গাজা যুদ্ধ শেষ করার একটি পরিকল্পনার বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে আলোচকরা কাতারের রাজধানী দোহায় মিলিত হচ্ছেন।
Published : 14 Jan 2025, 12:19 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনে জানিয়েছেন, তার সমর্থিত একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি ফলপ্রসূ হওয়ার ‘প্রান্তে’ আছে।
রয়টার্স জানায়, তার এই মন্তব্যের পর গাজা যুদ্ধ শেষ করার একটি পরিকল্পনার বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে আলোচকরা মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় মিলিত হবেন।
আলোচনার বিষয়ে জ্ঞাত এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সোমবার মধ্যস্থতাকারীরা সমঝোতার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত খসড়া ইসরায়েল ও হামাসকে দিয়েছেন।
এর আগে মধ্যরাতে দোহায় চলমান আলোচনায় ‘বড় ধরনের অগ্রগতি’ হয়। এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, উভয়ের দূতরা উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার এক ভাষণে বাইডেন তার পররাষ্ট্র নীতির সাফল্য তুলে ধরে বলেন, “এই চুক্তি, জিম্মিদের মুক্ত করবে, লড়াই থামাবে, ইসরায়েলকে নিরাপত্তা দেবে এবং আমাদের হামাসের শুরু করা এই যুদ্ধে ভয়ঙ্করভাবে দুর্ভোগ পোহানো ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার সুযোগ করে দেবে।”
যদি সফল হয় তাহলে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি এক বছর ধরে শুরু আর বন্ধ হওয়া আলোচনার ইতি ঘটাবে। পাশপাশি গাজা যুদ্ধের অবসান ও যুদ্ধের প্রথমদিকের পর থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের সবচেয়ে বড় মুক্তির সূচনা করবে। গাজা যুদ্ধের প্রথমদিকে হওয়া এক সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ২৪০ জন ফিলিস্তিনির বিনিময়ে প্রায় অর্ধেক জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল।
আলোচনার বিষয়ে অবহিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, দোহার আলোচনায় কাতার যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে তৈরি করা একটি খসড়া টেক্সট উভয়পক্ষকে দিয়েছে।
সোমবার বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমার মনে হয় আমরা এটি বন্ধ করতে পারবো, এর ভালো সুযোগ আছে। পক্ষগুলো চুক্তির অনেক কাছাকাছি আছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, বল হামাসের কোর্টে আছে। হামাস বলেছে, তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছতে আগ্রহী।
এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তির অংশ হিসেবে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তির বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, গাজায় এখনও ৯৮ জন জিম্মি আছেন।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডন সার সাংবাদিকদের বলেছেন, “অগ্রগতি হয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখাচ্ছে। জিম্মিদের সুরক্ষার চুক্তির জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানোয় আমি আমার আমেরিকান বন্ধুদের ধন্যবাদ দিতে চাই।”
হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “আলোচনায় কিছু মূল সমস্যা নিয়ে অগ্রগতি হয়েছে আর আমরা উপসংহারে পৌঁছানোর জন্য কাজ করছি যা দ্রুতই হবে।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন আক্রমণ চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজা যুদ্ধ শুরু হয়।
ইসরায়েলের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের আক্রমণে অন্তত ১২০০ জন নিহত হন আর তারা ইসরায়েল থেকে ২৫০ জনের বেশি মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে রাখে।
ওই দিন থেকেই ২৩ লাখ বাসিন্দার ছোট্ট ভূখণ্ড গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্বিচার হামলায় এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় গাজা প্রায় আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে এবং এর প্রায় সব বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়ে গভীর মানবিক সংকটের মধ্যে দিন পার করছে।
আরও পড়ুন:
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অংশ নিতে দোহায় মোসাদ, শিনবেত প্রধান