তবে গাজায় ইসরালের সামরিক অভিযান বন্ধের যে আদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা চেয়েছিল, তাতে সায় দেয়নি জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালত।
Published : 26 Jan 2024, 05:47 PM
গাজার যুদ্ধে গণহত্যার মত অপরাধ ঠেকাতে এবং বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সহায়তা দিতে ইসরায়েলকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস-আইসিজে।
তবে ইসরালের সামরিক অভিযান বন্ধের যে আদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা চেয়েছিল, তাতে সায় দেয়নি জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালত।
১৭ বিচারকের এ আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বলেছে, গাজা অভিযানে ইসরায়েলের বাহিনী যাতে গণহত্যার মত কিছু না ঘটায়, দেশটিকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।
এই আদেশ বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এক মাসের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে জমা দিতে বলা হয়েছে ইসরায়েলকে।
এ মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে আইসিজেতে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। জরুরি ভিত্তিতে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের আদেশ চাওয়া হয় সেখানে, যে অভিযানে ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রকারী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে আকস্মিকভাবে ঢুকে হামলা চালিয়ে ১২০০ মানুষকে হত্যা এবং অন্তত ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। ওইদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনো চলছে।
আইসিজে বলেছে, ৭ অক্টোবর হামাস যাদের জিম্মি করেছিল, তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে আইসিজে উদ্বিগ্ন। তাদের অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হামাসসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের এ আদালত।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা গণহত্যার অভিযোগ খারিজ করে দেওয়ার যে আবেদন ইসরায়েল করেছিল, তাতে সায় দেয়নি আইসিজে।
এ আদালতের প্রধান বিচারক বলেছেন, জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী, যে কোনো রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আইসিজেতে আসতে পারে। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে এ আদালতে মামলা করার আইনি এখতিয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার রয়েছে।
জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ চালানোর যে অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকা এনেছে, তা আমলে নেওয়ার বিচারিক এখতিয়ারও ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের রয়েছে।
গণহত্যার মূল অভিযোগের বিষয়ে আইসিজের সিদ্ধান্ত পেতে আরো অনেক শুনানির প্রয়োজন হবে। তবে প্রাথমিক শুনানির ভিত্তিতে ছয় দফা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছে এ আদালত।
গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, এরকম কোনো ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সব রকম পদক্ষেপ ইসরায়েলকে নিতে হবে।
ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের সামরিক বাহিনী গণহত্যার মত কোনো ধরনের ঘটনায় জড়াচ্ছে না।
গাজায় গণহত্যার যে কোনো ধরনের উসকানি কেউ দিলে, প্রকাশ্যে কেউ এ বিষয়ে বক্তব্য দিলে, তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে ইসরায়েলকে।
গাজায় পুরোদমে ত্রাণ ও মানবিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দিতে হবে ইসরায়েলকে।
গণহত্যার আলামত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, এরকম সব ধরনের তথ্যপ্রমাণ সংরক্ষণের আদেশ দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলকে।
এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে এক মাসের মধ্যে ইসরায়েলকে প্রতিবেদন দিতে হবে।
আইসিজের যে ১৭ জন বিচারকের প্যানেল শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন স্থায়ী বিচারক। এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েলের একজন করে বিচারক রয়েছেন। আদালত যে আদেশ দিয়েছে, তা অনুমোদন পেয়েছে ১৬-১ ভোটে।
রয়টার্স লিখেছে, ইসরায়েলের অভিযান বন্ধের আদেশ না পেলেও আইসিজের নির্দেশনাকে নৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে দক্ষিণ আফ্রিকা। হামাস এবং ফিলিস্তিনিরাও আইসিজের আদেশকে স্বাগত জানিয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের হেগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস তার সিদ্ধান্ত জানানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের এক জমায়েতে দেশটির ডেপুটি প্রেসিডেন্ট পল মাশাতিলে এবং বিচার মন্ত্রী রোনাল্ড লামোলাকে নেচে নেচে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়। রয়টার্স লিখেছে, আইসিজে যে সিদ্ধান্ত দেয়, তা চূড়ান্ত; এর বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রকে রায় মানতে বাধ্য করার কোনো সুযোগও এ আদালতের নেই।
তারপরও আইসিজের রায় রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে এবং শূক্রবারের আদেশ ইসরায়েল এবং তাদের পশ্চিমা মিত্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘বিব্রতকর’।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, চূড়ান্ত বিষয় না পাওয়া পর্যন্ত তারা গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার করা এ মামলায় গাজায় রাষ্ট্রীয়ভাবে গণহত্যা চালানোর মূল যে অভিযোগ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এ পর্যায়ে আইসিজে দেয়নি।
তবে জাতিসংঘের এ আদালত বলেছে, জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী, সুরক্ষা পাওয়ার সব আইনি অধিকারই ফিলিস্তিনের মানুষের রয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর হাতে ইহুদি গণহত্যার পর ১৯৪৮ সালে জেনোসাইড কনভেশন কার্যকর করা হয়।
সেখানে বলা হয়েছে, যে কোনো ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা জাতীয়তার কোনো জনগোষ্ঠীকে আংশিক বা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা জেনোসাইড বা গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে।