মহান মে দিবস
শ্রমিক দিবসের আলোচনায় এই গৃহকর্মীরা থাকে না। কেননা, তাদের নেই শ্রমিকের মর্যাদাও।
Published : 01 May 2024, 12:46 PM
বাড়িতে কাজে সহায়তা করার জন্য অনেকেই গৃহকর্মী নিয়োগ করে থাকেন। মেয়ে শিশুদেরকেই গৃহকর্মী হিসেবে বেশি দেখা যায়।
কিছুদিন আগে একটি বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আমি সেখানে গৃহকর্মী দুই শিশুর দেখা পাই। তাদের কারও বয়সই ১২ বছরের বেশি হবে বলে মনে হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওরা সেখানে সারাদিন কাজ করত। তার মানে এই শিশুরা পড়াশোনা এবং খেলাধুলা করার সুযোগ পায় না।
তারা যে শুধু পড়াশোনা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্যাপারটা এমন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই শিশু গৃহকর্মীরা যে বাড়িতে কাজ করে সেখানে তাদের বয়সী শিশুও থাকে।
সেই শিশুরা স্কুলে যায়, খেলাধুলা করে, দামি পোশাক পরে। কিন্তু এই গৃহকর্মী শিশুরা এই সুযোগগুলো পায় না। তার সমবয়সী একটি শিশু যখন স্কুলে যায় তখন সে ব্যস্ত থাকে ঘরের কাজে। এতে ছোটবেলা থেকেই তারা নিজেদের ছোট বলে ভাবতে শুরু করে।
অনেক সময় বাসা-বাড়িতে কাজ করা নারী ও শিশুরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকারও হয়।
২০২৩ সালে প্রকাশিত বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহকর্মীদের ৬৭ শতাংশ মানসিক নির্যাতন, ৬১ শতাংশ মৌখিক এবং ২১ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ঘটে মৃত্যুর ঘটনাও।
এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রীতি উরাং নামের ১৫ বছর বয়সী এক গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা আলোচনার জন্ম দেয়। প্রীতির মৃত্যুর ছয় মাস আগে একই বাসা থেকে পালাতে গিয়ে আহত হয় ফেরদৌসী নামের ৯ বছরের এক শিশু।
মামলা করা হলেও অভিযুক্ত আশফাকুল হক ফেরদৌসীর চিকিৎসা আর দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েই সেই মামলা থেকে অব্যহতি পান। অথচ ফেরদৌসী এখনো ঠিকমতো হাঁটাচলা বা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় দিন কাটে তার পরিবারের। ফেরদৌসীর যে ক্ষতিটা হয়ে গেল তার মূল্য কি শুধুই দুই লক্ষ টাকা?
২০১৫ সালে গৃহকর্মীদের স্বার্থরক্ষায় একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়। গর্বের সঙ্গে বলা যায়, এটিই দক্ষিণ এশিয়ায় গৃহকর্মীদের স্বার্থে তৈরি করা প্রথম নীতিমালা। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো প্রায় এক দশকেও বাস্তবায়িত হয়নি সেটি।
কাজীর গরুর মতো এই নীতিমালা শুধু কিতাবেই আছে, গোয়ালে নেই। শ্রমিক দিবসের আলোচনায়ও এই গৃহকর্মীরা থাকে না। কেননা, তাদের নেই শ্রমিকের মর্যাদাও। ২০২৩ সালে শ্রম আইন সংশোধন করা হলেও তাতে গৃহশ্রমিকদের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
শ্রমিকের মর্যাদা না থাকায় তারা কোনো সুযোগ সুবিধাই পায় না। পায় না মাতৃত্বকালীন ছুটিও। অন্যান্য শ্রমের ক্ষেত্রে কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা থাকলেও গৃহকর্মে সহায়তাকারীদের তা নেই। যেহেতু তা শ্রম আইনে নেই, তাই কোনো অভিযোগও খাটে না গৃহকর্মীদের। গৃহকর্মী শিশুরা পায় না শিক্ষার অধিকার কিংবা খেলাধুলার অবসর।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।