বিদেশ ভালো: জর্মনে বাঙালি পোলা আগুনের গোলা

: জর্মনে গিয়ে বাঙালি কি হইবে? : আগুনের গোলা হইবে। : কি করিলে হইবে? : এই যে এই করিলে…

রিনভী তুষার, জার্মানির বার্লিন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2016, 12:16 PM
Updated : 18 Oct 2016, 04:44 PM

সৈয়দ মুজতবা আলী জর্মনদেশে গিয়ে একবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ছিলেন। অপরাধ, মানুষের বাড়িতে ঢিল মারা।

পুলিশ জানতে চাইলে বলছিলেন- 'শুধু পড়ালেখা করতে তো আর এখানে আসি নাই।'

কথা সত্য। শুধু পড়তে কি কেউ জর্মন দেশে আসে? সে তো নিজের দেশেও পড়া যায়।

আমিও আসি নাই । তো পড়ার বাইরে কি করা যায়? এরকম একটা প্রশ্ন বগলদাবা করেই আমি ঘুরি।

আমি তো চিপকে যাওয়া দেশের মানুষ, যেই দেশে ২০ জন মানুষ মিলে দুজন মানুষের মাটি কোপানো দেখে। আমিও দেখি। এব্বড় ট্রেইন। এব্বড় মাটির নিচে স্টেশন। এব্বড় ..না মানে এত্ত এত্ত ধবধবে সাদা মানুষ বাপের জনমে তো আর এক সাথে দেখি নাই। তো আমি শুধু দাড়াঁই। যাই দেখি...শুধু দেখতে থাকি। সহজে মুগ্ধ হয়ে যাই।

ধরেন মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউর ট্যাক্সি দেখা। ট্যাক্সিওয়ালাকে গাড়ির দাম জিজ্ঞেস করি। আর এত্ত সস্তা শুনেই অজ্ঞান হয়ে বেছে বেছে সুন্দরী ক্লাসমেটের কোলে পড়ে যাই। এসব আর কি।

ভাইলোগ অ্যান্ড বোন, দয়া করে চরিত্রে যাবেন না। আমার চরিত্র ভালো। কতো ভালো? জানতে হলে ই-মেইল করেন।

যাই হোক, তেমনই এক কেশ-কালো দুপুরে (জর্মন দেশের ওয়েদার প্রায়ই গোমড়া) মেনসা (মানে ক্যান্টিন) থেকে শেফের বাপ-বাপান্ত আর মা-মামান্ত করতে করতে হাঁটছি। দেখলাম দেয়ালে বড় বড় করে লেখা- ৬০০ ইউরো গেবেন... (মানে ৬০০ ইউরো দিবে)। আমি তো আর নড়তে পারি না। কি ৬০০ ইউরো প্রতি সেমিস্টারে দেবে?

খুশিতে আমার নেত্র কোণায় জল চলে আসলো। আমার ভেতর ঘুমন্ত বাঙালি জেগে উঠলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে আস্তে করে নোটিশ বোর্ড থেকে পুরো নোটিশটা ছিড়ে পকেটে চালান করে দিলাম। ৬০০ ইউরো আমার হবে। নো কম্পিটিশন।

ডর্মে গিয়ে কাগজ খুলে মনো-বিয়োগ করে পড়ে যা বুঝলাম তার বাঙলা করলে দাঁড়ায়: আমার কমিউনিটিতে ফ্রয়ভিলিগে ফয়ারভেয়ার (ভলান্টিয়ার ফায়ারম্যান) নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বেতন প্রতি মাসে ১৫০ ইউরো। এক সেমিস্টারে ৬০০।

আমি তো যাবোই সেথা। একে তো পয়সা তার উপর মাচো ম্যান, ফায়ারম্যান। কোনো না কোনোদিন  কোনো না কোনো জর্মন ব্লন্ড সুন্দরী আগুনে আটকে পড়ে বাঁচাও বাঁচাও.. আর আমি সেখানে বাঙালি ত্রাণকর্তা... আর তারপর সে বলবে আমার নতুন জীবন শুধুই তোমার। তার জীবন আমার হবে, সাথে হবে পাসপোর্ট। আমার হয়ে যাবে।

নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট করা ফায়ার স্টেশনে হাজির হলাম। যাবার পরপরই একটা রেজিস্ট্রেশন ফরম ধরিয়ে, সেটা পূরণ করিয়ে একটা বাস দেখিয়ে দিলো। আমি একটু কনফিউজড হয়ে গেলাম! নিয়ম কি তবে... ফায়ারম্যান যদি হতে চাও বাসে চড়ো আগে?

বাসে দরজা আছে, জানালা নাই। বেশ সুন্দরী স্বর্ণকেশি আমার হাত ধরে বাসে টেনে তুললো। আমি তো তখন ভাসছি।

বাহ্‌! শুরুটা দারুণ। সে একজন প্যারামেডিক। আমাকে সে পরীক্ষা করতে চায়। আমি একটু লজ্জা পেলাম। মানে এখানেই? হ্যাঁ, তারপর পরীক্ষা হলো। আমার শ্রবণ আর দৃষ্টি শক্তি। আমি পাস। ওকে খুশিতে একটু জড়িয়ে ধরে বলি আমি পাস করছি... আমি দেখতে পাচ্ছি... বলার ইচ্ছা করলো... কিন্তু  চেপে গেলাম।

কিন্তু এরপর যা হলো এক ভেতো বাঙালির ওপর... তা শুনলে আপনারও জর্মনদেশে এসে অন্তত একবেলা হরতাল করতে ইচ্ছা করবে। ওরা আমার শার্ট খুলে নিলো। রেজার দিয়ে আমার অমন সুন্দর লোমশ শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে খাবলে খাবলে লোম তুলে নিলো। কতোগুলো সেন্সর বসিয়ে দিয়ে একটা জিমের সাইকেল এগিয়ে দিলো। ১০ মিনিট সাইকেলিং করতে হবে... ব্যস...। তারপরেই আমার প্রতি চার মাসে ৬০০ ইউরো...।

আমি হাসি হাসি মুখ করে বললাম... কাইন প্রবলেম...(নো প্রবলেম)। ছিলো তো, ঢাকায় আমার সাইকেল ছিলো। কতো চালিয়েছি। কিন্তু একি! জর্মন সাইকেল দেখি চলে না। ওরা বললো চলে। আমি বললাম, একটু লুজ করো। বললো, না এভাবেই চালাতে হবে দশ মিনিট...। আমি পারবো ..বীর পুরুষ ভাব নিয়ে শুরু করলাম।

কিছুক্ষণ পর দেখি আমার হয়ে গেলো। মানে ঘামে গোসল হয়ে গেল। আমার মনে হচ্ছিলো আমার দুই পায়ের রানে দুই মণ বস্তা বাঁধা। আমি থেমে গেলাম। বললাম কতক্ষণ করলাম? বললো- টানা দুই মিনিটের মতো। তুমি আসতে পারো। তোমার ফিজিক্যাল ফিটনেস নাই।

কথাটা একটা পুরুষ ডাক্তার বললে গায়ে লাগতো না। কিন্তু অমন টমেটোর মতো দেখতে সুন্দরী ডাক্তারের মুখে... ঠিক নিতে পারলাম না। বলতে ইচ্ছা করছিলো, আমার বুকের পশমগুলো ফেরত চাই।

যাই হোক আমার স্বপ্ন পুরোপুরি ভেঙে গেলো না। তারা বললেন- তুমি থিওরি টা পাস করো। দুমাস পর তোমার ফিজিকাল টেস্ট করা হবে। আর তোমার জন্য জিম ফ্রি।

আমি আমার কেঁটে নেয়া বুকের পশমের নামে কসম খেলাম, দুমাস ধরে প্রতিদিন জিম করলাম। অবশেষে জর্মন শেফার্ডের মতো দুহাত লম্বা জিভ বের করে ফিটনেস পাস করলাম। তার মানে হলো আমি অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে নিয়ে আগুনের ভেতর ঢুকতে পারবো। আমি পুরোপুরি দমকল হলাম। পত্রিকায় ছবি ছাপা হলো। ওই  প্রদেশে বঙ্গমুলুক ওরিজিনের প্রথম দমকল কর্মী।

কিন্তু 'এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে'র মতোই এই টেস্টই ফাইনাল টেস্ট নহে। আরও টেস্ট আছে। আমাকে বলতেই আমি বললাম- আমার মনে হয় আমি ঠিক আছি। ৬০০ ইউরো পাচ্ছি... ইটস ওকে।

ওরা বললো এটা ঠিক না। তোমাকে 'আটমশুটজগেরাটেট্রেগা' ট্রেনিং করে ফায়ারম্যানের লাইসেন্স নিতে হবে। একবার পাস করলে তিন বছরের লাইসেন্স। এটা পাসর্পোট পেতে অনেক পয়েন্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট। আমি গলে গেলাম।

বিশ্বাস করেন। জর্মনরা এমন জর্মন। ওইটা শুধু নামেই ভলান্টিয়ার ফায়ারম্যান কিন্তু ট্রেনিং দিয়েছে প্রফেশনাল ফায়ারম্যানের।

কিভাবে পারমাণবিক র্দূঘটনায় কাজ করতে হয়? কিভাবে সড়ক দুর্ঘটনার সময়... কিভাবে গাছ কাটতে হয়... কিভাবে গাড়ির বডি, অয়েল স্পিল দুর্ঘটনার সময় কি করণীয়। সব... সব...!

জর্মনরা ফায়ারম্যানদের যে সম্মান দেখায়, পুলিশ কিংবা আর্মিদেরও ওই সম্মান দেয় না। লাল মাইক্রোবাসে করে ট্রেনিং-এ যাচ্ছি। রাস্তায় থাকা এক গাড়িওয়ালা ফায়ারম্যানদের সাইড দিতে দিতে রাস্তা থেকে পাশের ভুট্টা ক্ষেতে... পরে আবার তাকেসহ তার গাড়ি টেনে তুললাম আমরা।

 যাই হোক, সামারে ছিল আমার ফাইনাল প্রফেশনাল ট্রেনিং। ট্রেনিং একাডেমিটা ছিলো এক বনের পাশে। বাই দা ওয়ে, জর্মনরা কিন্তু বন  দেখলেই পাওয়ার প্লান্ট বসানোর জিকির করে না। ওই অ্যাকাডেমিতে সপ্তাহে দুইদিন ট্রেনিং। প্রতিদিন থিওরি। প্রতিদিন প্রাকটিকাল। ট্রেনিং চলবে তিন মাস।

আমি ট্রেনিংয়ে যাই। ফ্রিতে চা, বিস্কুট, কেক খাই। একদিন ইন্সট্রাকটর বললেন- মোটামুটি সব বিস্কিট আর কেক খেয়ে সাফ, কিন্তু কয়েনের প্লেটে একটা ইউরোও জমা হয় নাই। মানে? এরা তো দেখি বাটপার...! মানে ওইসব বিস্কিট, কেক ফ্রি ছিলো না। আমি সেদিন বুঝলাম, শুধু ঢাকার গুলিস্তানে না, বাটপার জার্মানেও আছে। পরদিন কয়েনের প্লেটে পাঁচ ইউরো রেখে আসলাম।

চলে আসি ট্রেনিং-এর অন্তিম দিনে। আমি থিওরীতে পাস করলাম। পরীক্ষা হলো জর্মন ভাষায়। যতোটা জার্মান জানি তা দিয়ে হয়ে গেলো। খুশি খুশি মনে প্রাকটিক্যাল দিতে গেলাম।

প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা পুরাই মেজাজ খারাপ করা টাইপ অমানবিক। আপনাকে প্রায় দশ কেজি ওজনের জ্যাকেট, বুট, দড়ি, আংটা শরীরে জড়িয়ে তার ওপর প্রায় ২০-২৫ কেজি ওজনের একটা সিলিন্ডার পিঠে আর মুখে ঘোড়ার লাগামের মতো মাস্ক পরতে হবে।

ভাবছেন বিষয়টা অমানবিক কেন? বলছি। অন্ধকারে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, ধোঁয়ায় ভরা ঘর। ঘরের ভেতর চারটার মতো রুম। প্রতিটার দরজা আপনাকে বিশেষ চাবি দিয়ে খুলতে হবে। সময় পাবেন তিন মিনিটের মতো। আর প্রথম থেকে শেষ দরজা পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তায় দুনিয়ার যতো লোহার গ্রিল দেয়া। আমার মতো ভেতো টিডিএইচ এসব চিপা-চাপা দিয়ে যাবে! কি অত্যাচার প্রভু এই বাঙালীর ভাতের শরীরে!

ও হ্যা,তার ওপর পায়ের ওপর দাঁড়ানো যাবে না। পুরো কাজটাই করতে হবে হাঁটুর উপর ভর করে। র্টচ জ্বালাতে পারবেন না। মানে কি এসবের? এ পর্যন্তও ঠিক ছিলো। কিন্তু দরজা দিয়ে বের হলেন আর পাস? এত্তো সোজা!

তারপর ঝাড়া পাঁচ মিনিট ট্রেড মিলে দৌঁড়াবেন। তারপর আরও পাঁচ মিনিট একটা অদ্ভুত সিঁড়ি বেয়ে উঠবেন। সিঁড়িটা এজন্য অদ্ভুত, আপনি যদি নিজের শরীর দিয়ে সিঁড়িতে ঠিকঠাক চাপ তৈরি করতে না পারেন তবে আপনি উপরে উঠতে পারবেন না।

এই গোটা কাজটা আপনাকে কয়বার করতে হবে বলুন তো? একবার? জ্বী না মশাই এবং লেডি মশাই, এহেন কর্মটি আপনাকে দুই দুইবার করতে হবে। আরো ছুটেন ৬০০ ইউরো গেবেনের পেছনে।

আমার তখন জ্বর আসে আসে। দুজনের টিম। আমার জার্মান টিমমেট আমরা দিকে তাকিয়ে হাসলো । আমি হাসি দিলাম ডায়রিয়া হওয়া টাইপ।

 আমাদের পালা আসলে ঢুকে পড়লাম সে জাহান্নামের ভেতর। কিন্তু এ কি হলো...! হঠাৎ করেই দেখি আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার ঠিকঠাক মনে আছে, অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রেশার চেক করা হয়েছে। একেবারে ফ্রেশ সিলিন্ডার। অক্সিজেন না পাওয়ার কোনো কারণই নাই। একি! আমি মরে যাচ্ছি? শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমি বলদের মতো রাবারমেইড মাস্ক ছেড়ার চেষ্টা করলাম। পারলাম না।

পুরোনো সব প্রেমিকাদের কথা মনে পড়লো। মাথায় অক্সিজেন কমে গিয়ে মরার সময় পুরোনো প্রেমিকারা দল বেঁধে ফিরে আসে সেদিন জানলাম। ফাইজলামো বাদ। আমি মরে যাচ্ছি। আর কবি ডাল্টন সৌভাত হীরা, তার নামের বদলে আমার নাম বসিয়ে  কবিতা লিখছে- তুষার মরে যাও।

এরপর হঠাৎ করেই ম্যারাডোনার হাতের মতো করে আমার ইনস্ট্রাক্টরের হাত এসে আমার অক্সিজেন সিলিন্ডিারের সাপ্লাই নব ঘুরিয়ে দিয়ে আমাকে টেনে তুললেন। ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দিলেন। সব শেষ করে আমি আটকে গেলাম সেই বেঈমান সিঁড়িতে গিয়ে। সেই সিঁড়ি আর নামে না । এতো টানি, এতো চাপি- একটুও নামে না। আমাকে টেকনিক দেখানো হলো। কোনোরকম বেঈমান সিঁড়ির ধাপ শেষ করে ধপাস করে বসে পড়লাম।

সবাই স্বাভাবিক। শুধু আমার আত্মারামের তখন সাম-যদু-মধু অবস্থা। পরে শুনলাম লোহার গ্রিলের এক কোণায় লেগে সিলিন্ডারের নব ঘুরে গিয়েছিলো, তাই অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

শেষমেষ আমি তাহাকে পাইলাম। তিন বছরের জন্য ফায়ারম্যান হলাম। আর বাংলায় কেন ফায়ারম্যান শব্দে দম লাগানো (দমকল কর্মী), তা হাড়ে-ঘাড়ে বুঝলাম। তবে বিশ্বাস করেন, ৬০০ কেনো, ছয় লাখ ইউরো দিলেও ওই ট্রেনিং-এ আমি আর নাই। অলাইকুমুস সালাম।

এখন পর্যন্ত প্রায় ৭-৮ টা ফায়ার ফাইটিং-এ গেছি। শুধুমাত্র দুইটা ঘটনায় আমরা হোস পাইপ ওপেন করেছিলাম। প্রথমবার প্রচণ্ড শীতের মধ্যে আগুন নেভাতে গিয়েছিলাম। ওই ঘটনায় আমাদের কাজটা ছিলো বেশ মজার। আগুন পাহারা দেয়া। যাতে আগুন না ছড়ায়।

এক কৃষকের খড়ের গোলায় আগুন লেগেছে। সে নিশ্চিন্তে ঘুম। কারণ তার গোলার ইন্সুরেন্স করা আছে। আমরাও ফটাফট ফটোসেশন সারলাম। ও হ্যাঁ,অনেক শীত ছিলো... তাই আগুন পাহারা এবং পোহানো দুইটাই করেছিলাম।

ফাজলামো বাদ দিয়ে এবার নিজের দিকে একটু তাকান। কখনো কি আপনার দেশ ভলান্টিয়ার ফায়ারম্যান হবার কোনো সুযোগ আপনাকে দিয়েছে? যদি দিতো তাহলে কি আমরা রানা প্লাজাতে আরো দু-একটা বেশি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারতাম না?

এখানে পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকে বাচ্চারা ফায়ারম্যানের ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। এটা চলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। সপ্তাহে একদিন ট্রেনিং। সবার কাছে পেজার। আগুন লাগলে পেজারে ম্যাসেজ আর সাইরেন। দে দৌঁড়। রাত-বিরাত যখনই হোক।

একবার ভোর পাঁচটায় তিন কমিউনিটির ভলান্টিয়ার ফায়ার সার্ভিস আর পুলিশসহ দৌঁড়ে গেলাম আগুন নেভাতে। গিয়ে দেখি একজন ডিউড্রেন্ট স্প্রে করতে করতে ফায়ার ডিটেকটরের স্মোক ডিটেকটরে স্প্রে করেছে। ব্যস, আর যায় কই। কিন্ত কারো কোনো রাগ বা অভিযোগ নাই। হাসিমুখে আগুন নেভানোর তোড়জোড়।

অবাক লাগে, জার্মানিতে বাড়ী-ঘর এমনভাবে ডিজাইন করা যে আগুন লাগলে পানি পাওয়া সেকেন্ডের বিষয়।  বাড়ীতে বাড়ীতে আগুন ছড়াবে না এমন কার্পেট। এমন দেশ যে দেশে দূর্যোগের বালাই নাই কিন্ত প্রস্তুতির মহাযজ্ঞ।

 এ প্রসঙ্গে আরেকটা ঘটনা বলি (ছবিও দিয়েছি)। একবার হলো কি, আমাদের প্রদেশের সব ফায়ারম্যানরা ধর্মঘট ডাকলো। কারণ,সরকার আমাদের বাজেট কমাবে। বিক্ষোভ দেখানোর দেশের মানুষ আমি। চলে গেলাম। গিয়ে দেখি ফায়ারম্যানদের এক বিশাল সমাবেশ।  সেখানে সবাই সাদা শুধু আমিই একমাত্র বাদামী। এটা মজার বিষয় না। মজার বিষয় হলো যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আমাদের সমাবেশ, কিছুক্ষণ পর সেও এসে আমাদের দলে যোগ দিলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ শুনলো। কোন লাঠি,টিয়ার গ্যাস,গুলি কিছুই হলো না।

আর আপনার দেশে... থাক নাই বা বললাম।

লেখক : গবেষণা এবং লেখালেখির চেষ্টা করেন।

Photo Credit: Rinve Tushar, Tobias Koch,Björn T. Wowros.