ঢাকায় ১০১ কিলোমিটার বেগে তীব্র কালবৈশাখী, বজ্রঝড়

বৃষ্টি থাকবে আরও কয়েকদিন; ঢাকায় চার দিন পর তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে আবার, বলছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2023, 03:29 PM
Updated : 23 May 2023, 03:29 PM

টানা কয়েক দিনের অস্বস্তিকর গরমের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় তীব্র কালবৈশাখী বয়ে গেছে; ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ঝরেছে বৃষ্টিও।

মঙ্গলবার বিকালে শুরু হওয়া এ ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০১ কিলোমিটার। এসময় নগরীতে বাইরে থাকা মানুষজন সাময়িক বেকায়দায় পড়লেও কালবৈশাখী, বজ্রপাত ও তাপপ্রবাহের এ মৌসুমে ঝড়ের সঙ্গে আসা এক পশলা বৃষ্টিতে স্বস্তিও পেয়েছেন। বিকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি রাতেও ঝিরঝির করে ঝরছে।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার পরে আকাশে বজ্রমেঘের আনাগোনা বাড়তে থাকে আর সঙ্গে অস্থায়ী দমকা হাওয়া। আকাশ কালো হয়ে আসার মধ্যে ধীরে ধীরে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির দাপটও বাড়ে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, পরিকল্পনা কমিশনের পেছনে ঝড়ে গাছ পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরে সর্বোচ্চ ৭৪ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যাওয়ার রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এর পাঁচ মিনিট পর মৌসুমের সর্বোচ্চ কালবৈশাখী বয়ে যায় ১০১ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আবহাওয়া স্টেশনে।

ঢাকায় বিকালে বৃষ্টিতে স্বস্তি নামলেও এর আগে পর্যন্ত তীব্র গরমে আগের কয়েকদিনের মতই ভুগেছে নগরবাসী। এদিন খুলনা বিভাগসহ মাদারীপুর ও পাবনা জেলার উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

এদিন যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।

সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা কমে তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার আভাসও রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ফারুক বলেন, “আগামী তিন দিন ঝড়বৃষ্টির প্রবণতা থাকবে। ২৫ মে ঢাকা ও আশপাশে বৃষ্টির আভাস রয়েছে। তবে ২৬ ও ২৭ মে এর পরে বৃষ্টির প্রবণতা থাকবে না। তাপমাত্রা আবার বাড়তে থাকবে।”

পূর্বাভাসে দেশের নদীবন্দরগুলোর জন্য সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে- পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সতর্কতা

মঙ্গলবার তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, দেশে সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসে সর্বোচ্চ হলে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে গড়ে প্রায় ২৫০ জনের মত মানুষ মারা যান।

বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গ্রামের বির্স্তীণ ক্ষেত ও হাওর অঞ্চলে। বজ্রপাতে প্রায় দিনই মানুষ ছাড়াও প্রচুর গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা বিচার করে ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বিবরণীতে আরও বলা হয়, বজ্রপাত একটি আকস্মিক ঘটনা, যা প্রতিরোধ করা অত্যন্ত কঠিন। মৃত্যু ও হতাহত হওয়া এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

এসময় যা করতে হবে

>> বজ্রঝড় সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাওয়া নিরাপদ, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।

>> বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।

>> বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।

>> বজ্রপাতের সময় যে কোন ধরনের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।

>> খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক।

>> বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিত হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।

>> যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ রাখা যাবে না।

>> বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে ধরার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। কারণ আহত কিংবা মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুৎ থাকে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দন দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারলে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। বেশি দেরি হলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।

>> বজ্রপাতে আহত হলেও কিছু কিছু মানুষের হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে তাৎক্ষনিকভাবেই মারা যায়। আবার কারও-কারও হৃদপিণ্ড একটু বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়। তাদের যদি হাসপাতালে আনা যায় তখন বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।

>> যদি আহত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড সচল থাকে তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর দিতে হবে। সেজন্য সিপিআর সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। সিপিআর দিয়ে হৃদপিণ্ড সচল রাখতে হবে। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স বা কোন গাড়ি ডেকে দ্রুত আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে।

আরও পড়ুন:

Also Read: বজ্রপাতে চার জেলায় ৭ প্রাণহানি, আহত ৪

Also Read: পাবনায় বজ্রপাতে ১৪টি গরুসহ যুবকের মৃত্যু

Also Read: হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ৯ কৃষক নিহত

Also Read: ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাত, প্রাণ গেল ২ কিশোরের

Also Read: সিলেটে বজ্রপাতে ৩ শিশু নিহত