বাবুলের আবেদনেই তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের দেড় মাস পর ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই তাকে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এবিষয়ে বাবুলের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের পর ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া বাবুলের মোবাইল ফোন বন্ধ। স্বজনরাও তাকে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান ঢাকায় অবস্থান করায় বাবুলকে গ্রেপ্তারের গুঞ্জনও চলছে।
স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে বাবুলের কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাননি।
“এখন পর্যন্ত কনক্রিট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।”
তিন মাস আগে চট্টগ্রামে মিতু হত্যার পর তার স্বামী বাবুলই মামলাটি করেছিলেন। তবে বাদী হলেও সাক্ষ্যপ্রমাণ পেলে বাবুলকে গ্রেপ্তারে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন।
পদোন্নতি পেয়ে এসপি হয়ে বাবুল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হয়ে আসার কয়েক দিনের মধ্যে গত ৫ জুন সকালে বন্দর নগরীর ও আর নিজাম রোডে সন্তানের সামনে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে।
হত্যার ধরন দেখে শুরুতে জঙ্গিদের সন্দেহের কথা জানালেও সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ আগের অবস্থান থেকে সরে আসে। তবে কী কারণে হত্যাকাণ্ড, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
হত্যামামলায় এই পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম পুলিশ। এছাড়া সন্দেহভাজন দুজন খুনি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে জানায় তারা।
স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে আলোচনায় ছিলেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে জঙ্গি দমন অভিযানের নেতৃত্বদাতা অন্যতম পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল।
স্ত্রী খুন হওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুর বাড়িতে ওঠেন বাবুল। সেখান থেকে গত ২৪ জুন তাকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এই বিষয়ে পুলিশের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না আসার মধ্যে বাবুলকে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কর্মকর্তাদের সন্দেহের গুঞ্জন ছড়ায়।
এরপর বাবুলের পদত্যাগপত্র দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে এলেও তা নিয়ে পুলিশের রাখঢাকের মধ্যে এক মাস পর গত ১৪ অগাস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, বাবুলের নিজের লেখা পদত্যাগপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছে।
তারপর বাবুলকে পুলিশ সদর দপ্তরে দেখা গেলেও তিনি চাকরিতে যোগ দেননি বলে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন।
কর্মস্থলে বাবুলের অনুপস্থিতির বিষয়ে পুলিশ প্রধান শহীদুল হক সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেছিলেন, স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বাবুলের চাকরি করার ইচ্ছা নেই।
পদত্যাগপত্র আসার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানানোর পর ২২ দিন পর মঙ্গলবার বাবুলের পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রজ্ঞাপন দেয় মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “২৪তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগদানকৃত বাবুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, সিএমপি (বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এবং পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত) কে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হল।”
শ্বশুরবাড়িতে নেই বাবুল
মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের পর বিকাল থেকে কয়েকবার বাবুলের মোবাইল ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে কল করা হয়েছিল। প্রথমে তিনি ফোন ধরেননি, পরে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সন্ধ্যায় তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবুল বিকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। এখনও ফেরেনি।”
জামাতার চাকরি থেকে অব্যাহতির খবর গণমাধ্যমে দেখেছেন বলে জানান সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ। তবে এ বিষয়ে আর কিছু জানেন না বলে তিনি জানান।
রাতে আবার ফোন করা হলে তার শ্বশুর মোশাররফের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। বন্ধ পাওয়া যায় বাবুলের শ্যালিকাসহ শ্বশুরবাড়ির অন্যদের ফোনও।
রাতে বাবুলের বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছেলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি। তার ফোন বন্ধ পাচ্ছেন।
গত ২৪ জুন ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ১৪ ঘণ্টা বাবুলের ফোন বন্ধ থাকার সময় গুঞ্জন ডালপালা মেলেছিল।
তখন থেকে বাবুল বরাবরই গণমাধ্যম এড়িয়ে চলছেন। স্বজনরাও এসব বিষয়ে তার কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেননি।
বেশ কিছুদিনের নীরবতা ভেঙে বাবুল গত ১৩ অগাস্ট নিজের ফেইসবুক পাতায় লিখেছিলেন, “অনেকেই নতুন নতুন গল্প বানাতে ব্যস্ত… আমি তো বর্ম পরে নেই… আঘাত সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না।”
এরপর ২২ অগাস্ট একটি দৈনিকের সংবাদের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেইসবুকে লিখেছিলেন বাবুল। তারপর থেকে তার আর কোনো পোস্ট নেই।