বিদেশ ভালো: প্যারিসের বোরখা পরা সেই মেয়েটি

ওহ প্যারিস! আহ প্যারিস! এরকমই নাম ভেবেছিলাম লেখাটার। কিন্তু আগেও বলেছি, যস্মিন দেশে যদাচার কাছা খুলে নদী পার।

রিনভী তুষার, জার্মানির বার্লিন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2017, 10:20 AM
Updated : 2 May 2017, 10:20 AM

তাই লেখার বদলে লেখক খাও। বাঘ নামের বিড়াল ম্যায়াও। তাছাড়া আমি লিখি অনলাইন পত্রিকার জন্য। তাই যেই দিকে হাওয়া সেই দিকে ধাওয়া। যাই হোক ছড়া লেখার কাজ আমার না। এই কাজ বন্ধু অনিক খানের। হাজার চেষ্টাতেও যার ভাত মারা অসম্ভব।

প্যারিস যাবো, এ কথা বন্ধু মহলে বললাম। তারা পাত্তাই দিলো না। জার্মান বন্ধুরা প্যারিস যাবার কথা শুনলো। শুনে এমন ভাব করলো যেন, ওরা সবাই জানতো আমি একদিন না একদিন প্যারিস যাবো। অথবা আমি প্যারিস গমনের উদ্দেশ্য নিয়েই জার্মানি এসেছি। কিন্তু প্যারিস তো আর জার্মানি না। শুধুই প্যারিস। তো যাবো কিসে?

বিদেশিদের কাছে পরামর্শ চাওয়া অনেকটা চাইলেন ভাত পাইলেন বিষ টাইপ। বিশ্বাস হলো না তো? উদাহরণ দিচ্ছি। ধরেন আপনি বেকার বা একটা আকার ছিলেন দেশে।  স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশ আসছেন। কিছুদিন বাদে আপনার প্রেমিকাও আসলো। কিংবা আপনার কপাল ভালো। বিদেশেই আপনার প্রেম হলো। আপনি পাক পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। কিন্তু বিবাহ কি এতো সোজা বিদেশে? মিয়া বিবি রাজি তো কি আর করবে কাজী? নাহ্ এতো সোজা না এইখানে বিবাহ। কিরূপ কঠিন? সেটাও বলবো না। বিনা ইউরোতে নাহি দিবো সূচাগ্র সাজেশন।

তো আপনার বিবাহ। মনে ঢিং চাক ঢিং চাক। একটা ছোটখাট ওয়েডিং ইভেন্ট তো করতেই হবে। গেলেন জার্মান বন্ধুর কাছে। সে আপনাকে যেসব বুদ্ধি দিবে.. তার নমুনা- শোন মিয়া কম লোক দাওয়াত দিবা। তুমি শুধু ওয়েডিং কেকের টাকা দিবা। যারা দাওয়াতে আসবে তারাই তাদের খাবারের বিল দিবে। যার যার অ্যালকোহল তার তার মাথ্যাব্যাথা। শুনেন এদের সাজেশন! সাধে কি আর এরা শ্লেচ্ছ। এমন বিবাহ আয়োজন করলে হাসপাতালে বাসর রাত নিশ্চিত। কিন্তু এমন বিয়ের স্বপ্ন যে ঘরে ঘরে হাজারো বাঙালি তরুণ দেখে তা আমি জানি। কারণ আমি নিজেও..

যাই হোক চলেন প্যারিস যাই। ঠিক করলাম বাসেই যাবো। বাস সস্তা। সময় লাগবে প্রায় বারো ঘণ্টার মতো। বার্লিন থেকে বাস যাবে বেলজিয়াম হয়ে। খারাপ না। বাস কোম্পানির নাম ফ্লিক্স বুস। এরা একটু কড়া বিদেশিদের সাথে। কিছুদিন আগেই এক বাঙালি জামাই-বউ এই কোম্পানির বাস ড্রাইভারের খারাপ ব্যবহারের শিকার হয়েছেন।

বাসের টিকিট কাটলাম। যেই শুনে প্যারিস যাবো সেই কোন না কোন সাজেশন দেয়। মালডোভান অরিজিন রোমানিয়ান স্টেফান বলে- বড় খাই (বড় ভাই), রোমাদের থেকে সাবধান। এরা কিন্তু টানা পার্টি। বাংলাদেশের মলম পার্টির ফরাসি শাখা। মার্সেল বলে- বুন্ডু (বন্ধু), আলজেরিয়ান কেউ যদি তোমারে একলা পায়... তবে কিন্তু ‘আজ পাশা খেলবোরে সাম করে দিবে’। আমি ভয় পাই। কে আলজেরিয়ান আর কে রোমা! এটা চেনার প্র্যাকটিস শুরু করি। (বাই দা ওয়ে আসছে সেপ্টেম্বরে মার্সেলের শুভ বিবাহ)।

বাসের টিকিট তো হইলো। কিন্তু থাকা? থাকবো কই? আমার এক বন্ধু থাকে প্যারিসে। বাঁশি জুয়েল। ভালো বাঁশি বাজায়। কিন্তু সেখানে কতো দিন থাকা যাবে? আমার নিয়ম ভিন্ন। যেখানে যাই সময় নিয়েই যাই। না হলে তো বিদেশ ভালোর ঢোল বাজানো মুশকিল। প্যারিসের সবচেয়ে সস্তা হোটেলও মোটামুটি দামি। একটা অতি সস্তা হোটেল বুক করলাম। হোটেলের নাম গোলাপী হোটেল। হোটেলের পাশে একটা বিশাল বড় ব্যাংক। ব্যাংকের নাম বিএনপি।

বাসের ড্রাইভার টাই পরা। এক বাস দুই ড্রাইভার। আমার ভালো লাগলো বিষয়টা। ধরেন একই লোক ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনার স্টিয়ারিং ধরে ঘুরাচ্ছে, কেমন লাগবে? মেজাজ তো খারাপ হবারই কথা। তাই না? তাই বাসেরও মেজাজ খারাপ হয়। আর মেজাজ খারাপ হলেই বাস সোজা খালে! সেদিনই আমি দুইটা বিষয় পরিষ্কার বুঝলাম। এক. বাসও মানুষ। বাসেরও চয়েজ আছে। দুই. বাংলাদেশের বাসেরা কেন ঘনঘন রাস্তা ছেড়ে খালে বিলে চলে যায়। কাদের সাহেব আশা করি বিষয়টা একটু ভেবে দেখবেন।

তবে বাসের ড্রাইভার দুইজন হলেও টাই কিন্তু একটা। এরা একটা টাই-ই ভাগাভাগি করে পরে বাস চালায়। এরা দুইজন টাই সম্পর্কের ভাই। অভাগা যেদিকে চায় রাস্তার গাড়ি থেমে যায়। একটানা প্রায় চার ঘণ্টা বার্লিনের হাইওয়েতে একই জায়গায় বসে থাকলাম। কারণ একটা সড়ক দুর্ঘটনা। পথে বিরতি হলো তিনবার। প্রতিবার প্রায় মিনিট বিশেক।

এতো লম্বা জার্নি। টয়লেটের কি ব্যবস্থা! আমি তো ভয়ে ভয়ে জলপান বন্ধ করে দিলাম। হঠাৎ একটা বিষয় খেয়াল করলাম। কিছুক্ষণ পরপর মানুষজন চলন্ত বাসের দরজার দিকে যাচ্ছে.. গিয়েই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবার হাসিমুখে ফিরে আসছে। বিষয়টা আমার ধরতে ধরতে ভোর হয়ে গেলো। ওই অদৃশ্য হবার স্থান একটা টয়লেট। সেটা আমার বুঝতে লাগলো  প্রায় আট ঘণ্টা। আর আট ঘণ্টা পর টয়লেটের অবস্থা ঝাঁসি টু বারনাসি। তাই বাসের গায়ে লেখা ‘মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখুন’ এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে ঝিম মেরে পরে রইলাম। ঝিমঝিমিয়ে পৌঁছে গেলাম প্যারিস। নাহ শুধু প্যারিস না, ওহ প্যারিস! আহ প্যারিস!

প্যারিসে সম্বল বন্ধু জুয়েল আর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। ওহ হ্যাঁ! দু এক লাইন ভুলভাল ফরাসি ভাষা। ম্যারসি! পায়লাভু আঁঙলে! বঁজোঁ। জয়নুল আবেদীন প্যারিসে গিয়ে এক রেস্তোঁরায় কি খাবেন বলতে পারেননি। তাই এঁকে একেঁ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কি খেতে চান। কিন্তু আমার এই বুদ্ধিখানা মাথা পর্যন্তই ছিলো। প্রয়োগের চেষ্টা করি নাই। আমার ড্রইং-এর যে দশা কি আঁকতে কি আঁকবো..পরে কি না কি খেতে হয়।

জুয়েল ওর বাশিঁর মতোই ভালো। প্যারিসে স্যাটেলড ছেলে। দেশে তার ব্যাপক ডিমান্ড। ছেলে-বুড়ো-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই ওকে বিয়ে করতে চায়। ওর মুখে গল্প শুনে প্রথমবারের মতো আমারও মনে হলো- বিদেশ ভালো। তবে প্যারিস বোধ হয় একটু বেশিই ভালো। যে রাঁধে সে প্যারিসে গিয়েও রাঁধে। বন্ধুর বাসায় থাকবো কিন্তু রাঁধবো না! হয় নাকি! রাঁধলাম বিরিয়ানি। বিরিয়ানির চাল নরম হলো আর মাংস একটু শক্ত। কিন্তু খেতে হলো দারুণ। ট্যুরিস্ট কুকের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করা মাধুরী দিক্ষিতের স্বামী হতে চাওয়ার সমান।

একরাত পরেই গোলাপ এখন গোলাপী হোটেলে। পিংক হোটেলের সবই পিংক। কিন্তু রিসেপসেনিস্ট মরিশাসের। ভদ্রলোক বেশ রসিক। প্রথম রাতে হোটেলে একা একা বোর লাগছিলো। ভাবলাম ভদ্রলোকের সাথে আড্ডা দেই। রাত প্রায় একটা। হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে এক কাপল নিচে নেমে এলো। তারা জানতে চাইলো আশপাশে কোন ফার্মেসি আছে কিনা! তাদের একজনের প্রচণ্ড মাথাব্যাথা। খুবই খারাপ অবস্থা। মরিশাসের ভদ্রলোক বললেন- নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। অনেকেরই রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে মাথাব্যথা বেড়ে যায়। ফার্মেসিরও দরকার পরে। তাই খোলাও থাকে। সোজা রাস্তার শেষ মাথায় চলে যাও। সেখানে মাথাব্যাথা ভালো করার মতো দুইটা ফার্মেসি আছে।

আমি তার পরদিন সকালে প্যারিস খুঁজতে বের হলাম। সকালে গেলাম গেয়ার দু নর্ড-এ। ঝাঁ চকচকে রেল স্টেশন। ইচ্ছা দুপুরের খাবার খাবো। আশপাশে অনেক বাঙালি রেস্তোরাঁ। সাথে ভারতীয় আর পাকিস্তানি। সস্তায় পেট পুরে খাওয়া দাওয়া করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এখানে কেউ ফরাসি ভাষায় কথা বলে না।

এই ট্রেন স্টেশনে এক আজব অভিজ্ঞতা হলো। ইয়া বড় বড় প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক নিয়ে তিন আদম ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি তাদের মনোযোগ দিয়ে দেখলাম। ভাবলাম যেমন খুশি তেমন সাজো। একটু পরেই ভুল ভাঙলো। এরা ফরাসি স্পেশাল ফোর্স। প্যারিসের পথে পথে এখন ওনাদের আনাগোনা। অন্নদাশঙ্কর রায় প্যারিসকে বলেছিলেন- ‘অর্ধেক নগরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা’। সেই প্যারিস এখন অর্ধেক নগরী, অর্ধেক পুলিশ। আমি এসব অস্ত্রসস্ত্র দেখে চিন্তায় পরে গেলাম। জ্ঞান ফিরলো এক ফরাসি বুড়ার কথায়।

-কি আমেরিকান?

(আমি মাথা নাড়লাম)

-ভালো। কেন আসছো প্যারিসে? কিসসু নাই এইখানে আর।

-কেন? মোনালিসা বিবির মাজার!

-আরে নাহ! ওই সব ফালতু জিনিস। ফরসিরা সব অলস। কোন কাম-কাজ করে না। সারাদিন কফি আর আড্ডাবাজি। দেশ-বিদেশের সব ইমিগ্রান্ট এখন এদেশে।

-ভালো তো। তোমাদের লুটপাটের মাল এরা সবাই ফেরত নিতে আসছে।

বুড়া এবার ক্ষেপে গেলো। তাই বলে এভাবে? ওই যে দেখো বোরখা পরা সেই মেয়েটি। ভিক্ষা করে। কিছুদিন আগেও মিষ্টি করে ভিক্ষা চাইতো। আর এখন? মেয়েটি জাতিতে আলজেরিয়ান। দেখে মনে হলো কেউ জোর করে ওর চেহারায় কালি মেখে দিয়েছে। তার দিকে আঙুল তুলতেই সে এগিয়ে এলো। এসেই বাড়িয়ে দিলো ভিক্ষার হাত। দাদু ফরাসি ভাষায় কি যেন বললেন। সাথে সাথেই মেয়ের হাতের বেগুন ফসকে গেলো গরম তেলে।

মেয়ে পারলে দাদুকে মাথায় তুলে আছাড় মারে। আমি আর হাসি আটকাতে পারলাম না। বললাম- দাদু তোমার ডেমো সার্থক। কিন্তু মেয়েকে কী বললে? তেমন কিছু না। বলেছিলাম বোরখাটা খুলে ভিক্ষা করলে বেশি টাকা পাবে। আর না হলে চলো আমার সাথে, আমার ঘরে বউ নাই। মেয়েটি ততক্ষণে একটু দূরে সরে গেছে। কিন্তু আমাদের সে অভিশাপ দিয়েই যাচ্ছিলো।

দাদু আবার মেয়েটিকে কাছে ডাকলেন। কিন্তু এবার আর যায় কই! ডাকতেই সে চিৎকার করে দৌড়ে আসলো আমাদের দিকে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি আর দাদু দু’জন দুই দিকে ঝেড়ে দৌড়। জীবনে প্রথম বোরখা পরা মেয়ের দৌড়ানি খেলাম।

এরপর গেলাম আইফেল টাওয়ারে। সেখানে মানুষ আর মানুষ। এই টাওয়ার ভিক্টর লাস্টিগ নামে এক বিশ্বখ্যাত বাটপার দুই দুইবার বিক্রি করে দিয়েছিলেন। একবার তো টাওয়ার তোমাকেই বিক্রি করবে বলে এক ক্রেতার কাছ থেকে ঘুষও নিয়েছিলেন। টাওয়ারে গিয়েই পড়লাম বৃষ্টির খপ্পরে। উদ্ধার করলেন এক বাঙালি ভাই। দশ ইউরোর ছাতা দিয়ে দিলেন পাঁচে।

কিন্তু একটু পরেই আরেকখানা কিনতে হলো। প্যারিসের বৃষ্টি বাংলাদেশের বৃষ্টির মতো মনোরোমা। কিন্তু সেখানেও বোরখা পরা সেই মেয়েটি। আসলেই সেই কিনা ঠিক জানি না। একই রঙের বোরখা। দূর থেকে বোরখা পরা সেই মেয়েটিই মনে হলো। সন্ধ্যা নামালাম সেখানেই। ফেরার পথে পথ হারালাম। কারণ পাতাল রেলে কাজ চলছে। ভুল বাসে প্রায় এক ঘণ্টা জার্নি করলাম। এক ফরাসির কাছে জিজ্ঞেস করলাম আমার ঠিকানা। সে ইংরেজি জানে না। হঠাৎ ভাঙা ইংরেজিতে এক আলজেরিয়ান কথা বলে উঠলো। 

আমার মনে ‘আজ পাশা খেলবো..’ বেজে উঠলো। সেই আলজেরিয়ান আমাকে হোটেলে পৌঁছে দিতে চায়। ভয়ে আমার তখন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। ব্যাটা নিশ্চয়ই ঠগ। তবুও তার সাথে পাতাল রেল ধরে চললাম। ব্যাটা টিকেটও কেটে দিলো। টাকা নিলো না। বিষয় কি! সাধু সাবধান! রাস্তায় চলতে চলতে কার সাথে যেন মোবাইলে কথা বললো। নিশ্চিত ব্যাটার সাগরেদ। কি বললো? ওই একটা মুরগী পাইছি। জিনিস লইয়া রেডি হ!

এই যে বামে! আমি বামে তাকাই। বামে আমার গোলাপি হোটেল। আমি লজ্জায় মরো মরো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- ‘মানুষকে অবিশ্বাস করা পাপ’। আসলেই এটা জঘন্যতম পাপ। বেচারা আলজেরিয়ান বলে আমি তাকে কতোই না খারাপ ভাবলাম। এমনকি অনেকেই তাই ভাবে। অথচ কেউ আমাকে প্যারিসের চায়নিজদের থেকে সাবধান করেনি। প্যারিসে চায়নিজ খাওয়া আর নিজের পকেট কেটে কুমির আনা একই। এরা খাবারের দাম লিখে রাখে কম। কিন্তু বিল করে বেশি। কারণ ওরা কোন কিছুই প্লেট বা পিস হিসাবে বিক্রি করে না। ফ্রাইড রাইস বিক্রি করে সের দরে।

প্যারিস এখনো কল্পনার নগরী। শহরের মোড়ে মোড়ে শিল্পবোধ নিয়ে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা। প্যারিসে যাবেন। অবশ্যই যাবেন। কিন্তু আমার মতো মোনালিসা কিংবা লুভর মিউজিয়াম কিংবা আইফেল টাওয়ার দেখার জন্য নয়। ফরাসি শিল্পবোধের সুঘ্রাণ নেবার জন্য। কি কঠিন লাগলো? সহজ করে দিচ্ছি। প্যারিসে যাবেন এবং বুঝবেন কেন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার জিনিস নয়। কেন শিল্পের মূল্য জীবনের মতোই মহান।

ও হ্যাঁ! প্যারিসে বোরখা পরা নিষেধ। ফ্রান্সে ধর্মশুমারী নিষিদ্ধ। তাই কোন ধর্মের মানুষের সংখ্যা কতো, হিসাব করে ঠিকঠাক বলা প্রায় অসম্ভব। ধারণা করা হয় ফ্রান্সে মুসলমানের সংখ্যা ৫০ লাখ। আর ২০০৯ সালের হিসাব মতে বোরখা পরতে না দেয়াতে আনুমানিক এক হাজার ৯০০ নারী রাগ করেছেন। ফ্রান্সের মতো এমন শিল্পরুচির দেশে বোরখা একটা বাড়াবাড়িই বটে। হতে পারে প্রেসিডেন্ট তার আপন স্ত্রীর চেয়ে ২৫ বছরের ছোট। কোন রকম কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়া এমনটা ফ্রান্সেই স্বাগতম জানানো হয়।

তবে এসব নিয়ে আমাদের অনলাইনসর্বস্ব মাথাটি ঘামানো কি খুবই প্রয়োজন? হাওরের মানুষেরা কেমন আছে সবাই? কেমন আছে খুন হয়ে যাওয়া রমেল চাকমার পরিবার, রমেল চাকমা খুনের বিচার কি হবে? এসব নিয়েও চলেন একটু হাত-পা-মাথা ঘামাই।

আমার আপনার অবস্থা নিশ্চয়ই বন্ধু অনিক খানের এই ছড়ার মতো নয়-

তাও মরে বেঁচে যায়

রোমেল আর লাকিরা

হাওরের প্রাণিকুল

হাঁস, মাছ, পাখিরা...

আর বেঁচে মরে থাকি

আমরা এ বাকিরা!

লেখক: গবেষণা আর লেখালেখির চেষ্টা করেন। 

লেখকের ই-মেইল: kurchiphool@gmail.com

ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক নিজে, নাম ভুলে যাওয়া এক ফরাসি পথচারিনী ও ইন্টারনেটের ডাউনলোড।

রিনভী তুষারের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!