ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লিতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উলফার যৌক্তিক সব দাবিই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ করা হবে।
Published : 30 Dec 2023, 09:17 AM
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম (ইউএলএফএ) এর সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় ও আসাম সরকারের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় শান্তি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি উলফা নামে পরিচিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটির বিদ্রোহের অবসান ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে পক্ষগুলোর মধ্যে এ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, খবর ভারতীয় গণমাধ্যমের।
তবে উলফার পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন ইউলএফএ (স্বতন্ত্র) উপদলটি সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করে আসছে।
আসামের সবচেয়ে পুরনো এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির সঙ্গে করা চুক্তিতে অবৈধ অভিবাসী, আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর জন্য ভূমি অধিকার এবং আসামের উন্নয়নের জন্য একটি আর্থিক প্যাকেজ রাখাসহ কিছু সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লিতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উলফার যৌক্তিক সব দাবিই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ করা হবে এটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চিত করবে আর একটি সংগঠন হিসেবে উলফাকে ভেঙে দেওয়া হবে।
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কৃতিত্ব দিয়ে শাহ বলেন, “উলফার নেতৃবৃন্দকে আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই, শান্তি প্রক্রিয়ার সাফল্যের জন্য তারা কেন্দ্রের ওপর যে বিশ্বাস রেখেছেন তাকে সম্মানিত করা হবে।”
আসাম ও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্যগুলোর বিভিন্ন স্থান থেকে আর্মড ফোর্সেস (স্পেশাল) পাওয়ার অ্যাক্ট (এএফএসপিএ) তুলে নেওয়া ওই অঞ্চলটিতে বিদ্রোহ প্রায় লুপ্ত হয়ে আসার প্রমাণ বলে দাবি করেন শাহ।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, উলফার সঙ্গে এই শাক্তি চুক্তি ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করবে।
দেশটির ওই অঞ্চলের একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী অস্ত্র নামিয়ে রাখতে সম্মত হওয়ার পর মোদী সরকার তাদের সঙ্গে একের পর এক শান্তি চুক্তি করে। নভেম্বরে মণিপুর উপত্যকাভিত্তিক সবচেয়ে পুরনো সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউএনএলএফ দিল্লি সরকার ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় শান্তি চুক্তি করে।
উলফার শুরুটি হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল আসামের শিবসাগর এলাকায়। আদিবাসী অসমীয়া জনগণের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। ১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে গোষ্ঠীটি সশস্ত্র অভিযান শুরু করে। তখন এর নেতৃত্বে ছিলেন পরেশ বড়ুয়া, অরবিন্দ রাজখোয়া এবং অনুপ চেটিয়া।
প্রথমদিকে অভাবী ও দরিদ্রদের সাহায্যকারী একট দল হিসেবে উলফার গ্রহণযোগ্যতা গড়ে ওঠে। কিন্তু উলফার কৌশল দ্রুতই ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে এগিয়ে যায়।
১৯৮৯ সালে আপিজে সুরেন্দ্র গ্রুপের চেয়ারম্যান সুরেন্দ্র পলকে হত্যার ঘটনা উলফাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। সুরেন্দ্র পল ছিলেন ভারতের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও চা বাগান মালিক। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসের সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লর্ড স্বরাজ পলের ভাই ছিলেন।
সুরেন্দ্র পলকে হত্যার পর আসামের অন্যান্য চা বাগান মালিকদের জন্য উলফা হুমকি হয়ে ওঠে। চা বাগানগুলো থেকে বিভিন্ন পরিমাণ চাঁদাও আদায় করতে থাকে তারা। তাদের এসব তৎপরতায় ভারত সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়ে যায় আর তারা উলফার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে।
ULFA the oldest insurgent group of Assam agreed to abjure the path of violence. Speaking on the signing of a memorandum of settlement with ULFA.
— Amit Shah (@AmitShah) December 29, 2023
https://t.co/6H1DIHmmHy