দোহায় দীর্ঘ আলোচনার পর আলোচকরা গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিস্তারিত চূড়ান্ত করার চেষ্টায় আছেন।
Published : 15 Jan 2025, 03:34 PM
কাতারের রাজধানী দোহায় আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা আলোচনা আশাবাদ জ্বালিয়েছে। মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিশর, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইসরায়েল ও হামাসের কর্মকর্তারাও বলেছেন, অবরুদ্ধ ছিটমহলে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক কাছে আছে।
এই দীর্ঘ আলোচনার পর বুধবার আলোচকরা গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিস্তারিত চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের নেতারা একটি চুক্তির বিষয়ে আসছে ঘণ্টাগুলোতে নিবিড়ি যোগাযোগ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিন্তু হামাসের এক ঊধ্র্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার রাতে রয়টার্সকে বলেছেন, গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী কীভাবে প্রত্যাহার করা হবে ইসরায়েল সেই মানচিত্র জমা দেওয়ার পর সেটি দেখে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবেন তারা, এর জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
এর আগে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মধ্যস্থতাকারীরা সমঝোতার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত খসড়া ইসরায়েল ও হামাসকে দিয়েছেন। এখন সর্বশেষ বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা চলছে।
হামাস বলেছে, আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং তারা আশা করছে এই দফার আলোচনা একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে।
ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেন, “আলোচনা একটি জটিল পর্যায়ে পৌঁছেছে। যদিও এখন কিছু খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কাজ করা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চূড়ান্তের কাছাকাছি আছি, তবে এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি।”
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, “আশা করছি চলতি সপ্তাহেই গাজায় জিম্মি চুক্তি চূড়ান্ত হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংস করে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে ওই অঞ্চলে সংঘাত ছড়ানোর পর একটি চুক্তি সন্নিকটে।
দোহার আলোচনায় বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের একজন দূতও অংশ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার বাইডেন এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে কথা বলেছেন।
দুই নেতার ফোনালাপের পর হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলেছে, “দুই নেতাই আসন্ন ঘণ্টাগুলোতে সরাসরি ও তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিবিড় সমন্বয় বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”
এর পাশাপাশি দুই প্রেসিডেন্ট ‘চুক্তি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন’।
গত এক বছরে গাজা একদম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমনকি যুদ্ধে নিহত হয়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। ছিটমহলটির বেশিরভাগ বাসিন্দা এখন গৃহহীন। এখনও প্রতিদিন বহু মানুষকে হত্যা করছে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতি হলে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।
যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত হলে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে আটক হওয়া প্রায় ১০০ জন জিম্মিকে ফিরিয়ে দেবে ফিলিস্তিন। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা জানান, চুক্তির প্রথম ধাপে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, যাদের মধ্যে শিশু, কয়েকজন নারীসহ নারী সেনা, পঞ্চাশোর্ধ পুরুষ এবং আহত ও অসুস্থদের মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েল ধীরে ধীরে এবং আংশিকভাবে কিছু সেনা প্রত্যাহার করবে।
ফিলিস্তিনের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ৬০ দিনের মধ্যে এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা গাজার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১২০০ জনকে হত্যা ও ২৫০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই দিন থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
আরও পড়ুন: