২০১৯ সালে চ্যাং’এ-৬-এর পূর্বসূরী চ্যাং’এ-৪ চাঁদে অবতরণ করেছিল, দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি চাঁদের একই জায়গা ঘুরে দেখার করার লক্ষ্যে।
Published : 04 May 2024, 05:06 PM
পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। এক একটি দিক সবসময় পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে। অপর পাশ সবসময় থাকে আমাদের চোখের আড়ালে। এই অপর পাশকেই বলা হচ্ছে চাঁদের দূরবর্তী অংশ। আর সেদিকেই নজর পড়েছে চাঁদে যাওয়ার অভিযানে প্রস্তুনি নেওয়া সবগুলো দেশের। সর্বশেষ চাঁদে রকেট পাঠানো চীনও তাই করছে।
কিন্তু কেন?
চাঁদের দূরবর্তী অংশটি বেশ এবড়োখেবড়ো ও রহস্যময়।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দিকটি পৃথিবী থেকে সবসময় আড়ালে থাকে। ১৯৫৯ সালে স্পেস প্রোব ‘লুনা ৩’-এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এ অংশটির ছবি তোলা হয়, যার আগ পর্যন্ত জানা সম্ভব ছিল না এর পাহাড় ও গভীর খাদ সম্পর্কে।
প্রথম চন্দ্রজয়ের ৬৫ বছর পরেও চাঁদের দক্ষিণ মেরু সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে। ফলে, যারাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যাওয়ার উদ্যোগ নিন না কেন, বিষয়টি রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। চীনের চ্যাং’এ-৬ মিশনও এ ব্যতিক্রম নয়। এর আগে ২০১৯ সালে চ্যাং’এ-৬-এর পূর্বসূরী চ্যাং’এ-৪ চাঁদে নেমেছে। সেটা ছিল দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি চাঁদের একই জায়গা ঘুরে দেখার জন্য।
তবে, এবারের লক্ষ্য কেবল ঘুরে দেখা নয়, চাঁদের পৃষ্ঠের নমুনা পৃথিবীতে আনাও।
এ নভোযানের গন্তব্য চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ‘আইটকেন বেসিন’, যেটি মূলত আড়াই হাজার কিলোমিটার চওড়া একটি খাদ। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে পুরোনো খাদগুলোর মধ্যে একটি।
এই খাদটি এত বড় যে, এর মধ্যেও ছোট ছোট অনেক গর্ত রয়েছে, যা গ্রহাণুর কার্যকলাপের একটি টাইম ক্যাপসুল হিসেবে বিজ্ঞানীদের শতকোটি বছর আগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
মিশন সন্ধানের
চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কতদিন আগে এসব খাদ তৈরি হয়েছিল তা বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে দেখবেন। এক তত্ত্ব অনুসারে, ৪০ লাখ বছর আগে গ্রহাণুর তরঙ্গের পর তরঙ্গের আঘাতের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সৌরজগৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
তবে, যদি চাঁদের ‘আইটকেন বেসিন’টি পুরোনো হয় তবে তা ‘হেভি বম্বার্ডমেন্ট বা চন্দ্র বিপর্যয়’ তত্ত্বের উপর নতুন করে সন্দেহের সৃষ্টি করবে।
পাশাপাশি চাঁদের দূরবর্তী অংশ থেকে আনা নমুনা আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ করতে পারে, যেটি ছোট পরিসরে ছিল বলে ধারণা করা হয়।
এবং দৈবক্রমে এখানে যদি এমন কোনো টুকরার সন্ধান মেলে, যা চাঁদের গভীরে উৎপন্ন হয়েছিল ও অনেক আগে অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে পৃষ্ঠে উঠে এসেছে, তাহলে সেই টুকরাটি গবেষকদের জন্য হবে ‘যক্ষের ধন’।
এদিকে বিজ্ঞানের পাশাপাশি চাঁদে পানির উৎসেরও খোঁজ করছে চীন।
‘মহাকাশ দৌড়ের দ্বিতীয় ধাপের চেকার্ড ফ্ল্যাগ’
অনেক বেশি ছায়াযুক্ত দক্ষিণ মেরুর বিভিন্ন গর্ত প্রচুর পরিমাণে বরফের উৎস হওয়ার সম্ভাবনা চাঁদে মানুষের নতুন করে যাওয়ার প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখছে। আর পানি পাওয়া গেলে তা নভোচারীদের পানির চাহিদা, দরকারি অক্সিজেন ও রকেট জ্বালানির জন্য বড় ধরনের সুসংবাদ হিসাবে দেখা দেবে।
অন্যান্য দেশ ও বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে সবাই এখন চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দিকে ছুটছে, যেটিকে ‘মহাকাশ দৌড়ের দ্বিতীয় ধাপের চেকার্ড ফ্ল্যাগ’ বা রেস শেষের পতাকা হিসাবে উল্লেখ করেছে স্কাই নিউজ।
তবে, এবারের এ প্রতিযোগিতা স্নায়ু যুদ্ধের মতো নয়, সম্পদের জন্য, যেখানে বর্তমান সম্পদ পানি ও ভবিষ্যতের সম্পদ খনিজ।