ক্ষমতার পালাবদলের পর পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়।
Published : 24 Dec 2024, 11:59 PM
দেড় দশক আগে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত কমিশনকে ৯০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।
এ ঘটনার পেছনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে শনাক্ত করতে সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে কমিশনকে।
মঙ্গলবার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আগের দিন সোমবার পিলখানায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তদন্ত কমিশন অনুমোদনের কথা বলেছিলেন সংবাদমাধ্যমকে।
সাত সদস্যের এই কমিশনে বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক এ এল এম ফজলুর রহমানকে সভাপতি করা হয়েছে। অন্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মুন্সি আলাউদ্দিন আল আজাদ, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়। ওই ঘটনার তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন/কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত মাসে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।
কমিশনের কার্যপরিধি তুলে ধরে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদ্ঘাটন করা, হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, আলমত ধ্বংসকারী, ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করবে কমিশন। এছাড়া অন্য সব বিষয়সহ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশি-বিদেশি ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, সংগঠনকেও কমিশন চিহ্নিত করবে।
বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের সময় ও হত্যাকাণ্ডের আগে বা পরে হওয়া অন্যান্য অপরাধের স্বরূপ উদঘাটন, দায়ী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, সংগঠন চিহ্নিত করার কাজ করবে কমিশন।
ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া বা ঘটনায় সহায়তাকারী অন্যান্য দেশি বিদেশি ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ ও সংগঠনের সম্পৃক্ততা ও দোষীদেরও কমিশন চিহ্নিত করবে।
হত্যাকান্ডসহ অন্যান্য অপরাধ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ ও সংগঠনও শনাক্ত করবে তদন্ত কমিশন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হত্যাকান্ডসহ অন্যান্য অপরাধে ইতোমধ্যে করা মামলা, ওই মামলায় অভিযুক্তদের দায় ও অপরাধ অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি যারা মামলা থেকে বাদ পড়েছে সেই সব আসল অপরাধীদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কমিশনকে প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা বলা হয়েছে।
তদন্তের জন্য বাংলাদেশের যে কোনো স্থান পরিদর্শন এবং সন্দেহভাজন যে কোনো ব্যক্তিকে কমিশনে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়াও উপযুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে কমিশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করারও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কমিশনকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ তদন্ত কমিশনকে সাচিবিক সহায়তাসহ সকল প্রকার সহায়তা দেবে। এছাড়া কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে।
কমিশনের প্রধান ও সদস্যরা সরকার নির্ধারিত সরকারি পদমর্যাদা, বেতন, সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
তবে কমিশন প্রধান বা কোনো সদস্য অবৈতনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে চাইলে বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে না চাইলে সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নিতে হবে।