মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন লক্ষ্যস্থলগুলোও হামলার শিকার হতে পারে সম্ভাবনায় যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে ও এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
Published : 06 Apr 2024, 10:35 AM
সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনসুলেটে হামলার জবাবে ইসরায়েলে আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া তেহরান যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সরে থাকতে’ বলেছে বলে জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রধান ‘ছায়া বাহিনী’ হিজবুল্লাহ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছে, তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ইরানের প্রেসিডেন্টের রাজনীতি বিষয়ক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ জামশিদি সামাজিক মাধ্যম এক্স এ লিখেছেন, ওয়াশিংটনের কাছে পাঠানো এক লিখিত বার্তায় ইরান “যুক্তরাষ্ট্রকে (বেনিয়ামিন) নেতানিয়াহুর ফাঁদে পা না দিতে সতর্ক করেছে।”
ইরান বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঘাত না পেতে একপাশে সরে দাঁড়ানো।”
জামশিদি বলেছেন, “এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে মার্কিন লক্ষ্যগুলোতে আঘাত না হানার জন্য বলেছে।”
ব্লুমবার্গ বলেছে, ইরানের পাঠানো কথিত এই বার্তা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র কোনো মন্তব্য করেনি।
এক প্রতিবেদনে সিএনএন অনামা এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরান ‘উল্লেখযোগ্য’ জবাব দিতে পারে আর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন লক্ষ্যস্থলগুলোও হামলার শিকার হতে পারে সম্ভাবনায় যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে ও এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এনবিসি দুই অনামা মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, “প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন যেটি গুরুত্ব দিচ্ছে তা হল কোনো হামলা হলে তা ইসরায়েলের ভেতরে নির্দিষ্টভাবে সামরিক অথবা গোয়েন্দা লক্ষ্যস্থলগুলোতে হতে হবে, বেসামরিক নয়।”
দামেস্কে ইসরায়েলের হামলার পর বাইডেন প্রশাসন বিরল এক পদক্ষেপ নিয়ে ইরানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তেহরানকে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র দামেস্কের কূটনৈতিক কম্পাউন্ডে ইসরায়েলি হামলার সঙ্গে ‘জড়িত ছিল না’ এবং এ হামলার বিষয়ে আগাম কোনো খবরও তাদের কাছে ছিল না।
ব্লুমবার্গ বলছে, এ থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের বাহিনী ও ঘাঁটিগুলোকে সম্ভাব্য হামলা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান বলেছে, চিরশত্রু ইসরায়েলকে ‘চপেটাঘাত’ করবে তারা। তবে কখন এটি ঘটবে তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। ইরান নিজেই সরাসরি ইসরায়েলে আক্রমণ করবে না লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো তাদের কোনো ছায়া বাহিনী দিয়ে হামলা চালাবে তাও পরিষ্কার হয়নি।
সোমবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের স্থানীয় সময় বিকাল প্রায় ৫টার দিকে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের কনস্যুলেট ভবন ধ্বংস হয়। এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও তার ডেপুটি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজরিয়াহিমিসহ বাহিনীটির আরও পাঁচ কর্মকর্তা নিহত হন বলে এক বিবৃতিতে আইআরজিসি জানিয়েছে।
ইসরায়েল অনেকদিন ধরেই নিয়মিতভাবে সিরিয়ায় ইরানের সামরিক স্থাপনা ও তাদের ছায়া বাহিনীগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে, কিন্তু এই প্রথম ইরানি কূটনৈতিক কম্পাউন্ডে হামলা চালায় তারা।
দামেস্কে ইরানি সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যার পর তেহরানের সম্ভাব্য পাল্টা হামলা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে ইসরায়েল। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী তাদের যুদ্ধ ইউনিটগুলোর সব ধরনের ছুটি বাতিল করেছে। আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোতে সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি করে সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধান বাণিজ্যিক নগরী তেল আবিবে থাকা রয়টার্সের সাংবাদিকরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে জিপিএস পরিষেবা বিঘ্ন ঘটছে; শত্রুর সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোনকে বিভ্রান্ত করতে সম্ভবত এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসারাল্লাহ বলেছেন, ইরান থেকে একটি জবাব আসছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তার দল ‘এ ধরনের সিদ্ধান্তে জড়াবে না’।
“আর তারপর, ইসরায়েল কী আচরণ করবে (তার ভিত্তিতে) এই অঞ্চল একটি নতুন পর্বে প্রবেশ করবে,” টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেছেন নাসারাল্লাহ।
আত্মগোপনে থাকা নাসারাল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তথাকথিত প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য হিজবুল্লাহ পুরোপুরি প্রস্তুত।”
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীগুলোর সঙ্গে প্রায় দৈনিকভিত্তিতে গোলাগুলি বিনিময় করছে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। তবে এসব সংঘর্ষে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী এ মিলিশিয়া বাহিনীটি তাদের ‘মূল অস্ত্র’ ব্যবহার করছে না বলে জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
ইরানের বিরুদ্ধে কাজ করছে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের হামলার সঙ্গে ‘তারা জড়িত নয়’, ইরানকে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র