“নৃশংসভাবে নিজেদের অফিসারদেরই তারা মেরেছিল। মসৃণভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’’
Published : 16 Apr 2025, 09:12 PM
পুরো জাতি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “আমরা সবাই উত্তর খুঁজছি। কমিশনকে এ ঘটনা তদন্তে সফল হতেই হবে। এ রহস্য উদঘাটন করতেই হবে।”
বুধবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তদন্ত কমিশনের সদস্যরা তাকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “নৃশংসভাবে নিজেদের অফিসারদেরই তারা মেরেছিল। মসৃণভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।
ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি ওঠে। গত ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তদন্ত কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলার কথা জানিয়ে আগামী জুনের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে তদন্ত কমিশন।
কমিশন প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আলম ফজলুর রহমান বলেন, “আমরা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যেহেতু ১৬ বছর আগের ঘটনা, তাই অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। অভিযুক্ত অনেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
তার আগে ৮ মার্চ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে সাক্ষ্য দেওয়ার আহ্বান জানায় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন।
তার সঙ্গে সাবেক দুই সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ ও আজিজ আহমেদ এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) নূর মোহাম্মদকে সাক্ষ্য দিতে ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’ দিয়েছে কমিশন।
কমিশনের ওয়েবসাইটে এ ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে’ কমিশন বলেছে, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এসব ব্যক্তির সাক্ষ্য নেওয়াটা ‘অপরিহার্য’ হয়ে পড়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তদন্ত কমিশনের প্রধান আলম ফজলুর রহমান বলেন, “আমরা কারাগারে থাকা কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তদন্তের জন্য যোগাযোগ করা প্রয়োজন, এমন ২৩ জন বিদেশে অবস্থান করছেন। তার মধ্যে ৮ জন সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের প্যাটার্নটা নিয়ে তদন্ত করছি। ডিজিকে হত্যার পর বাকিদের হত্যা করা হয়েছিল। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরিকল্পনা ছাড়া এমন হত্যাকাণ্ড হতে পারে না।”
“এটা যেন একটা পলাশীর পুনরাবৃত্তি। এটার শেকড় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে,” বলেন তিনি।
কমিশনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, “এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডে একজন কর্মকর্তা/কর্মচারীকেও সরানো হয়নি। কাউকে দায়ী করা হয়নি। এটি গোয়েন্দা সংস্থা, সামরিক বাহিনী এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতা।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান, মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, ড. এম আকবর আলী, মো. শরীফুল ইসলাম, শাহনেওয়াজ খান চন্দন ও এ টি কে এম ইকবাল।
তার আগে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমিশনের সভাপতি ফজলুর রহমান।
সেদিন তিনি বলেছিলেন, “এ পর্যন্ত যে ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছেন তিনজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল, দুজন মেজর জেনারেল, পাঁচজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, চারজন কর্নেল, চারজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, সাতজন মেজর, দুজন ক্যাপ্টেন, সাতজন বিডিআর সদস্য এবং তিনজন শহীদ পরিবারের সদস্য।”
পুরনো খবর:
বিডিআরে বিদ্রোহ হয়নি, 'ওটা সেনা হত্যার ষড়যন্ত্র': তদন্ত কমিশনের প্রধান
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে সাক্ষ্য দেওয়ার আহ্বান