সাক্ষ্য দেওয়া যাবে দুই পদ্ধতিতে- সরাসরি কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে; কিংবা ভিডিও কনফারেন্সে, বলা হয়েছে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে।
Published : 08 Mar 2025, 09:27 PM
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে সাক্ষ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন।
তার সঙ্গে সাবেক দুই সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ ও আজিজ আহমেদ এবং সেই সময় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) নূর মোহাম্মদকে সাক্ষ্য দিতে ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’ দিয়েছে কমিশন।
শনিবার কমিশনের ওয়েবসাইটে এ ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে’ কমিশন বলেছে, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এসব ব্যক্তির সাক্ষ্য নেওয়াটা ‘অপরিহার্য’ হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে দুই পদ্ধতিতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে- সরাসরি কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে; কিংবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।
এতে শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, মির্জা আজম ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম রয়েছে।
এছাড়া ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের তৎকালীন অধিনায়ক মুহাম্মদ শামসুল আলম এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মোল্লা ফজলে আকবরকেও সাক্ষ্য দিতে বলেছে কমিশন।
সাক্ষীর তালিকায় আরও আছেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ।
ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সেই থেকে তিনি সেখানেই আছেন। অপরদিকে সরকার পতনের পর সাক্ষ্য দেওয়ার তালিকায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে নেই। তাদের কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছেন বলেও খবরে এসেছে।
এর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনরায় তদন্তের জন্য ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। এটির প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই সপ্তাহের মাথায় ৭ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক (২০০০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০১ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন) এ এল এম ফজলুর রহমান তদন্তের জন্য শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে কিংবা ভারতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলেছিলেন।
তিনি সেদিন বলেছিলেন, “দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়টাকে আমরা দুই মাসের মধ্যে শেষ করব। আমরা একটা মাস হাতে রাখব। বিশেষ করে আমরা যাকে সন্দেহ করছি সেই শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। আমরা চেষ্টা করব ফরেন মিনিস্ট্রির মাধ্যমে কিংবা ডিরেক্টলি ভারতের হাই কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা তাকে এক্সট্রাডাইট করার কথা বলব অথবা আমাদের টিম সেখানে গিয়ে তার ইন্টারভিউ নেবে।”
শনিবার ১৫ জনকে সাক্ষ্য দিতে আহ্বান জানানোর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিশন আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে এই সাক্ষ্য নেওয়া সম্পন্ন করতে চায়। এজন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে প্রস্তাবিত সময়সূচি জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
কমিশনের ইমেইল ([email protected]) বা ফোনে (০১৭১৪০২৬৮০৮) এ জন্য তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।
ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি ওঠেছ। এর মধ্যে গত ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
তদন্তের অগ্রগতি জানাতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমিশনের সভাপতি ফজলুর রহমান।
সেদিন তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত যে ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছেন তিনজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল, দুজন মেজর জেনারেল, পাঁচজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, চারজন কর্নেল, চারজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, সাতজন মেজর, দুজন ক্যাপ্টেন, সাতজন বিডিআর সদস্য এবং তিনজন শহীদ পরিবারের সদস্য।”
বিডিআরে বিদ্রোহ হয়নি, 'ওটা সেনা হত্যার ষড়যন্ত্র': তদন্ত কমিশনের প্রধান