তিনটি ট্রেন জড়িয়ে পড়েছিল এই দুর্ঘটনায়, যাতে আড়াইশর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
Published : 03 Jun 2023, 12:15 PM
ভারতের উড়িষ্যায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ৮৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
রাজ্যটির বালেশ্বর জেলার এ ঘটনা চলতি শতাব্দীতে হওয়া ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। এ ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে শনিবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুপুর ৩টার দিকে হাওড়ার নিকটবর্তী শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। এটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উড়িষ্যার বালেশ্বরে পৌঁছায়, আধ ঘণ্টা পর বাহানগা বাজারের কাছে ২৩ কামরার ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে।
দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, তার ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, বিবিসিসহ ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো।
রয়টার্স জানিয়েছে, বেঙ্গালুরু থেকে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়াগামী হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ ঘটে। কোন ট্রেনটি প্রথম লাইনচ্যুত হয়ে অন্যটিকে ঘটনায় টেনে নিয়ে আসে, তা নিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরস্পরবিরোধী বিবরণ দিয়েছে। ভারতের রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এ দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করেছে।
উড়িষ্যার চিফ সেক্রেটারি প্রদীপ জেনা ও কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এ দুর্ঘটনায় একটি মালবাহী ট্রেনও জড়িত বলে জানিয়েছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
বিবিসি বলছে, একটি যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর পাশের লাইন ধরে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি ট্রেন এর লাইনে পড়ে থাকা বগিগুলোকে সজোরে ধাক্কা দেয়। লাইনচ্যুত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বেশ কয়েকটি বগি পাশের ওই লাইনে পড়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এসে সেগুলোকে আঘাত করে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনও এ দুর্ঘটনায় জড়িয়ে আছে; কিন্তু তারা বিস্তারিত আর কিছু জানাননি।
বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) জানিয়েছে, হাওড়া যাওয়ার পথে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে গিয়ে পড়ে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, “হওড়া থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস এসে ওই লাইনের ওপর পড়ে থাকা বগিগুলোকে আঘাত করে, এতে এর বগিগুলোও লাইনচ্যুত হয়।”
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগিগুলো ছিটকে গিয়ে সেখানে আরেকটি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনের ওয়াগনগুলোকে আঘাত করে বলে জানান তিনি।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে শুধু বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম প্রাণঘাতী এ দুর্ঘটনায় হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও একটি মালবাহী ট্রেন জড়িত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলেছে, চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১০-১২টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে গিয়ে পড়ার পর পূর্ণ বেগে চলন্ত হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস সেগুলোকে আঘাত করে।
আনন্দবাজার পত্রিকা স্থানীয় একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেসই একই লাইনে আগে আগে চলতে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনের পেছনে তীব্র গতিতে ধাক্কা মারে, সংঘর্ষের তীব্রতায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালবাহী ট্রেনটির উপরে উঠে যায়। করমণ্ডলের ২৩টি বগির মধ্যে ১৫টি লাইন থেকে ছিটকে পাশের ডাউন লাইন ও আশপাশে গিয়ে পড়ে।
ওই ডাউন লাইন দিয়ে তখন আসছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন। এটি সোজা গিয়ে করমণ্ডলের লাইনচ্যুত বগিগুলোর উপর গিয়ে পড়ে। এতে হাওড়াগামী ট্রেনটিরও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
করমণ্ডলের বেঁচে যাওয়া যাত্রী প্রশান্ত মণ্ডল ঘটনাস্থল থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, তিনি উল্টে পড়া বগি থেকে বেড়িয়ে একটি রেলগেট দেখতে পান, সেখানে একজন পুলিশ ছিল। এই পুলিশ জানান, সিগন্যাল না পেয়ে মালবাহী ট্রেনটা দাঁড়িয়েছিল, তখন করমণ্ডল সজোরে এর পেছনে ধাক্কা মারে।
আনন্দবাজার বলছে, করমণ্ডলের ইঞ্জিন ওই মালবাহী ট্রেনের ওপর উঠে পড়েছে, তা শুধু প্রচণ্ড জোরে সরাসরি ধাক্কা মারলেই সম্ভব এবং প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশের বয়ানও তেমনটিই বলছে।
আরও খবর
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রীর মুখে দুর্ঘটনার বয়ান
উড়িষ্যায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২০০ ছাড়াল, বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু কলকাতায়