Published : 07 May 2024, 08:42 PM
আগের দিন বজ্রসহ ভারি বৃষ্টির পর চট্টগ্রামের হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। রাতে নদীতে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে, এখন সেই আশায় আছেন হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা।
মঙ্গলবার সকালে হালদা নদীতে পাহাড়ি ঢল নামে। সকাল ১০টা থেকে হালদা নদীর ছায়ার চরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নমুনা ডিম দেখা যায়।
সংগ্রহকারীরা নমুনা ডিম সংগ্রহ শুরু করেন। পরে বিকেলেও নদীর রামদাস মুন্সির হাট, গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘোনা ও কাটাখালিসহ বিভিন্ন অংশ থেকে নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নমুনা ডিমের পরিমাণ বেশ ভালো। ডিমও নিষিক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। তাই মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টি হলে হয়ত পুরোদমে ডিম ছেড়ে দিতে পারে হালদার কার্প জাতীয় মা মাছ।
প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ছাড়তে চট্টগ্রামের হালদা নদীতে রুই-কাতল-মৃগেলসহ কার্প জাতীয় মা মাছের আনাগোনা শুরু হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত চট্টগ্রামের হালদা নদী।
বছরের এই সময়ে (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ।
নদীতে মা মাছের ছাড়া সেই নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করেন মানুষ। পরে হ্যাচারিতে তা থেকে রেনু তৈরি হয়।
হালদা যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, সেই কালুরঘাট সেতুর কাছের অংশ থেকে উজানে মদুনাঘাট হয়ে নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে নদীর দুই তীরে হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি এই তিন উপজেলা।
মদুনাঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে হাটাহাজারী ও রাউজান উপজেলা সংলগ্ন অংশেই মেলে নিষিক্ত ডিম। এই অংশেই মা মাছের আনাগোনা বেশি হয়।
মঙ্গলবারের পরিস্থিতি জানিয়ে সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন আছি রামদাস মুন্সির হাট এলাকায়। জাল ও নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা সবাই প্রস্তুত।
“নদীতে পাহাড়ি ঢল আছে। নদীর নয়াহাট থেকে রামদাস মুন্সির হাট হয়ে মদুনাঘাট পর্যন্ত দেখেছি। সব পয়েন্টে ডিম সংগ্রহকারীরা অপেক্ষায় আছে। নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেশ ভালোভাবেই আছে।”
শ্রীবাস চন্দ্র দ বলেন, “যে নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে তা নিষিক্ত ডিম। এই ডিম থেকে রেণু হবার ভালো সম্ভাবনা আছে। তাই অনেকে ডিম সংগ্রহের পর তা হ্যাচারিতে নিয়ে যাচ্ছেন।
“রাতভর আমরা নদীতে থাকব ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে। আজ রাতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে ডিম ছাড়া সম্পন্ন হতে পারে।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভোগের অধ্যাপক ও হালদা রির্সাচ কেন্দ্রের সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ অমাবস্যা তিথি, সবাই অপেক্ষায় আছে। রাতের জোয়ারে হয়ত মা মাছ ডিম ছাড়বে। নমুনা ডিম পরিমাণে বেশ ভালোই, যা পর্যাপ্ত ডিম ছাড়ার পূর্বাভাষ বলা যায়।
“পাহাড়ি ঢলসহ যেসব অনুষঙ্গ ডিম ছাড়তে প্রয়োজনীয় সবই উপস্থিত, রাতে শুধু বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়বে বলে আশায় আছি।”
হালদা পাড়ের বর্ষীয়ান ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, “নমুনা ডিম ছেড়েছে। রাতে হয়ত ডিম ছেড়ে দেবে। ৬টা নৌকা নিয়ে নোয়াহাট থেকে কাগতিয়ার হাট পর্যন্ত এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহ করেছি। মোটামুটি ভালোই ডিম পেয়েছি।”
তিনটি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করেছেন আশু বড়ুয়া।
তিনি বলেন, “নদীর কাটাখালি অংশে প্রতি নৌকায় এক থেকে দেড় বালতি ডিম পেয়েছি।
“সকালে শুরুতে ছায়ার চর অংশ ভালো পরিমাণে ডিম মিলেছে। পরে নাপিতের ঘোনা ও আজিমের ঘাট এলাকায়ও ডিম পাওয়া গেছে। এখনো কেউ কেউ ডিম পাচ্ছে।”
সরকারি চারটি হ্যাচারির পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন কুয়াও ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত আছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ।
বেসরকারি সংস্থা আইডিএফ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমাদের একটি হ্যাচারিতে ৭টি গ্রুপের ডিম থেকে রেণু করার ব্যবস্থা আছে। তার মধ্যে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত চারটি গ্রুপ চৌবাচ্চায় ডিম রেখেছে। তবে তা কত পরিমাণ সেটা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।
“ডিমের কনডিশন ভালো, রেণু হবে। এখন নদীর পাড়ে সবাই প্রস্তুত আছে। আশা করি রাতেই মা মাছ ডিম ছেড়ে দিতে পারে।”