সি আন, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ শান সি’র রাজধানী। ইতিহাস ঐতিহ্যের শহর সি আন। প্রাচীন চীনে যে চারটি প্রধান রাজধানী ছিল, তার মধ্যে সি আন অন্যতম।
Published : 18 Oct 2017, 11:04 AM
বহুদিন ধরেই ইচ্ছে ছিলো সি আন দেখার। সময়, সাধ্য কোনোটাই ঠিকমতো হচ্ছিলো না। ক্যান্সারের ওপরে এক আন্তর্জাতিক সভায় যোগ দিতে সম্প্রতি সেখানে যেতে হয়েছিলো। সাথে সুযোগ এসে গেল এই ইতিহাস সমৃদ্ধ নগরীর পথে হাঁটার।
সি আনের প্রতি আমি মূলত আগ্রহী ছিলাম ইসলামের সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য। চীনে সি আনেই প্রথম ইসলামের প্রচলন ঘটে। ‘থাং ডায়ন্যাস্টি’র সম্রাট গাওজং-এর সময়ে ৬৫১ সালে এখানে ইসলামের রীতিনীতি পালনের অনুমোদন হয়।
সি আনের ইসলামিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নিদর্শন হল ‘সি আন মুসলিম কোয়ার্টার’-এর মধ্যে অবস্থিত ৭৪২ সালে নির্মিত মসজিদ, যেটা সমগ্র চীনে আয়তনে সবচেয়ে বড়। প্রায় তেরোশ’ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদকে ‘গ্রেট মস্ক অব সি আন’ (চীনা ভাষায় ‘সি আন সিংজেন সি’) বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন রাজবংশের আমলে বিভিন্ন সময়ে এই মসজিদের সংস্কার হয়েছে।
অনন্য কারুকার্য খচিত দেয়ালগুলো যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। মুসলমানদের ধর্মীয় উপাসনালয় হলেও এই মসজিদ চৈনিক ইতিহাস এবং শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পরিচ্ছন্ন, পবিত্র, নিরবতাপূর্ণ সৌন্দর্য্যে ভরা এক জায়গা। মূল মসজিদে ঢোকার দরজা পর্যন্ত ভিন্নধর্মীয় ভ্রমণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিদিন বিভিন্ন দেশিয় হাজার হাজার মানুষ এখানে ঘুরে যান ইতিহাসের সাক্ষী মসজিদটি দেখতে। সি আন শহরের কেন্দ্রে যে জাদুঘরটি আছে, সেখানে দেখতে পেলাম বিভিন্ন সময়ের আরবি শিলালিপি, ক্যালিগ্রাফি আর মুদ্রা।
সি আন শহরের অন্যতম আকর্ষণ হলো ‘মুসলিম স্ট্রিট/ (চীনা ভাষায় ‘হুইমেনজিয়ে’)। দুই দিকে ছোট-বড় শতাধিক দোকানের মাঝের এই রাস্তা সি আনের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক। হাজারও রকমের খানাদানা আর ইসলামিক সংস্কৃতির পোশাক-আশাক ও অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রীর পশরা নিয়ে বসেন এখানকার মুসলিম ব্যবসায়ী পরিবারবর্গ।
মাত্র তিনদিনের সফর ছিল সি আনে। সভার কাজ শেষে মেট্রোয় চেপে দিনে একবারের জন্য হলেও যাওয়া হত মুসলিম স্ট্রিটে। খাওয়া-দাওয়া হতো। ইতিহাস সমৃদ্ধ সি আন মসজিদে নামাজ হতো। চোখের সামনেই যেন ভেসে বেড়াতো তেরোশ’ বছর আগের চৈনিক ইসলাম।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
ইমেইলঃ [email protected]
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |