুলিশের সাবেক উপ কমিশনার (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান এবং উপ কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাইদ হাসানের ২ বছরের কারাদণ্ড।
পুরনো খবর
হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়: ২১ অগাস্ট মামলায় ‘ফের তদন্ত’ হওয়া উচিত
২১ অগাস্ট মামলায় সবাই খালাস: কেন এ রায়
২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক ও বাবরসহ সব আসামি খালাস