২০২২ সালে ইউক্রেইনে আক্রমণের পর জো বাইডেনের যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে ক্রেমলিন বলেছিল, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘শূন্যেরও নিচে’ নেমে গেছে।
Published : 04 Mar 2025, 10:38 PM
ইউক্রেইনে যুদ্ধ বন্ধ এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের যে চাওয়া, তার সঙ্গে মিলিয়ে রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিলে সম্ভাব্য পরিকল্পনা সাজাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন এক কর্মকর্তা এবং এই পরিকল্পনা বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন।
মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নে মার্কিন প্রশাসন আসছে দিনগুলোতে যেসব বৈঠক করবে, সেখানে রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় যেসব নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রসঙ্গে তোলা যেতে পারে সেগুলোর একটি খসড়া তালিকা করতে হোয়াইট হাউজ এরই মধ্যে পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলেছে, জানিয়েছে সূত্রগুলো।
তারা বলেছে, নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা দপ্তরগুলো এখন কোন কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া যায় তার প্রস্তাব সাজাচ্ছে, এদের মধ্যে কয়েকজন রুশ অলিগার্কের নামও রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা প্রায়ই এই ধরনের ‘বিকল্প প্রস্তাবের’ খসড়া বানিয়ে থাকেন, কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হোয়াইট হাউজের দিক থেকে এমন সুনির্দিষ্ট অনুরোধে বোঝা যাচ্ছে ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টারা মস্কোর সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিলে বেশ আগ্রহী।
তবে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বদলে ওয়াশিংটন মস্কোর কাছে কী কী চাইতে পারে, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদক দেশ। ট্রাম্প যদি তেল উৎপাদকদের জোট ওপেকের সদস্য ইরানের তেল রপ্তানি আটকাতে ব্যবস্থা নেন, সেক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার জ্বালানি ব্যবস্থাপনার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে এই দাম বৃদ্ধি এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরিকল্পনা নিয়ে হোয়াইট হাউজ, মার্কিন পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ওয়াশিংটনের রুশ দূতাবাসের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেইনের ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করলে জো বাইডেনের যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে গত বছর ক্রেমলিন বলেছিল, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘শূন্যেরও নিচে’ নেমে গেছে।
কিন্তু ট্রাম্প এসেই ওই চিত্র বদলে দেন। তিনি দশক দশক ধরে চলে আসা মার্কিন নীতি পাল্টে দিয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন। তারই অংশ হিসেবে গত মাসের ১২ তারিখ তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, এরপর মস্কো ও ওয়াশিংটনের কূটনীতিকরা সৌদি আরব ও তুরস্কে দুই দফা বৈঠকও করে।
ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি ছিল, নিষেধাজ্ঞা মস্কোর অর্থনীতিকে দুর্বল করবে, তাতে তাদের যুদ্ধপ্রস্তুতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ লক্ষ্যে তারা রাশিয়ার তেল-গ্যাস খাতকে লক্ষ্য করেও নানান বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল।
ওয়াশিংটন ও এর পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার রপ্তানি করা ব্যারেলের মূল্য ৬০ ডলারে বেঁধে দিয়েছিল; ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার আগে আগে বাইডেন ১০ জানুয়ারি মস্কোর ওপর যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন, তার কোপে পড়েছিল রাশিয়ার তেল বহন করা নৌযান ও কোম্পানিগুলোও।
ট্রাম্পও জানুয়ারিতে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, পুতিন যদি আলোচনার টেবিলে বসতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হবে। যদিও এখন তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা মস্কোকে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিল নিয়ে খোলামেলাই কথা বলছেন।
গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ব্লু্মবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, আসছে সপ্তাহগুলোতে আলোচনার ক্ষেত্রে মস্কোর দৃষ্টিভঙ্গি কী থাকে, তার ওপর ভিত্তি করে তারা নিষেধাজ্ঞায় ছাড় পেতে পারে।
এর সপ্তাহখানেকের মধ্যে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এক সময় না এক সময় রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তো শিথিল করতেই হবে।
২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখলে নেওয়ার পর তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও মস্কোর ওপর বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সেসব নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোও হয়েছে।
কিন্তু এখন তার প্রশাসন কোন কোন নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কথা ভাবছে, কোনগুলো আগে, কোনগুলো পরে শিথিল বা প্রত্যাহার হতে পারে সে সম্বন্ধে কোনো তথ্য পায়নি রয়টার্স।
ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দিলেই তার প্রশাসন কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কাজ শুরু করতে পারে। তবে এমন কিছু নিষেধাজ্ঞাও আছে, যেগুলো শিথিল বা প্রত্যাহারে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে, বলেছেন মরিসন ফোয়েরস্টার ল ফার্মের অংশীদার ও মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফরেন এসেটস কন্ট্রোল অফিসের সাবেক প্রধান জন স্মিথ।
২০২২ সালে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় রাশিয়া তার পুরো অর্থনীতিকে যুদ্ধ বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো ঢেলে সাজিয়েছে। কিন্ত এরপরও মস্কো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চায়, কেননা এর ফলে তার অর্থনৈতিক অবস্থার ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাশিয়া এখন বলছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা চায়। গত সপ্তাহে ক্রেমলিন বলেছিল, তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ বিরল ভৌত পদার্থ রয়েছে, যার বিকাশে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী।
মস্কোর সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি করতে হলেও যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।