তাদের এ ঘোষণা গাজা যুদ্ধবিরতিকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দিয়েছে আর সংঘাত ফের শুরু হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
Published : 11 Feb 2025, 12:00 PM
ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতির সমঝোতা লঙ্ঘন করছে, এমন অভিযোগ তুলে পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া বন্ধ রাখবে বলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে।
সোমবার দেওয়া তাদের এ ঘোষণা গাজা যুদ্ধবিরতিকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দিয়েছে আর সংঘাত ফের শুরু হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
রয়টার্স জানায়, গত তিন সপ্তাহ ধরে যেমনটি ঘটেছে তেমনিভাবে শনিবার হামাসের আরও ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল আর এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার ও আটক কেন্দ্রগুলোতে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।
হামাস বলেছে, মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির বাধ্যবাধকতা মেনে চলার জন্য যেন চাপ সৃষ্টি করতে পারে তার জন্য শনিবারের পাঁচ দিন আগেই ঘোষণাটি দিয়েছে তারা।
তাদের দাবি, বন্দি বিনিময় যেন ‘যথা সময়েই ঘটে’ তার জন্য ‘দরজা খোলা রেখেছে’ তারা।
হামাসের এ অপ্রত্যাশিত ঘোষণার পর সোমবার রাতে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার ও তাদের সমর্থকরা তেল আবিবের ‘জিম্মি চত্বর’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা এলাকাটিতে জড়ো হয়। তাদের সরকার যেন যুদ্ধবিরতি চুক্তি পরিত্যাগ না করে সেজন্য চাপ সৃষ্টি করতে সমাবেশ করে তারা। অনির্ধারিত এ সমাবেশে প্রায় ২০০০ মানুষ যোগ দেয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, হামাসের সিদ্ধান্ত যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন। গাজায় থাকা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে দেশ রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
মিশরের দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা সোমবার রয়টার্সকে জানান, যুদ্ধবিরতি সমঝোতা ভেঙে পড়তে পারে এমন শঙ্কায় আছেন মধ্যস্থতাকারীরা। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কাতার ও মিশর এ সমঝোতায় মধ্যস্থতা করেছে।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ৪২ দিনের পর্বে হামাসের মোট ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। তারা এ পর্যন্ত ১৬ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে যারা ইসরায়েলের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। এদের পাশাপাশি পাঁচ থাই জিম্মিকেও মুক্তি দিয়েছে হামাস।
এদের বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। মুক্তি পাওয়া এসব ফিলিস্তিনির মধ্যে প্রাণঘাতী হামলার জন্য আজীবন কারাদণ্ড পাওয়া বন্দির পাশাপাশি যুদ্ধ চলাকালে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক হওয়া বন্দিরাও আছেন।
হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের মধ্যে আছে ফিলিস্তিনিদের গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরতে দিতে দেরি করা, ফিলিস্তিনিদের দিকে গুলি ও গোলাবর্ষণ করা আর যুদ্ধবিরতির অধীনে ছিটমহলটিতে মানবিক ত্রাণ প্রবেশের কথা থাকলেও তাতে বাধা দেওয়া।
এর বিপরীতে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ইসরায়েল বলেছে, জিম্মিদের যেভাবে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল হামাস তা মানছে না, জিম্মিদের রেডক্রসের হাতে তুলে দেওয়ার আগে জনতার সামনে অপমানজনকভাবে প্রদর্শন করছে তারা।
ত্রাণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় মানবিক ত্রাণের প্রবাহ বাড়ছে। তারা ত্রাণের প্রবাহে বাধা দিচ্ছে, হামাসের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার বিষয়ে জ্ঞাত এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, যুদ্ধবিরতি সমঝোতা অনুযায়ী গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের আশ্রয়ের উদ্দেশে সেখানে অস্থায়ী হাউজিং ইউনিট নিয়ে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘ, কাতার ও অন্যদের জানানো অনুরোধ ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাসের কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েল ৬০ হাজার মোবাইল বাড়ি, দুই লাখ তাঁবু, জ্বালানি ও আবর্জনা সরানোর জন্য আনা ভারী মেশিনপত্রের প্রবেশ আটকে রেখেছে।