হামলার জন্য আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) দায়ী করা হলেও সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটি বলছে, তাদের বাহিনীর গায়ে কালি লাগাতেই এই হত্যাকাণ্ডের চিত্র মঞ্চস্থ হয়েছে।
Published : 13 Apr 2025, 05:51 PM
যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের পশ্চিমের দারফুর অঞ্চলে একাধিক আশ্রয় শিবিরে কয়েকদিনের সিরিজ হামলায় ২০ শিশু ও চিকিৎসকদের একটি দলসহ শতাধিক বেসামরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
আল-ফাশের শহর ও কাছাকাছি দুটো শিবিরে হামলার জন্য আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) দায়ী করা হচ্ছে, জানিয়েছে বিবিসি।
যদিও সুদানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত গোষ্ঠীটি বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে আনা নৃশংসতার সব অভিযোগই বানোয়াট।
জমজম ও আবু শুক শিবিরে সাময়িকভাবে আশ্রিত মানুষের সংখ্যা ৭ লাখের বেশি, এদের অধিকাংশকেই মারাত্মক দুর্ভিক্ষজনিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির ঠিক আগে আগে এই শিবিরগুলোতে হামলার খবর এল।
সুদানে জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রমের সমন্বয়ক ক্লেমেনতাইন এনকুয়েতা-সালামি বলেছেন, শিবিরগুলোতে হামলার খবরে তিনি ‘ভীত ও মারাত্মক শঙ্কিত’।
“বাস্তুচ্যুত মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের ওপর একের পর এক প্রাণঘাতী ও নির্মম হামলার তীব্রতা বাড়ছে, এগুলো তারই প্রতিনিধিত্ব করছে,” বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন তিনি।
দাতাসংস্থা রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, জমজমে হামলায় চিকিৎসক, রেফারেল চালক ও একজন দলনায়কসহ তাদের নয় কর্মী নির্মমভাবে নিহত হয়েছে।
হামলার জন্য আরএসএফকেই দায়ী করে তারা বলেছে, “অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বন্ধের লক্ষ্যে এই এলাকার সমস্ত স্বাস্থ্য অবকাঠামোকে নিশানা করা হয়েছিল বলেই মনে করছি আমরা। আল-ফাশের শহরের অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি আমাদের একটি ক্লিনিকও হামলার অন্যতম নিশানা ছিল জেনে আমরা আতঙ্কিত,” বলেছে তারা।
তবে শনিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে আরএসএফ জানিয়েছে, বেসামরিকদের ওপর হামলার জন্য তারা দায়ী নয় এবং জমজমে হত্যাকাণ্ডের চিত্র মঞ্চস্থই হয়েছে তাদের বাহিনীর গায়ে কালি লাগানোর জন্য।
আশ্রয় শিবিরের কমিউনিটি কিচেনে কাজ করা জমজমের এক বাসিন্দা পরিস্থিতিকে ‘মারাত্মক বিপজ্জনক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
“আমরা কমিউনিটি কিচেনে কাজ করতো এমন অনেক তরুণকে হারিয়েছি, হারিয়েছি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া চিকিৎসকদের একাংশকেও,” রোববার সকালে হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া অডিও বার্তায় বলেছেন ৩৪ বছর বয়সী মুস্তাফা।
হামলায় নিজের দুই আত্মীয়কে হারানো এই তরুণ বলেন, “অনেকেই আহত, অথচ তাদের জন্য কোনো হাসপাতাল বা ওষুধ নেই। রক্তক্ষরণেই মারা যাচ্ছে তারা। এখনও গোলাবর্ষণ চলছে, সকালে আরও হামলার আশঙ্কা করছি আমরা।”
জমজম থেকে বের হওয়ার সব পথ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, চারটি পথের সবগুলোই ঘিরে রাখা হয়েছে, জানিয়েছেন তিনি।
ওয়াসির নামে ওই শিবিরের আরেক বাসিন্দাও পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
“জমজমের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। সিংহভাগ বেসামরিকই পালিয়েছে, আমরাও চেষ্টা করছি, কিন্তু সব রাস্তা আটকানো থাকায় এখনও সফল হতে পারিনি, আমাদের সঙ্গে শিশুরাও রয়েছে।
“সর্বত্রই মৃত্যু; আমি এখন যখন পরিখার ভেতর থেকে কথা বলছি, তখনও গোলাবর্ষণ চলছে,” বলেছেন তিনি।
বিবিসি লিখেছে, সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে শুরু হওয়া যুদ্ধ সুদানে যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, তা এ মুহূর্তে বিশ্বের সর্ববৃহৎ। সংঘাত এরই মধ্যে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষকে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে, অসংখ্য এলাকার লোকজনকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
সেনাবাহিনী ও আরএসএফ নেতাদের মধ্যে সুদানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে মতানৈক্য থেকে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
দারফুরে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সর্বশেষ বড় শহরই হচ্ছে আল-ফাশের, প্রায় এক বছর ধরে এর চারপাশ আরএসএফ ঘিরে রেখেছে।