বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন, জরুরি পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধের মহড়া এবং পর্নসাইট বন্ধের মত উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে টেলিকম খাতকে শৃঙ্খলায় আনার পাশাপাশি স্পর্শকাতর বিষয় সামলাতে দক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা দেখা গেছে বাংলাদেশের টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে।
Published : 30 Dec 2016, 11:39 AM
দেশে প্রথমবারের মতো দুই টেলিকম অপারেটর রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে পুরনো অপারেটর সিটিসেলের দেনার দায়ে ডুবতে বসা ছিল বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের টেলিকম খাতের বড় ঘটনা।
আর বছরের শেষে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগের গুজব ছিল অন্যতম আলোচিত বিষয়।
নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সেবা এমএনপি এ বছরের মধ্যে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেই নিলামই করতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। ব্যবহারের বাইরে থাকা টু জি ও থ্রি জি তরঙ্গ নিলাম এবং দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
কলড্রপে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও একটি অপারেটর ছাড়া কেউ তা দেয়নি।
এ বছর ডট বাংলা (.বাংলা) ডোমেইনের বরাদ্দ পায় বাংলাদেশ; এর মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ডট বাংলা আইডিএনের যাত্রা শুরু হয়। এছাড়া বছর শেষে পর্ন সাইট বন্ধের উদ্যোগ ছিল আলোচনায়।
লালফিতার দৌরাত্ম্য নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের অসন্তোষের মুখে কাজে গতি আনতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ‘ফাইল ট্র্যাকিং’ চালু হয় বছর শেষে।
ডাক বিভাগে গতি আনতে এ বছর পোস্ট অফিস ব্যাংক শুরু করারও উদ্যেগ নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
আন্তর্জাতিক কলরেট নির্ধারণ নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতের ‘প্রভাবশালী একাধিক পক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ’, রাষ্ট্রায়াত্ব টেলিকম কোম্পানি বিটিসিএলের এমডি নিয়োগ এবং কয়েকটি প্রকল্পে ‘অনিয়মের’ ঘটনায় ‘ক্ষুব্ধ হয়ে’ তারানা হালিম মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে পারেন বলে গত ২১ নভেম্বর গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসে। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে জানায়, ওই প্রতিবেদন ‘তথ্যভিত্তিক নয়’ ।
পৌনে পাঁচশ কোটি টাকা বকেয়া শোধ না করায় ২০ অক্টোবর বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশের সবচেয়ে পুরনো অপারেটর সিটিসেলের তরঙ্গ। আদালতের আদেশে ১৭ দিন পর তরঙ্গ ফিরে পায় সিটিসেল। তবে তাদের সেবা চলছে একেবারেই সীমিত আকারে।
বিটিআরসির হাতে থাকা অতিরিক্ত টু জি ও থ্রি জি তরঙ্গ নিলামের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বছরের শেষে এই তরঙ্গ নিলামে বিটিআরসিকে মূল্য নির্ধারণ ও উদ্যেগ নিতে চিঠি পাঠায় টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
গত জানুয়ারি মাসে মোবাইল ফোনে প্রতি কলড্রপে এক মিনিট করে ক্ষতিপূরণ দিতে অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। তবে এই ক্ষতিপূরণ কোন প্রক্রিয়ায় দেওয়া হবে বা কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অপারেটরদের মধ্যে বারবার বৈঠক হলেও তা কার্যকর হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান, নিয়ন্ত্রক সংস্থার হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী একটি অপারেটর ছাড়া আর কেউ কলড্রপে ক্ষতিপূরণ দেয়নি। অপারেটরদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেছেন, আগামী জানুয়ারি থেকে কলড্রপে ক্ষতিপূরণ না দিলে বিটিআরসি কঠোর হবে।
ওই কমিটি ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও আপত্তিকর কনটেন্টের পূর্ণাঙ্গ ওয়েব তালিকা প্রস্তুত করে সেগুলো বন্ধে তিন স্তরের কারিগরি প্রস্তাব তৈরি করবে বলে জানানো হয়।
তালিকা ও কারিগরি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২৮ ডিসেম্বর বিটিআরসি জানায়, দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ৫৬০টি পর্নসাইট দেখার পথ বন্ধ করেছে।
পর্নসাইটে প্রবেশকারীদের নামের তালিকা হচ্ছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছিল এর আগে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া হলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, পর্ন সাইটে প্রবেশকারীদের নামের তালিকা হচ্ছে না এবং তা করা সম্ভবও নয়।
বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ নির্মাণের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আগামী বছর ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বছরের শেষ নাগাদ দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও দেশের অভ্যন্তরে কেবল স্থাপনের কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী বছরের শুরুতে তা হবে বলে জানিয়েছে সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)।
গুলশান হামলার মত বিশেষ পরিস্থিতিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের যোগাযোগের পথ বন্ধে ইন্টারনেট সেবা তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়ার মহড়া করে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১ অগাস্ট বিকেল থেকে মধ্য রাতের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য এই মহড়া করে।
শুধু অবৈধ ভিওআইপি নয়, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোর মত স্মার্টফোন অ্যাপে ভয়েস কল সুবিধার কারণে আন্তর্জাতিক ফোনকলের ব্যবসায় বাংলাদেশ মার খাচ্ছে বলে এক অনুষ্ঠানে জানান টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির প্রধান শাহজাহান মাহমুদ।
তিনি বলেছিলেন, মোবাইল ফোনে এ ধরনের ‘ওভার দ্য টপ’ অ্যাপ ব্যবহার করে ভয়েস কলের সুবিধা নিয়ে আগামী দুই এক মাসের মধ্যে একটি সিদ্ধান্তে আসতে চায় বিটিআরসি।
পরে অবশ্য বিটিআরসি জানায় অ্যাপ ব্যবহার করে ভয়েস কলের সুবিধা বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।