স্বাক্ষর করা ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন ড. সুজান স্নাইডার, যিনি এর আগে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার প্রধান ছিলেন।
Published : 27 Apr 2023, 05:42 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা দিন দিন উন্নত হয়ে ওঠায় সচেতনতার মতো বিষয় নিয়ে এআই নির্মাতাদের তুলনামূলক বেশি গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষাবিদ। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা এক খোলা চিঠিও লিখেছেন।
“কোনো এআই সিস্টেমের অনুভূতি ও এমনকি মানবীয় পর্যায়ের চেতনা আছে, এমন ধারণা এখন আর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।” --লেখা ছিল চিঠিতে।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই এই বিষয়ে একমত যে এআই ব্যবস্থা এখনও ওই স্তরের পরিশীলিততার কাছাকাছি পৌঁছায়নি।
তবে এই ব্যবস্থা দ্রুতই বিবর্তিত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। আর কেউ কেউ বলছেন, এর বিকাশে রাশ টানার সময় হয়েছে।
সচেতনতা বৃদ্ধি
‘এআই’ শব্দটির মাধ্যমে বিভিন্ন এমন কম্পিউটার সিস্টেমের কথা বোঝায় যা সাধারণত এমন কাজ করতে পারে, যেগুলোর জন্য মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে চ্যাটবটের প্রশ্ন বোঝা, মানুষের মতো জবাব দিতে পারা ও ছবিতে থাকা বিভিন্ন জিনিস শনাক্ত করতে পারার মতো বিষয়।
‘জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফরমার ৪’ বা ‘জিপিটি-৪’ নামে একটি এআই সিস্টেম তৈরি করেছে জনপ্রিয় চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা ওপেনএআই। আর এটি সাফল্যের সঙ্গে বিভিন্ন বার পরীক্ষা ও আইনজীবিদের পেশাদার যোগ্যতা অর্জন করতে পারলেও এখনও এর মধ্যে ভুল করার বা ভুল তথ্য শেয়ারের প্রবণতা দেখা যায়।
এটি কেবল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার একটি কার্যকারিতা। এরইমধ্যে স্বাস্থ্য গবেষণা, বিপণন ও আর্থিক খাত’সহ বেশ কিছু জায়গায় এআই চালিত পণ্য স্থাপিত হওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
সম্প্রতি এমনই আরেক চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রযুক্তি খাতের ধনকুবের ইলন মাস্ক। ওই চিঠির দাবি, কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিকল্পনা ও সেটি বাস্তবায়িত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ধরনের এআই উন্নয়ন স্থগিত রাখা উচিত।
মঙ্গলবার মাস্কের সাবেক স্ত্রী তালুলাহ রাইলি টুইট করেন, মানবীয় স্তরের বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমে সক্ষম সাধারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা (এজিআই) সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও জনসাধারণের মধ্যে এটি নিয়ে চলমান বিতর্কে উৎসাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘গ্রেটা থুনবার্গের (পরিবেশ কর্মী) সমতুল্য’ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে এআই’র বিকাশ থামানো উচিৎ কি না, ওই বিষয়ে তার কোনো মতামত নেই বলে জানান তিনি।
তবে, এই চিঠি এআই’র সচেতনতা সম্পর্কে তুলনামূলক বড় বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়ার বিষয়টিতে জোর দেয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। এর মধ্যে রয়েছে কীভাবে এআই’তে এই সুবিধা প্রয়োগ করা যেতে পারে ও সমাজ কীভাবে এর সঙ্গে থাকতে পারে, এমন বিষয়গুলো।
“চেতনাভিত্তিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, গবেষণার গতি তরান্বিত করার জরুরী প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেছে এআইয়ের দ্রুত বিকাশ।” --বলা হয় চিঠিতে।
এতে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন ড. সুজান স্নাইডার, যিনি এর আগে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদও এতে স্বাক্ষর করেন।
অনুভূতি প্রকাশ করা
গত বছর, এআই ব্যবস্থা সংবেদনশীল, এমন দাবি করে কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হন গুগলের এক প্রকৌশল।
ব্লেক লেমইন নামের ওই কর্মী লিখেন, গুগলের বিশাল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ‘লামডা’, যা কি না চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী বার্ড সমর্থন করে, সেটি অনুভূতি প্রকাশ করেছে।
গুগল অবশ্য নিজের অবস্থানে অটল যে, যেভাবে লামডাকে প্রোগ্রাম করা হয়েছে এটি সেভাবেই কাজ করছে। আর সেটি হলো মানবীয় উপায়ে যোগাযোগ পরিচালনা করা।
তবে সম্প্রতি মার্কিন সংবাদ প্ল্যাটফর্ম সিবিএস’কে গুগল প্রধান সুন্দার পিচাই বলেন, বার্ড কীভাবে কাজ করে, সেটি তিনি ‘পুরোপুরি বুঝতে পারেননি’।
তিনি আরও যোগ করেন, মানুষের মস্তিষ্কের পক্ষেও এটি পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। ফলে, এই ব্যবস্থা নিয়ে তুলনামূলক বেশি গবেষণার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন অলাভজনক সংস্থা ‘দ্য অ্যাসেসিয়েশন ফর ম্যাথমেটিকাল কনশাসনেস সয়েন্স’ (এএমসিএস)।
তবে, এআই ব্যবস্থা নিয়ে উত্তেজনার পাশাপাশি ভীতিও রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য এটি ‘বাজওয়ার্ড’ হিসেবে বিবেচিত। আর বিভিন্ন এআই সংশ্লিষ্ট প্রকল্পেও ব্যপক বিনিয়োগ চালাচ্ছে কোম্পানিগুলো।
নভেম্বরে আত্মপ্রকাশের পরপরই ভাইরাল হয়ে যায় চ্যাটজিপিটি। ১০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী পাওয়া এই চ্যাটবট এআই ব্যবস্থার ‘জনপ্রিয় মুখ’ হিসেবে অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে।