ভূখণ্ডটিতে ত্রাণ প্রবেশের অপ্রতুলতাকে ‘মানবসৃষ্ট’ বিপর্যয় বলে বর্ণনা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেফ বোরেল।
Published : 13 Mar 2024, 10:08 AM
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় অনাহারকে যুদ্ধের একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেফ বোরেল।
ভূখণ্ডটিতে ত্রাণ প্রবেশের অপ্রতুলতাকে ‘মানবসৃষ্ট’ বিপর্যয় বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিহত হয়েছে ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দারা প্রায় সবাই ইতোমধ্যে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ ও বাধার কারণে গাজায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে গাজার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে; অনাহারে, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় অনেকের মৃত্যু হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিয়ে সাইপ্রাস থেকে একটি স্পেনীয় জাহাজ রওনা হয়েছে; কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, স্থল পথে ত্রাণ সরবরাহের চাহিদা এ দিয়ে পূরণ হবে না।
গাজায় দ্রুততার সঙ্গে, সবচেয়ে কার্যকরভাবে ত্রাণ পাঠানো যায় সড়ক পথে; কিন্তু আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলের বাধার কারণে প্রয়োজনের তুলনায় খুব অল্প পরিমাণ ত্রাণ সেখানে প্রবেশ করতে পারছে।
এরমধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাফা শহরসহ গাজার দক্ষিণাংশে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন। গাজার অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা দক্ষিণাংশের শহর রাফায় আশ্রয় নিয়ে আছে।
ইসরায়েলের বাধার কারণে স্থলপথে গাজায় ত্রাণ পাঠাতে না পেরে বিমান থেকে খাদ্য ত্রাণ ফেলা ও সমুদ্র পথের মতো বিকল্প বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে ত্রাণ সরবরাহকারীরা। এর মধ্যে গাজায় বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ প্যাকেজের আঘাতে বেশি কিছু ফিলিস্তিনির মৃত্যুও হয়েছে।
ইসরায়েল দাবি করে বলেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় দু’টি ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ প্রবেশ অনুমোদন করছে তারা, তাই ভূখণ্ডটির খাদ্যের সংকটের জন্য তাদের দায়ী করা যাবে না।
কিন্তু মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ভাষণে বোরেল বলেছেন, গাজায় যে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে তার কারণ কার্যকর স্থল পথের অভাব।
“আমরা এখন একটি জনসংখ্যার মুখোমুখি হচ্ছি যারা তাদের নিজেদের বাঁচানোর জন্য লড়াই করছে.” বলেছেন তিনি।
“গাজায় মানবিক সহায়তা প্রয়োজন আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এটি বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব কাজ করে যাচ্ছে। (এই মানবিক সংকট) মানবসৃষ্ট আর যখন আমরা সহায়তা পাঠানোর জন্য সাগর, আকাশপথের মতো বিকল্প উপায় খুঁজি তখন আমাদের মনে হয় যে আমাদের এটি করতে হবে কারণ রাস্তার মাধ্যমে সহায়তা পাঠানোর প্রাকৃতিক উপায় কৃত্রিমভাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
“অনাহারকে যুদ্ধের একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যখন আমরা ইউক্রেইনে এটি হচ্ছে বলে নিন্দা করেছি তখন গাজায় যা হচ্ছে তার জন্যও আমাদের একই শব্দ ব্যবহার করতে হবে।”
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ, অন্তত ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ, দুর্ভিক্ষ থেকে আর এক পা দূরে আছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে ভূখণ্ডটির হাসপাতালগুলোতে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় ভুগে অনেকগুলো শিশুসহ অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:
হিজবুল্লাহর রকেটের জবাবে লেবাননের বেকা ভ্যালিতে ফের ইসরায়েলের বিমান হামলা
সাইপ্রাস থেকে গাজায় যাচ্ছে প্রথম ত্রাণবাহী জাহাজ
গাজায় চিকিৎসকরা ইসরায়েলের ‘অমানুষিক নির্যাতনের শিকার’
গাজার প্রায় ৬ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে এক পা দূরে: জাতিসংঘ
‘অনাহার’ কৌশলে গাজার খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ