ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর রোববার বলেছেন, “অন্যান্য বেশ কিছু দেশ ট্রাম্পকে নিয়ে চিন্তিত (নার্ভাস)। কিন্তু ভারত সে তালিকায় নেই।”
Published : 11 Nov 2024, 08:42 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে কোনও ভয় বা উদ্বেগ নেই বলে জানিয়েছে ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর রোববার বলেছেন, “অন্যান্য বেশ কিছু দেশ ট্রাম্পকে নিয়ে চিন্তিত (নার্ভাস)। কিন্তু ভারত সে তালিকায় নেই।”
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ভারতকে তিক্ত শুল্ক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়েছিল, যা দুই দেশের ব্যবসাতেই প্রভাব ফেলে।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক- দুই দলেরই সমর্থন পেয়ে আসছে ভারত। উভয় দলের প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ভারত ভালোভাবে কাজ করে এসেছে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই চীনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখে আসছে ভারতকে।
রোববার ভারতের মুম্বইয়ের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর বলেন, “আমি জানি, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর আমেরিকার বর্তমান অবস্থা দেখে অনেক দেশই খুব উদ্বিগ্ন। তবে স্পষ্ট বলতে পারি, আমরা মোটেই চিন্তিত নই। ট্রাম্পের শাসনামলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উন্নতি হবে না- এমন আশঙ্কার কোনও কারণ দেখছে না দিল্লি।”
তিনি আরও বলেন, "আমার মনে হয়, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে ফোনকলে অভিনন্দন জানানো বিশ্ব নেতাদের মধ্যে প্রথম তিনজনের একজন ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।"
তবে শুল্ক লড়াই ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত অক্টোবরে মোদীকে একজন 'দারুণ নেতা' বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প। কিন্তু ভারত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই নেতার উষ্ণ সম্পর্ক এই বাণিজ্যিক বিরোধগুলো দূর করতে পারে কিনা তা-ই এখন দেখার বিষয়।
এর আগেও ট্রাম্প ও মোদী একে অপরের প্রশংসা করেছেন। ২০১৯ সালে টেক্সাসে ভারতীয়-আমেরিকান কমিউনিটির আয়োজিত ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নরেন্দ্র মোদী এবং ডনাল্ড ট্রাম্প একে অপরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।
সেই অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে কোনও বিদেশি নেতার জন্য এমন আয়োজনকে সর্ববৃহৎ সংবর্ধনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।
পরের বছর ট্রম্পের প্রথম ভারত সফরের সময় মোদী তাকে নিজ নির্বাচনী এলাকা গুজরাটে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন, যেখানে ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল।
কিন্তু দুই দেশের এমন আয়োজনের কমতি না থাকলেও সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়েছে তিক্ত শুল্ক যুদ্ধের কারণে। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ভারতের জন্য বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এইচ-১বি ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার ২০১৬ সালে ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ২১ শতাংশে পৌঁছায়। এই ভিসার একটি বড় অংশ সাধারণত ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীদের দেওয়া হয়ে থাকে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুরোনো শিল্পোন্নত অর্থনীতির দেশগুলো এখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, "তাদের বাজার বড়, তারা শক্তিশালী প্রযুক্তি কেন্দ্র। সুতরাং পরিবর্তন আমাদেরকে মেনে নিতে হবে।”
সূত্র: বিবিসি