Published : 30 Apr 2025, 09:48 PM
বিশ্বের বনের রহস্য উন্মোচনের জন্য মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ।
মঙ্গলবার ফ্রেঞ্চ গায়ানার কৌরোতে অবস্থিত ইউরোপীয় মহাকাশ বন্দর থেকে ‘বায়োমাস’ নামের স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ করেছে সংস্থাটি।
‘এয়ারবাস ডিফেন্স’ ও ‘এরিয়ানস্পেস’-এর মাধ্যমে তৈরি এ স্যাটেলাইটটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন সম্পর্কে আরও ভালো করে বোঝা ও জানার জন্য ডিজাইন করেছে সংস্থাটি, বিশেষ করে বন কতটা কার্বন সঞ্চয় করে তা পরিমাপের লক্ষ্যে।
এ সফল উৎক্ষেপণটিতে মহাকাশ সংস্থা ও এ প্রকল্পের অংশীদাররা স্বাগত জানিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইউরোনিউজ।
উৎক্ষেপণের পর ইএসএর-এর ‘আর্থ অবজারভেশন প্রোগ্রাম’-এর পরিচালক সিমোনেত্তা চেলি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “খুবই সময়োপযোগী মুহূর্তে হয়েছে এ মিশনটি। এটি বিজ্ঞানের বিষয়, উদ্ভাবনের বিষয় ও পৃথিবীর মানুষদের স্বাস্থ্যেরও বিষয়।”
কিন্তু ঠিক কী কারণে এত গুরুত্বপূর্ণ এ স্যাটেলাইটটি?
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলে কার্বন সঞ্চয়ের বিষয়টি জানা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পৃথিবীতে প্রাণ টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বন।
বনের মধ্যে থাকা অসংখ্য গাছপালা মূলত সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানি শোষণ করে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ছাড়ে এবং এদের কোষের মধ্যে গ্লুকোজ বা চিনি আকারে শক্তি সঞ্চয় করে।
সালোকসংশ্লেষণের বিষয়ে বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেও বন সার্বিকভাবে কীভাবে কাজ করে তার বিভিন্ন জটিলতা বোঝার বিষয়টি এখনও চ্যালেঞ্জ হিসাবেই রয়ে গিয়েছে গবেষকদের কাছে।
বিশ্বের বনাঞ্চলে কী পরিমাণ কার্বন সঞ্চিত রয়েছে ও পরিবেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে কার্বন সঞ্চয়ের বিষয়টি কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা বুঝতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে গবেষকদের।
তারা বলছেন, সব বনের জন্য কার্বন সঞ্চয়ের বিষয়টি বোঝা কঠিন নয়। যেমন– উত্তর গোলার্ধের বনাঞ্চলের মানচিত্র তৈরির সক্ষমতা তাদের রয়েছে, বিশেষ করে ইএসএর-এর ‘সেন্টিনেল ১’ নামের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের কার্বন সঞ্চয়ের বিষয়টি বোঝা অনেক বেশি জটিল।
চেলি বলেছেন, “এর প্রথম কারণ হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশের জন্য দায়ী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন। তাই সার্বিকভাবে কার্বন চক্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এরা।
“দ্বিতীয়ত, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন অনেক বেশি ঘন হয় ও এ ধরনের বন দুর্গম হওয়ার কারণে এখানে মানুষের পক্ষে যাওয়া বেশ কঠিন, যা বনের ডেটা বা তথ্য যাচাইকে কঠিন করে তুলেছে।”
এ জ্ঞানের সীমা বাড়াতে ‘বায়োমাস’ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করেছে ইএসএ। যার লক্ষ্য হচ্ছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলে সঞ্চিত কার্বনের পরিমাণ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নতুন তথ্য সরবরাহ করা, যা বিজ্ঞানীদের কিছু জরুরি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ঠেকাতে সহায়তা করবে বলে দাবি তাদের।
চেলি বলেছেন, “বায়োমাসের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বনের সম্ভাব্য অবক্ষয় কীভাবে জলবায়ুর সমগ্র বিবর্তন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।”