Published : 01 May 2025, 04:34 PM
হোয়াইট ওয়াইন, শ্যাম্পেইন পান করলে, বেশি ফল খেলে ও দেহে চর্বির পরিমাণ কম রাখলে হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি কমতে পারে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার নানা সমস্যা মোকাবেলা করে হাজার হাজার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি ঠেকানো যেতে পারে। শ্যাম্পেইন বা হোয়াইট ওয়াইন পান, বেশি ফল খাওয়া, মন ভালো রাখা, স্বাস্থ্যকর ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা মিলতে পারে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, শিক্ষিত বা এ বিষয়ে সচেতন মানুষদের হৃদরোগের ঝুঁকি কম মনে হলেও খারাপ ঘুমের ধরন ও পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মানুষের হৃদস্পন্দন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, যা সাধারণত কোনও সতর্কতা ছাড়াই ঘটে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
এমন অবস্থায় মানুষ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে ও শ্বাস নিতে পারেন না। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা না হলে মানুষ মারাও যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যান বলছে, হাসপাতালে আসার আগেই প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঘটনা ঘটে।
এ গবেষণায় হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন ৫৬টি ঝুঁকির কারণ চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা, যেখানে উঠে এসেছে ৬৩ শতাংশ ক্ষেত্রে এড়ানো সম্ভব হৃদরোগের ঝুঁকি।
গবেষকরা বলেছেন, “প্রত্যাশিতভাবেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী মানুষের জীবনধারা। সুস্থ জীবনধারাকে উৎসাহিত করার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো উচিত।”
এ গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ‘বায়োব্যাংক অফ ডেটায়’ অন্তর্ভুক্ত ৫ লাখ ২ হাজার ৯৪ জন মধ্যবয়সী থেকে বয়স্ক ব্যক্তির ওপর জরিপ চালান গবেষকরা, যেখানে ১৩ বছর আট মাসের সাধারণ ফলো-আপ সময়কালে তিন হাজার একশ ৪৭ জন ব্যক্তি হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়েছেন।
গবেষকরা বলছেন, হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে ৫৬টি ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকলে ৪০ শতাংশ থেকে ৬৩ শতাংশ ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, জীবনযাত্রার বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে শ্যাম্পেইন বা হোয়াইট ওয়াইন পান ও বেশি ফল খাওয়ার মতো বিষয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।
অন্যদিকে ‘বিরক্তিকর বা মেজাজ খারাপের মতো’ অনুভূতি, বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআইয়ের মাত্রা ঠিক নেই ও দেহে চর্বির পরিমাণ, উচ্চ রক্তচাপ থাকা এবং এ বিষয়ে জ্ঞান বা সচেতনতা কম থাকার কারণই হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি বাড়ায়।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও চীনের সাংহাইয়ের ‘ফুদান ইউনিভার্সিটি’র ড. হুইহুয়ান লুও বলেছেন, “গবেষণায় বিভিন্ন কারণ ও হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে প্রবলভাবে সংযোগ রয়েছে, যেখানে জীবনযাত্রার নানা পরিবর্তনই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো’র অধ্যাপক নিকোলাস গ্রুবিক ও অন্টারিওর ‘কুইন্স ইউনিভার্সিটি’র ডেকোটা গুস্তাফসন বলেছেন, “গবেষণার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ফলাফল হচ্ছে শ্যাম্পেইন ও হোয়াইট ওয়াইন পানের সঙ্গে হার্টের সুরক্ষার সংযোগ রয়েছে, যেখানে আমাদের দীর্ঘদিনের অনুমান ছিল রেড ওয়াইনের সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকার সংযোগ আছে। আমাদের দীর্ঘদিনের অনুমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এ গবেষণা।”
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘কানাডিয়ান জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’-এ।