Published : 28 Apr 2025, 12:33 PM
কাশ্মীরের বিদ্যমান সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে টানা চতুর্থ রাতে গোলাগুলি বিনিময় হয়েছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর থেকে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভারত সোমবার জানিয়েছে, ওই সীমান্তে পাকিস্তানি সেনারা ‘বিনা উস্কানিতে’ গুলিবর্ষণ করার পর তারা পাল্টা জবাব দিয়েছে।
কাশ্মীরে ২২ এপ্রিলের ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এই হামলার তিন সন্দেহভাজনের মধ্যে দুই জনকে পাকিস্তানি হিসেবে শনাক্ত করেছে ভারত। তবে এ ঘটনায় তাদের কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করে পাকিস্তান একটি নিরপক্ষে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
কাশ্মীরের এই হামলা ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও শোকের কারণ হয়েছে। অনেকেই এ ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তান কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদে তহবিল যোগাচ্ছে ও উৎসাহিত করছে বলে অভিযোগ ভারতের। উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে আসছে এবং এ নিয়ে অন্তত তিনবার তারা যুদ্ধে জড়িয়েছে।
কাশ্মীরের হামলার জেরে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে, অপরদিকে ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রোববার মধ্যরাতের দিকে কাশ্মীরের ভারতীয় ও পাকিস্তানি এলাকাকে পৃথক করা বিদ্যমান ৭৪০ কিলোমিটার সীমান্তের অপর পাশের পাকিস্তানি সেনা চৌকিগুলো থেকে ‘বিনা উস্কানিকে’ হালকা অস্ত্রের গুলিবর্ষণ করা হলে তারা জবাব দেয়।
কিন্তু ভারতীয় বাহিনী আর বিস্তারিত কিছু জানায়নি এবং গোলাগুলিতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে খবর হয়নি, লিখেছে রয়টার্স।
এ ঘটনার বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সাড়া দেয়নি।
কাশ্মীর হামলার পর থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি সামরিক অনুশীলন শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ অনুশীলন বলে ভারতের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সোমবার স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামলার পর থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রায় এক হাজার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৫০০ জনকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। পাশাপাশি হামলাকারীদের ধরতে কাশ্মীরের বনগুলোতেও অভিযান চালাচ্ছে তারা।
তল্লাশি চলাকালে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে শনাক্ত নয়জনের বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের এসব পদক্ষেপে নিরীহ লোকজন যেন ক্ষতির শিকার না হন তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতারা।
কাশ্মীর রেজিট্যান্স, যারা দ্য রেজিট্যান্স ফ্রন্ট নামেও পরিচিত, সামাজিক মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে জানিয়েছে যে তারা গত সপ্তাহের কাশ্মীর হামলার সঙ্গে জড়িত নয় বলে ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে’ দাবি করছে। এর আগে সামাজি মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তারা এ হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
কাশ্মীর রেজিট্যান্স বলেছে, হামলার দায় স্বীকার করে তাদের নামে দেওয়া ওই বিবৃতিটি ‘সাইবার অনুপ্রবেশের’ মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে।
দিল্লিভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাংক এই গোষ্ঠীটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার দলছুট একটি অংশ বলে মনে করে।