সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়া

ইরাকের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া রাসুল সামাজিক মাধ্যমে করা এক পোস্টে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার নিন্দা জানান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2024, 05:28 AM
Updated : 3 Feb 2024, 05:28 AM

জর্ডানের উত্তরপূর্ব প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কুদস বাহিনী ও ইরান সমর্থিত অন্যান্য মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর ওপর হামলা শুরু করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

শুক্রবার সিরিয়ার চারটি ও ইরাকের তিনটি স্থানে ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যস্থলে চালানো এসব হামলার প্রথম প্রতিক্রিয়া এসেছে ইরাকের সরকারের কাছ থেকে।

ইরাকের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া রাসুল সামাজিক মাধ্যমে করা এক পোস্টে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার নিন্দা জানান।

ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এসব বিমান হামলা ইরাকের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন, এটি ইরাক সরকারের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করেছে এবং ইরাক ও অঞ্চলটিকে একটি মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। এই হামলার ফলাফল ইরাক ও আশপাশের অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় গুরুতর প্রভাব ফেলবে।”

বিবিসি লিখেছে, শুক্রবার রাতে যেসব স্থানে হামলা চালানো হয়েছে সম্ভবত সেগুলোর অধিকাংশ আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু তারপরও শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর সদস্যরা হতাহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে আর এটি নিয়ে বাগদাদ উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।

মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই গোষ্ঠীগুলো ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে আরও হামলা চালাতে পারে, এতে বাগদাদ সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের হামলা ইতোমধ্যে তেহরান ও ওয়াশিংটনের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

ইরাকি এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, গত কয়েকদিন ধরে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টায় ‘ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন’। পাশাপাশি তিনি ইরাকের কোনো স্থানে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে ওয়াশিংটনকে অনুরোধ করে বেশ কয়েকটি বার্তা পাঠিয়েছেন।

আমেরিকানদের তিনি জানিয়েছিলেন, জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে সিরিয়া থেকে হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে জবাব এসেছে, “দুর্ভাগ্যবশত, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে খারাপ বিকল্পগুলোর মধ্যে ইরাকের অবস্থানগুলিই হলো সবচেয়ে সেরা সম্ভাব্য বিকল্প।”

সাদ্দাম হুসেইনের পতনের পর থেকে ইরাক যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, আবারও বাগদাদ নিজেকে একই পরিস্থিতিতে দেখতে পেল। শেষ পর্যন্ত সরাসরি প্রতিশোধমূলক হামলা থেকে ইরান ছাড় পেয়ে গেল কিন্তু মূল্য দিতে হল ইরাককে।

মার্কিন সেনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান ডেমোক্র্যাট জ্যাক রিড বলেছেন, “সিরিয়া ও ইরাকে ইরানের ছায়া বাহিনীগুলো ওপর উল্লেখযোগ্য আঘাত হানা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের বোঝা উচিত, তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে।

“বিজ্ঞ কূটনীতির সঙ্গে মিলিতভাবে এসব হামলা একটি পরিষ্কার ইঙ্গিত দেবে যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সেনা ও স্বার্থ সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রাখবে।”

মার্কিন সেনেটের ওই একই কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য রিপাবলিকান সেনেটর রজার উইকার বলেছেন, “এই সামরিক হামলাগুলোকে স্বাগত জানাই, কিন্তু তিন মার্কিন সেনার মৃত্যু ও প্রায় ৫০ জন আহত হওয়ার পর এটি অনেক দেরিতে ঘটল। ইরান ও এর ছায়া বাহিনীগুলো ১৬৫ বার আমেরিকান সেনাদের হত্যার চেষ্টা করছে ও আমাদের যুদ্ধজাহাজগুলো ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন বাইডেন প্রশাসন ন্যূনতম প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য নিজেদের অভিনন্দন জানাচ্ছে।

“আয়াতুল্লাহর নাক রক্তাক্ত করে না দিয়ে (যা তার প্রাপ্য) আমরা তার কব্জিতে চড় মেরে চলছি।”

আরও পড়ুন:

Also Read: ইরাক ও সিরিয়ায় ‘ইরান সমর্থিত’ ৮৫ স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা