Published : 28 Apr 2025, 04:11 PM
মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস স্মার্টফোন। কথা বলতে, টেক্সট পড়তে, ইন্টারটে ব্রাউজ করতে, খেলতে ও আরও অনেক কিছুর জন্যই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন অনেকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, স্মার্টফোনের এমন ব্যবহারে মানুষের মনোযোগ ও দেহের ওপর কি আদৌ প্রভাব পড়ে? পড়লে তার ধরন কেমন? বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের মনোযোগ ও দেহের অনুভূতির ধরনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে স্মার্টফোন।
আগের বিভিন্ন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছিল, স্মার্টফোনে খুব বেশি সময় ব্যয় করার কারণে মানুষের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতায় সমস্যা হতে পারে। তবে তারা পুরোপুরি বুঝতে পারেননি কেন এমনটি ঘটে বা যখন এটি ঘটে তখন মস্তিষ্ক ও শরীরে কী ঘটে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ বিষয়টির ওপর নজর দিয়েছেন জাপানের ‘হোক্কাইদো ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের একটি দল।
স্মার্টফোনের ব্যবহার কীভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে ও শারীর কীভাবে সাড়া দেয় তা খতিয়ে দেখতে চেয়েছে গবেষণা দলটি, বিশেষ করে মানুষ তাদের শরীরের ভেতরে কী ঘটছে সে সম্পর্কে কতটা সচেতন তার প্রেক্ষিতে।
এ সচেতনতাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন ‘ইন্টারোসেপশন’, যার মানে আপনার হৃদস্পন্দন, শ্বাস প্রশ্বাস বা পেট থেকে আসা আওয়াজের মতো বিভিন্ন বিষয় লক্ষ্য করা। কিছু মানুষ এসব সংকেতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেও অন্যরা তা করেন না।
গবেষণায় স্মার্টফোন সম্পর্কিত জিনিস যেমন বেজে ওঠা ফোন বা টেক্সট মেসেজ দেখলে মানুষ শারীরিকভাবে কীভাবে সাড়া দেয় বা তাদের হৃদস্পন্দনের কেমন পরিবর্তন ঘটে তাও দেখেছেন গবেষকরা।
ইউসুকে হারুকির নেতৃত্বে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে মনোযোগ ও শারীরিক সচেতনতায় কীভাবে যোগসূত্র থাকতে পারে এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার জুয়া বা মাদক আসক্তির মতো কি না, সে বিষয়গুলোও তুলনা করে দেখেছেন তারা। কারণ এসব অভ্যাস কারও মনোযোগ ও আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফোনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া মানুষের শরীর ও মনকে একইভাবে প্রভাবিত করতে পারে কি না তাও খতিয়ে দেখেছে গবেষণা দলটি।
গবেষণার জন্য সুস্থ ৫৮ তরুণকে বাছাই করেছেন গবেষকরা। অংশগ্রহণকারীদের একটি সহজ কাজ করতে হয়েছে। যেমন– একটি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকানো ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টার্গেটেড বিভিন্ন অক্ষর খুঁজে বের করার মতো বিষয়।
এসব কাজ করার সময় তাদের দুই ধরনের ছবি দেখিয়েছেন গবেষকরা। কিছু ছিল স্মার্টফোন সম্পর্কিত, যেমন ফোন বেজে উঠছে। অন্যগুলো ছিল কেবল এলোমেলো ছবি, যাতে চেনা যায় এমন কিছু ছিল না।
কয়েকটি অক্ষর দেখানোর ওপর নির্ভর করে কাজটি সহজ বা কঠিন করেন গবেষকরা। এর ফলে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, কাজটি সহজ থাকাকালীন মানুষ কতটা মনোযোগী থাকতে পারে ও কাজটি আরও চ্যালেঞ্জিং হলে তা কেমন প্রভাব ফেলে।
তারা বলছেন, স্মার্টফোনের বিভিন্ন ছবিতে মানুষ ভিন্নভাবে সাড়া দেয়। কাজটি যতই কঠিন হোক না কেন কিছু অংশগ্রহণকারী সহজেই এসবের মাধ্যমে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। অন্যরা কেবল তখনই মনোযোগ হারিয়েছেন যখন কাজটি সহজ ছিল। এ বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন গবেষকরা।
ফোনের ছবি সবসময় যাদের মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে তাদের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে। যেমন– শারীরিক সংকেত সম্পর্কে তারা কম সচেতন ও স্মার্টফোনের ছবি দেখলে তাদের শারীরিকভাবে সাড়া দেওয়ার বিষয়টিও ছিল তীব্র। যেমন তাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
এর মানে হচ্ছে, এসব ছবির সঙ্গে তারা যে কাজটি করছিলেন তার কোনও সম্পর্ক না থাকলেও তাদের শরীর ফোন সম্পর্কিত সংকেতের প্রতি বেশি সাড়া দিয়েছে।
অন্যদিকে, প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারীর মনোযোগ তাদের কাজ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট কার্যকর ছিল ফোনের স্ক্রিন বা ইনকামিং কল দেখার মতো বিষয়। এক্ষেত্রে কাজটি সহজ বা কঠিন কি না তা বিবেচ্য না হলেও তারা বিভ্রান্ত হয়েছেন। আর এই অন্যমনস্কতা কেবল তাদের মনের ওপরই নয় বরং শরীরের ওপরও প্রভাব ফেলেছে।
গবেষকরা বলছেন, মানুষের মনোযোগ ও তারা নিজেদের শরীরের সঙ্গে কতটা সংযোগ বোধ করেন এ দুটো বিষয়ের ওপরই প্রভাব ফেলতে পারে স্মার্টফোন। যারা ফোনের কারণে মনোযোগ বেশি হারান তারা তাদের হৃদস্পন্দন বা দেহের অন্যান্য সংকেত অন্যের মতো স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করেন না।
এ বিষয়টি যারা আসক্তির সঙ্গে লড়াই করেন এমন মানুষদের মধ্যে দেখতে পাওয়া লক্ষণের মতোই, যেখানে মানুষের মনোযোগ নির্দিষ্ট কিছু সংকেতের ওপর স্থির হয়ে যায় এবং শরীর তখন তীব্রভাবে সাড়া দেয়।
গবেষকরা বলছেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের গভীর প্রভাব আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে তাদের এ গবেষণা। স্বাস্থ্যকর বিভিন্ন অভ্যাসের নানা উপায় তৈরিতেও সহায়তা করতে পারে এটি, বিশেষ করে তরুণদের জন্য যারা প্রতিদিন স্মার্টফোন ব্যবহার করে বড় হচ্ছেন।