Published : 03 May 2025, 04:04 PM
অনেকেই প্রকৃতি, পরিবেশ ও পৃথিবীর কথা ভাবেন। সে অনুসারে খাবারের অভ্যাসও তৈরি করেন তারা। পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় পৃথিবী থেকে কতটুকু মাংস খেতে পারেন সে পরিমাণ এবার বলে দিলেন গবেষকরা।
তারা বলছেন, পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি না করে সপ্তাহে প্রায় দুইশো ৫৫ গ্রাম মুরগির মাংস খেতে পারেন, যা তুলনায় প্রায় দুইটি ছোট মুরগির বুকের মাংসের সমান।
গবেষণাটি করেছেন ‘টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্ক’ বা ডিটিইউ-এর গবেষকরা। এতে উঠে এসেছে, গরুর মাংস বা ভেড়ার মাংসের মতো অল্প পরিমাণে লাল মাংসও পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও ডিটিইউ-এর পরিবেশ ও সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের গবেষক ক্যারোলিন এইচ গেবারা বলেছেন, তাদের হিসাব অনুসারে মাঝারি মাত্রার মাংস খাওয়াও পরিবেশের পক্ষে টেকসই নয়। কারণ, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ যতটুকু নতুন করে তৈরি হতে পারে তার থেকেও বেশি ব্যবহার হয়ে গিয়েছে। আর পৃথিবীর পক্ষে এই চাহিদা পূরণ করে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
তবে এখনও অনেক স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব খাবার রয়েছে, যার মধ্যে আছে কিছু মাংসও। যেমন– হাঁস বা মুরগি। তবে অবশ্যই গরুর মাংস নয়।
এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য এটা বোঝা যে, পুরো পৃথিবীর মানুষকে এমনভাবে খাবার দেওয়া সম্ভব কি না, যেখানে পৃথিবীর সীমিত সম্পদ যেমন জমি, পানি ও পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়।
গবেষকরা বলছেন, এর উত্তরটি হ্যাঁ। তবে এজন্য গোটা বিশ্বে নীতিগত পর্যায় ও মানুষের দৈনন্দিন খাবারের পছন্দ এই দুটি ক্ষেত্রেই বড় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
গবেষক গেবারা বলেছেন, অনেক মানুষ জানেন, তাদের “মাংস কম পরিমাণে খাওয়া উচিত” তবে ঠিক কতটা পরিমাণে তা তারা সঠিকভাবে জানেন না।
এ গবেষণায় প্রতি সপ্তাহে দুইশো ৫৫ গ্রাম মাংসের যে পরিমাণ বলে দেওয়া আছে সেটি ভোক্তাদের জন্য একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। যেমন, ডেনমার্কের বিভিন্ন সুপারমার্কেটে দুইটি মুরগির বুকের টুকরার সাধারণ একটি প্যাকেটের ওজন প্রায় ২৮০ গ্রাম, যা গবেষণায় সুপারিশ করা সাপ্তাহিক পরিমাণের চেয়ে কিছুটা বেশি।
গবেষণায় বলা হয়েছে, পরিবেশবান্ধব হওয়ার জন্য মানুষকে নিরামিষাশী হতে হবে। দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, মাছ ও সাদা মাংসওয়ালা খাবার পরিবেশের জন্যও বন্ধুত্বপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে সার্বিকভাবে কতটা ও কী ধরনের খাবার পৃথিবীতে রয়েছে এর ওপর নির্ভর করে।
গবেষণায় এক লাখেরও বেশি খাবারের তালিকায়ে বৈচিত্র্য বিশ্লেষণ ও এদের পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব হিসাব করেছে গবেষণা দলটি।
গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, সামান্য বা পরিমিত পরিমাণে গরুর মাংস খেলেও তা পৃথিবীর পরিবেশগত সীমা ছাড়িয়ে যাবে। তবে মাছ, নিরামিষ বা সম্পূর্ণ উদ্ভিদনির্ভর খাবার এই সীমার ভেতরে থাকার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সম্ভাবনা রাখে।”
গেবারা বলেছেন, গবেষণাটি মানুষকে বুঝতে সাহায্য করবে পরিবেশবান্ধব খাবারের বিষয়টি কেবল তাদের খাদ্যাভ্যাসকে কঠোর নিয়ম বা পছন্দের সবকিছু খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে নয়, বরং এটি খাবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়েও।
পনির, ডিম, মাছ বা কিছু সাদা মাংস খাওয়ার মাধ্যমেও একটি স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে পারেন, কেবল শর্ত হচ্ছে বাকি সব খাবার সচেতনভাবে বেছে নেওয়া, বলেছেন তিনি।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার ফুড’-এ।