চাকরি থেকে অব্যাহতির প্রজ্ঞাপনের পর থেকে নিরুদ্দেশ পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার প্রায় ২০ ঘণ্টা পর বাড়িতে ফিরেছেন।
Published : 07 Sep 2016, 08:09 PM
বুধবার দুপুরে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুর বাড়িতে ফিরলেও তিনি কারও সঙ্গে তেমন কোনো কথা বলেননি বলে জানিয়েছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।
তিন মাস আগে চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই রয়েছেন বাবুল।
মোশাররফ বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে (বাবুল) দুপুরে ফিরে দোতালায় অবস্থান করছে। তার সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি।”
তিনি বলেন, “বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি উপরের সিদ্ধান্ত। বাবুল এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কী করবে।”
স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় মাস পর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদে নানা ধরনের গুঞ্জন ছড়ালেও এ বিষয়ে পুলিশ কিংবা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য ছিল না।
তার প্রায় এক মাস পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, এসপি বাবুল চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন; যদিও গুঞ্জন রয়েছে যে ওই পদত্যাগপত্র দিতে তাকে বাধ্য করা হয়েছে।
তার ২২ দিন পর মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাবুলের আবেদনে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে।
তারপর বিকালে বনশ্রীর ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বাবুল। তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় শ্বশুর বাড়ির কেউ কিংবা মাগুরায় থাকা তার বাবা আব্দুল ওয়াদুদও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।
মোশাররফ বলেন, “রাতে সে এক তার আত্মীয়ের বাসায় ছিল, তবে কোন আত্মীয়ের বাসায় ছিল, তা জানি না।”
বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ এবং বাবা ওয়াদুদ দুজনই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক।
বাবুলের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াদুদ বলেন, “আল্লাহ পাক ফয়সালা করার মালিক। … দোষী না, তারপরও দোষী করার চেষ্টা হচ্ছে। এখন এটা মেনে নিতে হবে, কোনো উপায় নেই।”
বাবুল চাকরি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও জানান তার বাবা। এজন্য পরবর্তী কোনো ধাপ থাকলে সেখানেও চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানান।
তবে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বাবুল স্বেচ্ছায়ই পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।
“তার যদি চাকরি করার মানসিকতা না থাকে, তাহলে তো তাকে জোর করাতে পারব না।”
তবে বাবুলকে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তরে দেখা গিয়েছিল। তিনি চাকরিতে যোগ দিতে আবেদন করেছিলেন বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবুলের পদত্যাগপত্র আসলেই গ্রহণ করা হবে কি না, তা নিয়ে আমাদের অনেকের মনে সংশয় ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তার পদত্যাগের আবেদন ও কাজে যোগদানের আবেদন দুটোই ছিল। পরে তার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
পদোন্নতি পেয়ে এসপি হয়ে বাবুল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হয়ে আসার কয়েকদিনের মধ্যে গত ৫ জুন সকালে বন্দরনগরীর ওআর নিজাম রোডে সন্তানের সামনে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে।
এই হত্যামামলার বাদী বাবুল। মামলার তদন্তে এখনও তার সম্পৃক্ততার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানালেও পুলিশ প্রধান শহীদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
বাবুলকে গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ছড়ালেও মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান তা উড়িয়ে দেন।
তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, সে গ্রেপ্তার হলে আমার জানার কথা।”
মিতু হত্যা মামলার তদন্ত সঠিক পথে রয়েছে বলে খুনের তিন মাস পূর্তিতে বুধবার চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেন।