বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া রাখাইদের সবচেয়ে বড় সামাজিক এই উৎসব চলবে শনিবার পর্যন্ত।
Published : 18 Apr 2025, 02:23 PM
বর্ষবরণ উপলক্ষে কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী মাহা সাংগ্রেং পোয়ে বা পানি খেলা উৎসব শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর বর্ষবিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে রাখাইন তরুণ-তরুণীরা একে অপরের শরীরে ‘মঙ্গল জল’ ছিটিয়ে বিগত দিনের গ্লানি মুছে নতুন দিনের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন।
রাখাইন বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ১৩৮৭ রাখাইন বর্ষ। এ দিন থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে শনিবার পর্যন্ত। জেলার আট উপজেলার রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মণ্ডপে মণ্ডপে নেচে-গেয়ে জল ছিটিয়ে উৎসবে মেতে থাকেন।
নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙয়ের কাগজে সাজানো হয় প্রতিটি প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের মাঝখানে থাকে পানি রাখার ড্রামসহ নানা উপকরণ। এতে পানির রাখার এসব উপকরণের এক পাশে অবস্থান করেন তরুণীরা, আর অন্য পাশে থাকেন তরুণের দল। এরপর একে অপরের প্রতি ছুড়তে থাকেন ‘মঙ্গল জল’।
রাখাইন তরুণ ওয়ান নাই বলেন, “এই ‘মঙ্গল জল’ ছিটানোর মধ্য দিয়ে মুছে যায় পুরাতন বছরের সব গ্লানি, ব্যথা, বেদনা, অপ্রাপ্তিসহ নানা অসঙ্গতি।”
রাখাইন তরুণী মং চিন বলেন, এ উৎসব তাদের ধর্মীয় রীতির ভিত্তিতে নয়। এটি তাদের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব।
মংচিন বলেন, “জলে স্নিগ্ধ হওয়ার অন্যরকম প্রয়াস এই জলকেলি উৎসব। নতুন বছর যেনো ভালো কাটে, এজন্য আয়োজন করা হয় নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের।”
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মংছেন হ্লা রাখাইন বলেন, হাজার বছরের পুরোনো উৎসব এই পানি খেলা। জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত শতাধিক প্যান্ডেলে চলছে রাখাইন বর্ষবরণের উৎসব।
এ ছাড়া মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদণ্ডীসহ বিভিন্ন স্থানে প্যান্ডেল তৈরি করে বর্ষবরণ উৎসব চলছে বলে জানান তিনি।
এ উৎসব উপলক্ষে কক্সবাজারের বিভিন্ন রাখাইন পল্লী ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার শহরের প্রধান মন্দির অজ্ঞ্য মেদা ক্যাং পরিদর্শনে গিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, “কক্সবাজারে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জাতিগোষ্ঠীর একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ শহর। যা আবহমান সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক প্রতিচ্ছবি।
“রাখাইনদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের এই উৎসবে অংশ নেওয়ায় এটি সার্বজনীন হয়ে ওঠে।”
তিন দিনব্যাপী এ উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন।