প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরো ৭৯ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
Published : 04 May 2024, 04:51 PM
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরো ৬১ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এরা সবাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
শনিবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে ২৬ জন চেয়ারম্যান পদে, ১৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাকি ১৬ জন সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির যে সকল নেতৃবৃন্দ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদেরকে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
এর আগে আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের দেড়শ উপজেলায় ভোটে অংশ নেওয়ায় এর আগে ৭৯ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
অর্থাৎ দুই দফায় বিএনপি বহিষ্কার করল মোট ১৪০ জনকে।
প্রথম দফায় বহিষ্কার করার পর একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপি তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়েছে। বাকিরা কেউ নির্বাচন থেকে সরতে রাজি নন। বরং ভোট বর্জন করায় দলকেই দুষছেন তারা।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের মত এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটও বর্জন করেছে বিএনপি। তবে দশম সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটে প্রার্থী ছিল বেশি। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জিতে এসেছেন, একজন ভাইস চেয়ারম্যান সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে জিতে এসেছেন।
আরও বেশ কয়েকজন অন্য দলে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েছেন।
জাতীয় নির্বাচনের মত উপজেলা নির্বাচনেও যাচ্ছে না বিএনপি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- এই সিদ্ধান্তে অটল তারা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অন্তত দেড় বছর কোনো স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি।
তবে এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরও আছে ভিন্ন কৌশল। তারা ভোট জমিয়ে তুলতে দলীয় প্রতীক তুলে দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
বিএনপি ভোটে না এলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা বলছেন, তাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অংশ নিচ্ছেন। তাতে আওয়ামী লীগপন্থিদের ভোট ভাগের সুযোগ নিতে চাইছেন তারা।
তবে বিএনপি ছাড় দিচ্ছে না। গত ২৬ এপ্রিল ৭৬ জনকে, পরদিন তিন জনকে এবং সবশেষ ৩০ এপ্রিল বহিষ্কার করা হয় চারজনকে।
এরপর সংবাদ সম্মেলন করে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মেহেরপুর সদর উপজেলায় সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী রোমান আহমেদ। বিএনপি তখন তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।
রুহুল কবির রিজভীর বলেছেন, “উপজেলা নির্বাচন বিএনপি বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্ত যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে প্রথমে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না বলে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা মনে করি উপজেলা নির্বাচনও অবাধ সুষ্ঠু হবে না।”
যারা ভোটে এসেছের তাদের সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ তৈরি হয়েছে বলে এর আগে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে স্থানীয় নির্বাচনের ভোট বর্জনে ভোটারদের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা বহিষ্কার
রংপুর বিভাগে চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপির পদ হারিয়েছেন মোট চার জন। এদের মধ্যে পঞ্চগড়ে আছেন দুই জন।
এদের মধ্যে আছে পঞ্চগড় বোদা উপজেলায় প্রার্থী হাবিব আল-আমিন ফেরদৌস। তিনি বিএনপির ময়দান দিঘী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি।
দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বুলবুল ছিলেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক।
অন্য দুই জন হলেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রার্থী রিয়াদ আরফান সরকার রানা (সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক) এবং দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রিয়াজুল ইসরাম রীজু (দিনাজপুর জেলা বিএনপির উপদেষ্টা)।
রাজশাহী বিভাগে চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপির পদ হারিয়েছেন দুই জন। এরা হলেন নাটোরের লালপুরের ভিপি আরিফ (যুগ্ম আহ্বায়ক, লালপুর উপজেলা শাখা) এবং বাগাতিপাড়ার জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক (যুগ্ম আহ্বায়ক, বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখা)।
খুলনা বিভাগে চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন তিন জন। এরা হলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জুলফিকার আলী ভুট্টো (সাবেক সহ-সভাপতি, গাংনী উপজেলা বিএনপি), খুলনার দিঘলীয়া উপজেলার এনামুল হক মাসুম (সাবেক সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, জেলা বিএনপি) এবং ফুলতলা উপজেলার জনাব সাব্বির আহমেদ রানা। তিনি খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
বরিশাল বিভাগে বরগুনা সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হালিমের সব পদ কেড়ে নিয়েছে বিএনপি। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
ঢাকা বিভাগে পদ হারিয়েছেন চার জন চেয়ারম্যান প্রার্থী।
এদের মধ্যে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলারই দুই জন। তারা হলেন মো. আব্দুল মান্নান (মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক, জেলা বিএনপি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দল) এবং খন্দকার লেয়াকত হোসেন। শেষোক্ত জন জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন।
বাকি দুই জন হলেন টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল (সহ-সভাপতি, জেলা বিএনপি) ও মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার মাহবুবুর রহমান বাচ্চু হাওলাদার। তিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য।
ময়মনসিংহ বিভাগে দুই জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপির সদস্য পদ জারিয়েছেন। তারা হলেন ময়মনসিংহ সদরের হোসাইন নুর মোহাম্মদ আনির (সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, সদর থানা কৃষকদল) এবং শেরপুরের নকলার প্রার্থী মোকসেদুল হক শিপলু। তিনি জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন।
সবচেয়ে বেশি ৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী পদ হারিয়েছেন সিলেট বিভাগে।
এরা হলেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কামাল (ধর্মপাশা উপজেলার প্রার্থী), তাহেরপুর উপজেলা বিএনপির প্রার্থী ও একই উপজেলার সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, বিশ্বম্ভপুর উপজেলার দুই প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য হারুনুর রশিদ দুলাল ও মোহন মিয়া বাচ্চু, জামালগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সদস্য নুরুল হক আফিন্দি, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির প্রথম আহ্বায়ক মজিবুর রহমান সেফু এবং সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রার্থী ও জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন।
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত বাকি তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী চট্টগ্রাম বিভাগের।
এরা হলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান রানা, কক্সবাজারের পেকুয়ার প্রার্থী সাফায়েত আজিজ রাজু (পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য এবং কক্সবাজার জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি) এবং বান্দরবানের লামার প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি জাকের হোসেন মজুমদার।
ঢাকা বিভাগেরও আছেন দুই জন। এদের মধ্যে আসাদ মাতব্বর ফরিদপুরের সালথায় এবং মাহমুদুল হাসান রবিন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা
রংপুর বিভাগের চার জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
এবার হলেন: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মোরসালিন বিন মমতাজ রিপন, দেবীগঞ্জ উপজেলার আব্দুর রহিম, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার হযরত আলী এবং বীরগঞ্জ উপজেলার মামুনুর রহমান মামুন।
রাজশাহী বিভাগে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জিয়াউর রহমানও বহিষ্কৃত হয়েছেন।
খুলনা বিভাগের আছেন দুই জন। তারা হলেন আমিরুল ইসলাম ও গোলাম রহমান। দুই জনই ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগে আছেন দুই জন। এবার হলের বরগুনা সদর উপজেলার সানাউল্লাহ সানি ও জয়নুল আবেদীন রাফি মোল্লা
ময়মনসিংহ বিভাগে আছেন দুই জন। দুজনই শেরপুরের নকলা উপজেলার প্রার্থী। তারা হলেন রেজাউল করিম ও দেওয়ান মামুন।
সিলেট বিভাগের আছেন চার জন।
এরা হলেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সিলেটের জৈন্তাপুরের ছাদ উদ্দীন সাদ্দাম, মৌলভীবাজার সদরের আব্দুল হেকিম ও হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আব্দুল আলিম ইয়াছিন।
চট্টগ্রাম বিভাগে আছেন বাকি দুই জন। এরা হলেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার আবু বক্কর সিদ্দীকি রুবেল ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কামাল উদ্দীন।
সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী
রংপুর বিভাগের আছে তিন জন। এরা হলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার লাইলী বেগম, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ফিরোজা বেগম সোনা এবং গাইবান্ধা সদরের শিল্পী খাতুন।
রাজশাহী বিভাগে সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুই জন। এরা হলেন নওগাঁর পোরশা উপজেলার মমতাজ বেগম ও পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নাসরিন পারভীন মুক্তি।
খুলনা বিভাগে বহিষ্কৃত হয়েছেন একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি হলেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার প্রার্থী ইন্দোনেশিয়া শিতু।
ময়মনসিংহ বিভাগে বহিষ্কার হয়েছেন দুই জন। এরা হলেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রোকসানা বেগম এবং শেরপুরের নকলার দেওয়ান কোহিনুর।
ঢাকা বিভাগেও বহিষ্কারের আদেশ পেয়েছেন দুই জন। এরা হলেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার প্রার্থী তাসলিমা জেসমিন পাপিয়া ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রার্থী শাহিনুর আক্তার বিউটি।
সিলেট বিভাগে সংরক্ষিত নারী আসনের চার জন প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এরা হলেন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভপুর উপজেলার মদিনা আক্তার, সিলেটের জৈন্তাপুরের পলিনা রহমান, মৌলভীবাজারের রাজনগরের প্রার্থী ডলি বেগম এবং হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার আলফা বেগম।
চট্টগ্রাম বিভাগে সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে বিএনপির পদ হারিয়েছেন দুজন। তারা হলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রাবেয়া আক্তার রুবি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার হামিদা চৌধুরী।
আরও পড়ুন-
উপজেলা নির্বাচনেও ভোটকেন্দ্রে যাবেন না: ভোটারদের বিএনপি
উপজেলা ভোট: বিএনপির পদ খোয়ালেন আরও ৪ জন
ভোটে থাকছেন বিএনপির বহিষ্কৃতরা, দুষছেন দলকেই
উপজেলা নির্বাচন ফাঁদ: নেতাকর্মীদের আব্বাস