Published : 01 May 2025, 03:03 PM
প্রচলিত মিডিয়া দুনিয়া ‘এক সমুদ্রপরিমাণ পরিবর্তনের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, কিছু নাম স্রেফ হারিয়ে যাবে। আর, কিছু ইউটিউব চ্যানেল শিগগিরই টিভির মতোই শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন এক শীর্ষ উপস্থাপক ও সাংবাদিক।
টিভি মিডিয়ায় অতি পরিচিত পিয়ার্স মরগান। নানা সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে তীক্ষ্ণ মন্তব্য করে হয়েছেন আলোচিত। আর তিনি যে মত ধারণ করেন, সেটা প্রকাশে তিনি সবসময়ই সরব।
সম্প্রতি টেলিভিশন মাধ্যম ছেড়ে তিনি সওয়ার হয়েছেন স্ট্রিমিং মিডিয়ায়। ইউটিউবনির্ভর সেই ব্যবসার জন্য তহবিল সংগ্রহের এক আলোচনায় মরগান বলেছেন, শ্রোতাদের শোনার অভ্যাস দ্রুতই বদলে যাবে। আর, টিভি জগতের প্রভাবশালীরা শিগগিরই তাকে অনুসরণ করে স্ট্রিমিং পরিষেবায় চলে আসবেন।
“এই পরিবর্তনটি আসলে হবে যখন লোকজন ভিনাইল থেকে ডিজিটাল মিউজিকে চলে এল, তখনকার মতো। মানুষ ভেবেছিল, এ পরিবর্তনে সম্ভবত দীর্ঘ সময় লাগবে।”
হাতে তুড়ি বাজিয়ে মরগান বলেন, “অথচ লোকজন ঠিক এইভবে শিফট করেছে।
“যুক্তরাজ্যে কিছু দৈনিক পত্রিকার অস্তিত্বই থাকবে না। ১০ বছর পরে আর কোনো ছাপা সংস্করণ থাকবে বলে মনে হয়? তরুণরা কী করছে সে দিকে একবার তাকান। ৪৫ বছরের কম বয়সী কাউকে আমি ছাপা পত্রিকা কিনতে দেখি না। তাই ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করছে।
“মানুষ যদি ঘড়ির সেই টিকটিক শুনতে না পান, তবে খুবই বাজে রকমের চমক অপেক্ষা করছে। এটাই জেগে ওঠার শেষ সময়।”
সংবাদপত্র প্রকাশক ও মিডিয়া উদ্যোক্তা রুপার্ট মারডকের সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ ইউকে’তে চুক্তিভিত্তিক কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখন মরগান একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন যার নাম ‘পিয়ার্স মরগান আনসেন্সর্ড’। তিন বছরের ওই চুক্তির জন্য মরগান পাঁচ কোটি পাউন্ড পেয়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।
মরগান বলেছেন, স্ট্রিমিং পরিষেবায় ‘পুরোদমে’ কাজ করার সিদ্ধান্তটি তার চার সন্তানের কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি।
“আমার বাচ্চারা সবাই ইউটিউব দেখে। খেলার লাইভ না থাকলে ওরা কেউই টেলিভিশন দেখে না। এক বছর আগে আমি ছিলাম সেই আগের পুরোনো রুটিনে। রাত ৮টার লাইভ নিউজ শোতে যেতাম। অথচ ওই জীবন টেনে নেওয়ার আমার কোনো দরকারই ছিল না।”
মিডিয়াজুড়ে বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠছে ইউটিউব, বিশেষ করে ‘আইটিভি’ ও ‘চ্যানেল ফোর’-এর সম্প্রচারকরা এখন প্লাটফর্মটিতে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট আপলোড করছে। পডকাস্টাররাও ক্রমাগতভাবে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইউটিউবেই আপলোড করছেন।
২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে কেবল বিজ্ঞাপন থেকেই ইউটিউবের আয় হয়েছে আটশ ৯০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এদিকে, ২০২৩ সালের পুরো বছরে ‘চ্যানেল ফোর-এর আয় ছিল প্রায় একশ কোটি পাউন্ড।
গত বছরের মার্কিন নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে মরগান বলেন, ওই সময় ইউটিউব বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের দিন নির্বাচন সম্পর্কিত কনটেন্ট দেখেছেন সাড়ে চার কোটিরও বেশি মানুষ, যেখানে সেই সন্ধ্যায় ১৮টি কেবল ও সম্প্রচার নেটওয়ার্ক দেখেছেন গড়ে চার কোটি ২৩ লাখ দর্শক।
এ পরিসংখ্যানের সরাসরি তুলনা না চললেও মরগান বলেছেন, “এরপরও যদি আপনি না বুঝতে পারেন যে মানুষের নজর কোথায় যাচ্ছে তাহলে আমি জানি না কী হবে।”
তিনি বলেছেন, সাংবাদিকতা জগতের কিছু শীর্ষ নাম তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে আলাপ করার জন্য যে, তারা নিজেদের জন্য কীভাবে এই পরিবর্তন আনওতে পারেন।
“আমার ধারণা, প্রচলিত বিভিন্ন মিডিয়া কোম্পানিগুলোর উচিৎ আমার ও অন্যদের দিকে তাকানো এবং ভাবা যে, এই লোকগুলো কেন ইউটিউবের দুনিয়ায় চলে যাচ্ছে। আমি এখন যা করছি তা আরও অনেক মানুষ করবে। সাংবাদিকদের কাছ থেকে আমি অনেক মজার মজার ফোন পাচ্ছি।”
এখন গ্যারি লিনেকারের ‘গোলহ্যাঙ্গার প্রোডাকশন’-এর মতো কিছু করার পরিকল্পনা করছেন মরগান, যেটি যুক্তরাজ্যে সফল পডকাস্টের একটি সিরিজ হয়েছে।
‘মরগান আনসেন্সরড’ ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সত্যিকারের অপরাধ, ইতিহাস ও খেলাধুলার মতো নানা ঘরানার খবর কভার করে এমন চ্যানেল তৈরি করতে চান তিনি।
তবে এ কাজের জন্য কেবল ব্রিটেন নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও গোটা বিশ্বের দর্শকদের টার্গেট করেছেন মরগান। আর এসব দর্শক শ্রোতাদের নিজের পরিকল্পনার সঙ্গেও ‘প্রায় অপ্রাসঙ্গিক’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।