চীনা এআই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালে। এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে দামী এআই স্টার্টআপ হিসেবে বিবেচনা করা হতো একে।
Published : 18 Dec 2023, 03:38 PM
কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ত্যাং শিয়াও’উ’র হঠাৎ মৃত্যুর পর শেয়ারবাজারে বড় ধসের মুখে পড়েছে চীনা কৃক্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি জায়ান্ট সেন্সটাইম।
মার্কিন বাণিজ্য প্রকাশনা ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপ্রকাশিত ‘স্বাস্থ্য সমস্যায়’ ৫৫ বছর বয়সী শিয়াও’উর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হংকংয়ে কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য কমেছে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত।
নিজস্ব ব্যবসার মন্থর গতি ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মতো নাজুক পরিস্থিতির সঙ্গে এরইমধ্যে লড়াই করছে কোম্পানিটি।
এ বড় পতনের সিংহভাগই ঘটেছে সোমবার, যখন কোম্পানির শেয়ারমূল্য কমে যায় ১১ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষক সাইট মার্কেটওয়াচ বলছে, জুলাইয়ের পর থেকে নিজেদের দৈনিক শেয়ারমূল্য ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনার দ্বারপ্রান্তে আছে সেন্সটাইম, যার ফলে এ অর্থবছরে সর্বমোট ৪৯ শতাংশ শেয়ারমূল্য হারাতে চলেছে কোম্পানিটি।
“আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠাতা, প্রখ্যাত এআই বিজ্ঞানী, ‘পুজিয়াং ল্যাব’ ও ‘সাংহাই এআই ল্যাব’-এর পরিচালক এবং ‘চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অফ হংকং’-এর অধ্যাপক ত্যাং শিয়াও’উ মারা গেছেন” – রোববার চীন থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছে সেন্সটাইম।
“১৫ ডিসেম্বর, শুক্রবার, স্থানীয় সময় রাত এগারোটা ৪৫ মিনিটে স্বাস্থ্যগত কারণে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।”
কোম্পানির দেওয়া মৃত্যু সংবাদে ঠিক কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে ত্যাং মারা গেছেন তা উল্লেখ করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রকাশনা বিজনেস ইনসাইডার’কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সেন্সটাইম-এর মুখপাত্ররা।
চীনা এআই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালে। এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে দামী এআই স্টার্টআপ হিসেবে বিবেচনা করা হতো একে। চীনা সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও অর্থায়ন নেওয়ার বিষয়টিকে এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইনসাইডার।
কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে ‘ফেইশল রিকগনিশন’ বা চেহারা শনাক্তকরণ, ‘অবজেক্ট ডিটেকশন’ বা বস্তু শনাক্তকরণ ও এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণের মতো বিষয়গুলো।
ত্যাং-এর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগেই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কৃত্রিম উপায়ে আয় বাড়ানোর অভিযোগ তোলে মার্কিন বাজার বিশ্লেষক কোম্পানি ‘গ্রিজলি রিসার্চ’। এর থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, সেন্সটাইম ‘অত্যন্ত সন্দেহজনক আয় পরিকল্পনার’ সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, যেখানে কোম্পানি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সেইসব গ্রাহককে অর্থ প্রদান করেছে, যারা কোনো এক সময় সেন্সটাইম থেকে পণ্য কিনেছেন, কিন্তু তা কখনওই তাদের কাছে পৌঁছায়নি।
“আমরা বিশ্বাস করি, সেন্সটাইমের মূল ব্যবসা অর্থাৎ ফেইশল রিকগনিশন প্রচুর প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে অলাভজনক হয়ে গেছে। এর আরেকটি সম্ভাব্য কারণ চীনা সরকারের বেশিরভাগ বিদেশি মালিকানাধীন ব্যবসাকে লাভজনক চুক্তি না দেওয়া।” – নভেম্বরের শেষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে গ্রিজলি রিসার্চ।
হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের এক ফাইলিংয়ে কোম্পানি দাবি করেছে, গ্রিজলি’র ওই প্রতিবেদন ‘অনৈতিক, যেখানে ভিত্তিহীন অভিযোগ ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা রয়েছে।’
তবে, অভিযোগগুলো সেন্সটাইম-এর শেয়ার ব্যবসায় বড় প্রভাবিত ফেলে। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অভিযোগটি প্রকাশের পরপরই কোম্পানির শেয়ারমূল্য কমেছে ১০ শতাংশ।