উড়িষ্যায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২০০ ছাড়াল, বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু কলকাতায়

চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যেতে বাংলাদেশিদের অনেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ব্যবহার করেন; যেকারণে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন হটলাইন চালু করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2023, 03:56 PM
Updated : 2 June 2023, 10:57 PM

ভারতে উড়িষ্যার বালেশ্বরে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০০ ছাড়িয়েছে; আহত হয়েছে ৯০০ জন। দুর্ঘটনায় পড়া ট্রেনে বাংলাদেশি যাত্রী থাকার শঙ্কায় হটলাইন চালু করেছে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাইকমিশন।

শুক্রবার রাতের এ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ট্রেনের একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে অনেকে চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কার কথা দুর্ঘটনার পর থেকেই জানিয়ে আসছে রয়টার্সসহ ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো।

এদিকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা থেকে চেন্নাই যেতে অনেক বাংলাদেশি করমণ্ডল এক্সপ্রেস ব্যবহার করেন। সে কারণে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটিতে যদি বাংলাদেশিদের কেউ থাকেন, তাদের তথ্য জানতে একটি হটলাইন চালু করেছে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন।

হটলাইন নম্বরটি (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটসঅ্যাপ) জানিয়ে কলকাতার উপ হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সাধারণ বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য ওই ট্রেনটিতে যাতায়াত করেন। তাই দুর্ঘটনার পর ভারতের রেল কর্তৃপক্ষ ও উড়িষ্যা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন।

হাওড়া থেকে ২৫৫ কিলোমিটার দূরে দুই দ্রুতগামী যাত্রীবাহী ট্রেনের এ দুর্ঘটনায় আরও একটি মালবাহী ট্রেনও যুক্ত ছিল বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।

মধ্যরাত পেরিয়েও ট্রেন দুটোর লাইনচ্যুত বগির মধ্যে ও নিচে চাপা পড়া যাত্রীদের আরও লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে। নতুন করে আরও মরদেহ উদ্ধারের তথ্য জানিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০৭ জন হয়েছে বলে জানিয়েছে পিটিআই, দ্য হিন্দু ও ইন্ডিয়া টুডেসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম।

উড়িষ্যার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা স্থানীয় সময় রাত পৌনে চারটার দিকে মৃত্যের সংখ্যা বাড়ার তথ্য দিয়ে তা ২০৭ জনে পৌঁছেছে ও আহতের সংখ্যা ৯০০ বলে স্পেশাল রাজ্যের রিলিফ অরগাইজেশনের বরাতে জানিয়েছেন।

এর আগে মধ্যরাতের কিছু পরে উড়িষ্যার ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক শুধাংশু সারাঙ্গিকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়া টুডে জানায় উদ্ধারকারীরা ১২০ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও তার শঙ্কার কথা তুলে ধরেছে।

সন্ধ্যার এ দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারী বেশ কয়েকটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে। তাদের সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন স্থানীয়রা। আহত ও নিহতদের স্বজনদের আহাজারি ছাপিয়ে চারিদিকে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে রাতের নিস্তব্ধতা উবে গেছে।

আশেপাশের জেলা থেকেও উদ্ধারকারী দল যুক্ত হয়ে আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর কাজ করে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। উদ্ধার কাজে সময় লাগবে বলেও ধারণা তাদের।

কলকাতা থেকে চেন্নাইমুখী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে গিয়ে পড়ে। ওই লাইনে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস সেসময় সেখানে গিয়ে পৌঁছালে সংঘর্ষ বাধে। এতে ওই ট্রেনটিরও কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায় বলে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম আগে খবর দিয়েছিল, করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একটি মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।

যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় যাচ্ছিল।

দুর্ঘটনার বিষয়ে সহায়তায় উড়িষ্যা সরকার ও রেলওয়ে হেল্পলাইন চালু করেছে। রেলওয়ে হাওড়া, খড়গপুর, বালেশ্বর ও চেন্নাইয়ের জন্য আলাদা হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছে।

ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক যাত্রীকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি লিখেছে, আহত ওই ব্যক্তি দুই ট্রেনের সংঘর্ষের পরপরই অনেক যাত্রীর অঙ্গ দুর্ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেছেন।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুই ট্রেনের লাইনচ্যুত বগির মধ্যে অনেকেই আটকে আছেন। উদ্ধারকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও আহত ও আটকে থাকা ব্যক্তিদের সহায়তায় কাজ করছেন। তবে অন্ধকারের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম বাধার মুখে পড়েছে।

যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। দুপুর ৩ টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে ১২৮৪১ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালেশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি।

এনডিটিভির কাছে সেই ভয়বহ মুর্হূতের কথা তুলে ধরে আহত ওই যাত্রী বলেন, “বগিটি যখন লাইন থেকে পড়ে যায় তখনই জেগে যাই। আমার গায়ের ওপর এসে পড়ে ১০-১৫ জন মানুষ। মাথা ও ঘাড়ে ব্যাথায় কাবু হয়ে গেছিলাম।“

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ট্রেন থেকে যখন কোনো রকমে বের হয়ে আসি তখন চারপাশে মানুষের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অঙ্গ পড়ে থাকতে দেখি। কারও হাত এখানে, কারও পা ওদিকে। অনেকের মুখমণ্ডল একেবারে থেতলে গেছে।

উড়িষ্যার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনার বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, তৃতীয় একটি ট্রেনও এ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি আগেই লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে সেটির সঙ্গে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস সংঘর্ষে জড়ালে দুই ট্রেনের আরও কয়েকটি বগি ছিটকে যায়। এতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের মোট ১৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এছাড়া মালগাড়ির পাঁচটি বগিও লাইনচ্যুত হয়েছে।

যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। দুপুর ৩ টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে ১২৮৪১ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালেশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি।

আনন্দবাজার লিখেছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি মূলত পশ্চিমবঙ্গ থেকে দক্ষিণের হাসপাতালগুলোতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। প্রতিদিন বহু মানুষ এ ট্রেনে করে দক্ষিণ ভারতের মূলত তামিলনাড়ু, কর্নাটকে যান। দুর্ঘটনার জেরে চিকিৎসা করাতে দক্ষিণ ভারতে যাওয়া যাত্রীদেরও দুরবস্থা চরমে।

অপরদিকে হাওড়ামুখী যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের যাত্রীদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা ভিড় করতে শুরু করেছেন হাওড়া স্টেশনে। কারও বাবা, কারও সন্তান, কারও স্ত্রী ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে লাফিয়ে।

অপরদিকে এ দুর্ঘটনার পর বাতিল করা হয়েছে প্রায় সব ট্রেন। কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে। কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেই খবর আগে থেকে না জানার কারণে যাত্রীরা হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছাচ্ছেন। এতে স্টেশনের তথ্যকেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়েছে বলে লিখেছে আনন্দবাজার।

"অত্যন্ত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, আমি শোকাহত," এক টুইটে লিখেছেন উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী।

দুর্ঘটনার খবরে শোকাহত হয়ে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আহতদের সবধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি লেখেন, দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার দুর্ঘটনার পরপরই উড়িষ্যা সরকারের সঙ্গে মিলে এ ঘটনার সমন্বয় করছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

উড়িষ্যা ও কলকাতা থেকে উদ্ধারকারী দলগুলো ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে বলে টুইটে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এনডিআরএফ ও বিমান বাহিনীর দল স্থানীয় উদ্ধারকারী দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।