Published : 02 May 2025, 02:37 PM
সোভিয়েত ইউনিয়নের শুক্র গ্রহগামী একটি মহাকাশ মিশনের ধ্বংসাবশেষ, যেটি গত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে, সেটি আগামী মে মাসের শুরুর দিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারে।
‘কসমস-৪৮২’ নামে পরিচিত মহাকাশযানটি ১৯৭২ সালের ৩১ মার্চ কাজাখস্তানের বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে ‘মোলনিয়া-৮কে৭৮এম’ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়। ধারণা করা হয়, এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের শুক্রগ্রহ অভিযানের অংশ ছিল, যদিও সে সময় মহাকাশ মিশনের ব্যর্থতা নিয়ে দেশটি কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
উৎক্ষেপণের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি কক্ষপথে আটকে পড়ে এবং রকেটের পেলোড চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে কিছু টুকরো মাত্র তিন দিন পর ৩ এপ্রিল নিউজিল্যান্ডের আকাশসীমা অতিক্রম করে পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মিশনের মূল অংশ এখনও পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ঘুরছে এবং সেটি ধীরে ধীরে কক্ষপথ হারিয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। বর্তমানে এটি প্রতি ৯০ মিনিটে একবার করে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস-ট্র্যাক জানায়, এটি ভূপৃষ্ঠের ১৫৬ থেকে ৩৯৪ কিলোমিটার উচ্চতায় একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে অবস্থান করছে এবং পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে এর কৌণিক অবস্থান ৫২ ডিগ্রি।
ধ্বংসাবশেষটির ওজন প্রায় ৫০০ কেজি। তুলনা করলে বলা যায়, ২০১১ সালে পৃথিবীতে ফিরে আসা ‘আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ স্যাটেলাইট’ বা ইউএআরএস-এর ওজন ছিল ৫ হাজার ৯০০ কেজি, তাই এটি মানুষের জন্য খুব একটা ঝুঁকি তৈরি করবে না বলেই ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
স্যাটেলাইট বিশ্লেষক মার্কো ল্যাংব্রোয়েক এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, “এই মহাকাশযানটির ল্যান্ডার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যেন সেটি শুক্র গ্রহের ঘন বায়ুমণ্ডল ভেদ করে অবতরণ করতে পারে। সেই প্রযুক্তির কারণে এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেও টিকে থাকছে।”
তিনি আরও জানান, এত পুরনো মহাকাশযান হওয়ায় এর পুনঃপ্রবেশের সময় ও স্থান নির্ধারণে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এটি ১০ মে’র আশেপাশে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে, তবে সময় ঘনিয়ে আসার আগ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।
ধারণা করা হচ্ছে, এটি পৃথিবীর ৫২ ডিগ্রি উত্তর থেকে ৫২ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে যেকোনো স্থানে পড়তে পারে, অর্থাৎ বেশ বিস্তৃত একটি অঞ্চলে এর পতনের সম্ভাবনা রয়েছে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় মহাকাশ প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন যে মিশনগুলো চালু করেছিল, তার অনেক তথ্য গোপন রাখা হতো। ফলে ‘কসমস-৪৮২’ মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত কখনই প্রকাশ করা হয়নি। তবে মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।