প্রায় ১৪ বছরের যুদ্ধে ভেঙে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়া এখন সিরিয়ার জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে।
Published : 26 Mar 2025, 01:25 AM
সিরিয়াকে শর্তের একটি তালিকা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যেগুলো পূরণ হলে সিরিয়ায় শিথিল হতে পারে কিছু নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হল, সিরিয়া সরকারের ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে যেন কোনও বিদেশি না থাকে সেটি নিশ্চিত করা। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন ছয় কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা য়টার্সকে একথা জানিয়েছেন।
১৮ মার্চ ব্রাসেলসে সিরিয়া বিষয়ক দাতাদের এক সম্মেলনের ফাঁকে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানির কাছে শর্তের তালিকা হস্তান্তর করেন লেভান্ট ও সিরিয়া বিষয়ক মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী নাতাশা ফ্রানসেসকি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক মার্কিন ও এক সিরীয় কর্মকর্তা য়টার্সকে একথা বলেছেন।
ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই সিরিয়া ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি প্রথম উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ। রয়টার্স প্রথম এই শর্তের তালিকা হস্তান্তর এবং বৈঠকের খবর প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—সিরিয়ায় থাকা অবশিষ্ট সব রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত ধ্বংস করা, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে সহযোগিতা করা, সিরিয়া সরকারে ঊর্ধ্বতন পদে কোনও বিদেশি যোদ্ধা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি সাবেক বিদ্রোহীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে আছে উইঘুর,জর্ডানি ও তুর্কী। সিরিয়ার এ পদক্ষেপ বিভিন্ন দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
ওইসব শর্ত ছাড়াও এক দশকের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ মার্কিন সাংবাদিক অস্টিন টাইসকে খুঁজে বের করতে সহায়তা করার জন্য সিরিয়াকে একজন লিয়াজো কর্মকর্তা নিয়োগ করারও দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সিরিয়া এইসব শর্ত ও দাবি পূরণ করলে দামেস্কর ওপর আরোপতি কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে ওয়াশিংটন। এর মধ্যে সিরিয়া পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লেনদেনে আপাতত যে ছাড় দেওয়া আছে তার মেয়াদ আরও দুবছর বাড়ানো হতে পারে এবং নতুন আরও ছাড় দেওয়া হতে পারে।
তাছাড়া, সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতার সমর্থনেও বিবৃতি প্রকাশ করবে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়াকে শর্তগুলো পূরণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। ওদিকে, সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও এই শর্তের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে সিরিয়ার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এখন দেশটির জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপ সিরিয়ার ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন খাতের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
কিছু নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে শিথিল করা হলেও এর প্রভাব খুব বেশি পড়েনি। জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ছয় মাসের জন্য একটি পদক্ষেপ নিয়েছিল, যাতে মানবিক সহায়তা সহজ হয়। তবে এই পদক্ষেপ যথেষ্ট ছিল না।
সিরিয়ার কর্মকর্তারা, বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিবানি ও অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহীরা আকস্মিক হামলায় ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরও নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা অন্যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া নীতি স্পষ্ট হচ্ছে:
শর্তের তালিকা দেওয়ার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের সিরিয়া নীতি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও ইসলামপন্থী চরমপন্থার নিন্দা জানালেও নিষেধাজ্ঞার ভবিষ্যৎ ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি।
ওয়াশিংটনে সিরিয়া নিয়ে নানা মতবিরোধ রয়েছে। হোয়াইট হাউজের কিছু কর্মকর্তা কড়া অবস্থান নেওয়ার পক্ষে, কারণ সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পর্ক ছিল। অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সিরিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য সংলাপের পথ নেওয়া-সহ তুলনামূলক নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে।