Published : 16 Mar 2023, 08:16 PM
ইন্দোনেশিয়ায় গত বছর কানজুরুজান ফুটবল স্টেডিয়ামে খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও পদদলনে ১৩৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় হওয়া মামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।
আরেক পুলিশ কর্মকর্তাকে ১৮ মাসের কারদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। বৃহস্পতিবারের এ রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আদালতকক্ষে উপস্থিত নিহতের স্বজনরা।
ফুটবল খেলার ইতিহাসে এটি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় বৃহৎ প্রাণহানির ঘটনা।
আদালতের রায় এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন সুসিয়ানি নামে এক নারী। গত বছর অক্টোবরের ওই পদদলনে যিনি তার কিশোর ছেলেকে হারিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আদালতকক্ষে তিনি তার ১৬ বছর বয়সী ছেলের ছবি নিয়ে এসেছিলেন। রায় ঘোষণার সময় তাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল।
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অনেক মানুষ সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন, কীভাবে তারা এখন মুক্তি পেতে পারে?”
সেই রাতের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা মাঠে দর্শকসারির দিকে টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে পদদলনের সূত্রপাত করেছিল।
পুলিশের কমান্ডার বামবাং সিদিক আচমাদির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি তার ইউনিটকে দর্শকসারির দিকে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পূর্ব জাভার স্থানীয় আদালতের রায়ে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ‘ওই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি’।
পুলিশ কমিশনার ওয়াহিউ সেতিও প্রাণোতোও বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি আবু আচমাদ সিদকি আমসিয়া বলেন, ‘‘বিবাদীদের কার্যকলাপ এবং পদদলনে নিহত হওয়ার মধ্যে সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর যে অভিযোগ উঠেছে সেটাও প্রমাণ হয়নি। তাই বিবাদীদের দোষী নন ঘোষণা করাই ঠিক হবে।”
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ রায়ের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
গত জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ দরজার পিছনে এই মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। তখন থেকেই নিহতদের স্বজনরা বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা করে আসছিলেন।
একমাত্র যে পুলিশ কর্মকর্তা সাজা পেয়েছেন তার নাম হাসদারমাওয়ান। তাকে ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রসিকিউটর আদালতের কাছে এর দ্বিগুণ সাজা প্রার্থনা করেছিলেন।
প্রধান বিচারক আরো বলেন, তিনি ‘এমন একটি পরিস্থিতির ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যর্থ হয়েছেন, যা আসলে অনুমান করা বেশ সহজ ছিল’।
‘‘স্টেডিয়ামে দুই পক্ষের সমর্থকরা যখন সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন তখন তাদের থামাতে পুলিশের টিয়ার গ্যাসের শেল না ছোড়া একটি বিকল্প হতে পারতো।”
সেই রাতে মূলত আরেমা এফসির সঙ্গে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পেরসেবায়া সুরাবায়া দলের খেলা চলছি। খেলায় স্বাগতিক দল আরেমা এফসি ২-৩ গোলে হেরে গেলে তাদের সমর্থকরা দর্শকসারি ছেড়ে মাঠে চড়াও হন।তারপর দুইপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়ে যায়।
দাঙ্গাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ মাঠ এবং দর্শকসারি লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। তখন হুড়োহুড়ি করে সবাই স্টেডিয়ামের চাপা গেট দিয়ে বের হতে গেলে সেখানে পদদলনের ঘটনা ঘটে।
নিহত ১৩৫ জনের মধ্যে অন্তত ৬০জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিল। ওই ঘটনায় আরো ছয়শ জন আহত হন। এ ঘটনায় গত সপ্তাহে ওই দুই ফুটবল ক্লাবের কর্মকর্তাদের দোষীসাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে স্টেডিয়ামে সংঘর্ষ এবং পদদলনে প্রাণহানির সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৪ সাল পেরুর লিমায়। যেখানে ৩২৮ জন নিহত হয়েছিলেন।
১৩৩ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া স্টেডিয়াম ভেঙে ফেলবে ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল মাঠে দাঙ্গা: আরেমার দুই কর্মকর্তা আজীবন নিষিদ্ধ