Published : 19 Sep 2024, 10:20 AM
লেবাননে তারবিহীন যোগাযোগ ডিভাইস বিস্ফোরণের দ্বিতীয় টেউয়ে অন্তত ২০ জন নিহত ও ৪৫০ জন আহত হয়েছেন, জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
লেবাননের রাজনৈতিক ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর শক্তিকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত রাজধানী বৈরুত, বেকা উপত্যকা ও দক্ষিণ লেবাননজুড়ে তাদের সদস্যদের ব্যবহার করা ওয়াকিটকিগুলোতে বুধবার এসব বিস্ফোরণ ঘটে।
মাত্র একদিন আগে মঙ্গলবার লেবাননজুড়ে গোষ্ঠীটির যোদ্ধাদের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত পেজারে বিস্ফোরণে দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত এবং আরও প্রায় তিন হাজার মানুষ আহত হন। নিহত এই ১২ জনের মধ্যে কয়েকজনের জানাজার সময়ও কিছু বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব বিস্ফোরণের জন্য হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে দায়ী করেছে, কিন্তু ইসরায়েল প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এই ডিভাইস হামলা দু’টি এমন এক সময় ঘটেছে যখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট ‘যুদ্ধ একটা নতুন পর্বে প্রবেশ করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশনকে গাজা থেকে সরিয়ে এনে দেশটির উত্তরাঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘নাটকীয় বৃদ্ধির গুরুতর ঝুঁকির’ বিষয়ে সতর্ক করে সব পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলনের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “স্পষ্টতই এই সব ডিভাইসগুলো বিস্ফোরিত করার যুক্তি হচ্ছে, একটি বড় ধরনের সামরিক অভিযানের আগে এটিকে আগাম হামলা বলে ধরে নেওয়া।”
গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১১ মাস ধরে উত্তরে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর আন্তঃসীমান্ত সংঘাত চলছে, এখন সেটি পূর্ণ যুদ্ধের রূপ নিয়ে পারে বলে ইতোমধ্যে শঙ্কা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে, জানিয়েছে বিবিসি।
লেবাননে বুধবারের বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহর হামলা কারণে দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রায় ৬০ হাজার ইসরায়েলিকে ‘তাদের বাড়িঘরে নিরাপদে’ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানান।
এর আগে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট বলেন, “ইসরায়েল যুদ্ধের একটি নতুন পর্ব খুলছে আর যুদ্ধোপকরণ ও বাহিনীগুলো সরিয়ে আনার মাধ্যমে যুদ্ধের ভরকেন্দ্র উত্তর দিকে সরে আসছে।”
গাজায় যুদ্ধরত সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশনকে সরিয়ে এনে উত্তরাঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে বলে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা হামাসের সমর্থনে কাজ করছে আর গাজা যুদ্ধ শেষ হলেই কেবল তারা সীমান্ত হামলা বন্ধ করবে।
বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহর প্রভাবশালী নেতা হাসান নসরাল্লাহর ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। গোষ্ঠীটি পরবর্তীতে কী করার পরিকল্পনা করছে এই ভাষণ থেকে তার ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুধবার হিজবুল্লার গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, ডিভাইস বিস্ফোরণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে তাদের ১৩ জন যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে, এদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর রয়েছেন।
তারা আরও জানায়, হিজবুল্লাহ সীমান্তের কাছে থাকা ও ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি গোলন্দাজ বাহিনীর ওপর রকেট হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বুধবার লেবানন থেকে প্রায় ৩০টি রকেট সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে প্রবেশ করে, কিন্তু সেগুলোতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি শুধু এক জায়গায় আগুন লেগে গিয়েছিল।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
বুধবারের প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ হিজবুল্লাহর জন্য আরেকটি লাঞ্ছনার ঘটনা আর এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তাদের পুরো যোগাযোগ নেটওয়ার্কে সম্ভবত ইসরায়েলি অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আরও পড়ুন:
লেবাননজুড়ে ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ১৪, আহত ৪৫০
হিজবুল্লাহর বিস্ফোরিত ওয়াকিটকিগুলো 'জাপানের তৈরি'
হিজবুল্লাহর '৫০০০ পেজারে বিস্ফোরক বসিয়েছিল' ইসরায়েল
লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাসহ নিহত ৯, আহত ২৭৫০
লেবাননে বিস্ফোরিত পেজার 'তৈরি করেছে বুদপেস্টভিত্তিক বিএসি'