বাবুল আক্তারের শ্বশুর ধন্দে

স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে রয়েছেন এসপি বাবুল আক্তার। সেখানে সর্বক্ষণ উপস্থিত থাকছেন পুলিশের ছয়জন সদস্য।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2016, 04:06 PM
Updated : 27 June 2016, 04:14 PM

তবে এই পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা নিচ্ছেন, নাকি জামাতার উপর নজরদারি চালাচ্ছেন- তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন, যিনি নিজেও পুলিশের একজন অবসরপ্রাপ্ত পরিদর্শক।

গত শুক্রবার নাটকীয় জিজ্ঞাসাবাদের পর বাবুলের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা তাকে এতদিন সিকিউরিটি দিচ্ছিল, তারাই তো সেদিন তাকে নিয়ে গেল। এখন রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে যায়, কার উপর ভরসা রাখব?”

সেক্ষেত্রে বাবুলকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে, না কি নজরে রাখা হচ্ছে বলে মনে করছেন- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “এটা বোঝা মুশকিল।”

বাবুলের শ্বশুরবাড়িতে পুলিশের পাহারার বিষয়ে জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ওসি মাঈনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না।”

গত ৫ জুন চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু খুন হওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন কয়েক মাস আগে বন্দর নগরী থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হয়ে আসা বাবুল।

মেরাদিয়ার হাজীপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকছেন বাবুল। সেখানে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, শ্যালিকা ও তার স্বামী রয়েছেন। ওই বাড়িতে প্রত্যেকদিন অন্তত ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তা অবস্থান করছেন।

এর মধ্যে গত শুক্রবার মধ্যরাতে পুলিশ আকস্মিকভাবে স্ত্রী খুনের মামলার বাদী বাবুলকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তা নিয়ে নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলে। তাকে ঘিরে পুলিশের সন্দেহের গুজবও রটে।

বাবুল আক্তার

শনিবার বিকাল পর্যন্ত বাবুলের ফোন বন্ধ থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে তার শ্বশুরসহ স্বজনরা। পরে ওই দিন বিকালে বাবুল ফিরে জানান, তদন্তের বিষয়ে বাদী হিসেবে তার সঙ্গে ‘আলোচনা’ হয়েছে।

এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া মামলার বাদী হিসেবে বাবুলকে তদন্তের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বললেও চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, বাবুলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তবে এটাকে জিজ্ঞাসাবাদ বলা যায় না।

কী নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ- তা নিয়ে পুলিশের রাখঢাকের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, মিতুর সন্দেহভাজন যে দুই খুনিকে ধরা হয়েছে, তা যাচাইয়ের জন্য বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

মেয়ের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ কোনো ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ এখনও করেনি মোশাররফকে।

বাবুলও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো কথা বলছে না বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তার শ্বশুর।

মোশাররফ বলেন, ডিবি অফিস থেকে ফেরার পর বাবুল একদিনও বাসার বাইরে যাননি। তাকে খুব বিষন্ন দেখাচ্ছে।

“কারও সঙ্গে সে কথা বলে না। শুধু একটা ঘরে থাকে।”

স্ত্রীর সঙ্গে বাবুল আক্তার

বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর নানা গুজবের মধ্যে মোশাররফ বলেছিলেন, “আমি কোনোদিন বিশ্বাস করি না, বাবুল মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করতে পারে। এটা একেবারেই অসম্ভব।”

তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো চাই, মেয়ের হত্যার বিচার হোক। আমার কাছে সেইটাই মেজর বিষয়। যারা তদন্ত করছেন তাদের কাছে কোনটা মেজর বিষয়, তারা তা বলতে পারবেন।

“আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই। এখানে বাবুল আক্তার বা তার কোনো ভাই জড়িত কি না, জানতে চাই না। এটা তো তদন্তের কোনো অগ্রাধিকার হতে পারে না।”

“তবে মামলা তদন্তের আগে কোনো কিছু যেন কারও উপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়। ঘটনা তদন্তে যেই অপরাধী হোক, তার বিচার করা হোক,” বলেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণেই বাবুলের স্ত্রীকে খুন করা হয়েছিল বলে প্রথমে ধারণা করেছিল পুলিশ। তবে এখন সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে বলা হচ্ছে, সন্দেহভাজন যে দুই খুনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা পেশাদার অপরাধী।

তবে কী কারণে, কার পরিকল্পনায় একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যা করা হল, সে বিষয়ে পুলিশ এখনও স্পষ্ট নয়। 

“সব কথা চাইলেও বলা যায় না। আমরা অনেক বিষয়ে এখন মন্তব্য করতে পারছি না। আপনার জীবনেও এমন পরিবেশ আসতে পারে,” বলেন মিতুর বাবা মোশাররফ।