গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলিদের মধ্যে চালানো জরিপগুলোতে এই যুদ্ধের প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন লক্ষ্য করা গেছে।
Published : 14 Dec 2023, 11:49 AM
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান, হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু ও ইসরায়েলি সেনাদের হতাহত হওয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের অধিকাংশ নাগরিক চায় তাদের সেনাবাহিনী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে গাজায় নির্মম আক্রমণ চালিয়ে যাক।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের আকাশ ও স্থল হামলায় অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিহত হয়েছে ১৮৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ৮০ শতাংশের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। পানি, খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র অভাবের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
গাজার উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরাম হামলার মধ্যে কোথাও কোনো নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা। আহতের সংখ্যা অর্ধ লক্ষ ছাড়িয়ে গেলেও তাদের চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে সচল আছে মাত্র ১১ টি। এই হাসপাতালগুলোও কেবল আংশিক সচল আছে। ধসে পড়েছে পুরো গাজার ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টে জো বাইডেন বলেছেন, গাজার বেসামরিকদের ওপর নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে ইসরায়েল বিশ্বজুড়ে সমর্থন হারাচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত।
এরমধ্যে মঙ্গলবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ৭ অক্টোবার গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। এদিন দুই কর্নেল, দুই মেজর ও এক ক্যাপ্টেনসহ ১০ সেনাকে হারিয়েছে দেশটি। এতে এ যুদ্ধে নিহত ইসরায়েলির সেনার সংখ্যা ১১৫ জনে দাঁড়িয়েছে, ৯ বছর আগে গাজায় ইসরায়েলিদের আরেকটি সামরিক আগ্রাসনের সময় নিহত সেনা সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ এটি।
কিন্তু এরপরও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলিদের মধ্যে চালানো জরিপগুলোতে এই যুদ্ধের প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন লক্ষ্য করা গেছে, জানিয়েছে রয়টার্স।
নভেম্বরের শেষ দিকে এক সপ্তাহের ‘লড়াই বিরতি’ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল ডেমোক্র্যাসি ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, দুই তৃতীয়াংশের বেশি ইসরায়েলির ভাষ্য ছিল ফিলিস্তিনি বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা হ্রাস করতে পারে বা আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে পারে, এমন কোনো সমন্বয় ছাড়াই আক্রমণ আবার শুরু করা উচিত।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে গাজায় হতাহতের যে সংখ্যা উঠে আসে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোতে তেমনটি দেখা যায় না, সেখানে সংখ্যাটি অনেক কম দেখানো হয়।
ডেমোক্র্যাসি ইনস্টিটিউটের রাজনীতি গবেষক তামার হারমান রয়টার্সকে জানান, ইসরায়েলিদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের হতাহতের সংখ্যাটি উঠানামা করে আর কিছু লোক মনে করে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য এসব মৃত্যু ‘একটি গ্রহণযোগ্য মূল্য’, তাতে বিশ্বের মনোভাব কী দাঁড়াল তাতে কিছু যায় আসে না।
অবসরে যাওয়া ইসরায়েলি আইটি কর্মকর্তা বেন জায়ন লেভিঞ্জার জেরুজালেমে বসে বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের তীব্রতা কমিয়ে দিলে শত্রুরা সেটি ‘ইসরায়েলের দুর্বলতা বলে ধরে নেবে’।
“আমরা যদি এ লড়াইকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে না যাই, তাহলে আগামীকাল সকালে আমাদের উত্তর, পূর্বে, দক্ষিণে এবং সম্ভবত ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। তাই আমাদের কোনো বিকল্প নেই।”
অক্টোবরের শেষ দিকে তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয় ৬০৯ জনের মধ্যে একটি জরিপ চালায়। এদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মনে করে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় অতিরিক্ত বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবর্ষণ করছে; বাকিরা সেটিকে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে মনে করে।
আরও পড়ুন:
গাজায় কর্নেলসহ এক দিনে ১০ ইসরায়েলি সেনা নিহত
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জাতিসংঘের
ইসরায়েল বিশ্বজুড়ে সমর্থন হারাচ্ছে: বাইডেন