স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে বাজেট সঙ্গতিহীন: তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী জোট

“আমরা পুরোপুরি হতাশ। বিগত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ল্যাপটপ, এফএমসি প্রিন্টার ও টোনার কার্টিজ আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করায় এখন মোট শুল্কহার ২৬ শতাংশ।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 01:41 PM
Updated : 4 June 2023, 01:41 PM

সরকারঘোষিত এবারের বাজেটে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের প্রস্তাবনার আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। বরং সেটি স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিহীন – এমনই দাবি করেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবসায়ী নেতাদের জোট।

‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)’, ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)’, ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)’, ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি)’ ও ‘ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশেন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)’-এর যৌথ উদ্যোগে ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বাজেট প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি উঠে আসে।

“সরকার প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে, যা  নি:সন্দেহে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় আকারের বাজেট। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক বা উল্লেখযোগ্য কোনো সুখবর নেই বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে।” --বলেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।

“এই খাতে কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো, সফটওয়্যার ও আইটিইএস থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার পাশাপাশি  আমরা দেশীয় সফটওয়্যার শিল্প বিকাশে বিশেষ প্রণোদনা ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছি। অথচ এগুলোর কোনোটাই আমলে নেওয়া হয়নি।”

অন্যদিকে, বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ ও নিরাপত্তা সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সফটওয়্যারের ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবনাকে স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

“আমরা পুরোপুরি হতাশ। বিগত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ল্যাপটপ, এফএমসি প্রিন্টার ও টোনার কার্টিজ আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করায় এখন মোট শুল্কহার ২৬ শতাংশ। এটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা আগের মতোই বহাল আছে। ফলে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় পুরোপুরি ব্যহত হবে।” --বলেন বিসিএস প্রতিনিধি।

বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তুলনামূলক কম মূল্যে বাংলাদেশ থেকে বিপিও পরিষেবা পেয়ে থাকেন। এর ফলে, আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তির শিল্পের বাজারে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। 

তিনি আরও যোগ করেন, এখনো ‘কনট্যাক্ট সেন্টার’-এর অনেক সফটওয়্যার দেশে তৈরি হয় না, ফলে বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এর ওপর বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম, ডেটা নিরাপত্তা ও অন্যান্য সফটওয়্যার আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপিত হয়েছে। ফলে, এই শিল্পে বিভিন্ন সেবার দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাজেট প্রস্তাবনায় এই শিল্পে কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০২৪ সালে থেকে বাড়িয়ে নূন্যতম ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার অনুরোধ জানানো হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে, ভবিষ্যতে বিপিও পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে, ক্রেতা আকর্ষণ কমে যাবে, নতুন বিনিয়োগ ব্যাহত হবে ও সর্বোপরি বিপিও শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

“প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও আইএসপি’র সকল পরিষেবা আইটিইএস-এর অন্তর্ভুক্ত না করা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত সামগ্রীতে শুল্ক না কমানো ও বিভিন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতার ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার না করা দেশের ইন্টারনেট সেবা প্রসার ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়াকে বাধাগ্রস্ত করবে” --বলেন আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক।

এমন বিপরীতমুখী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দেশের আইএসপি খাতকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর প্রধানের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।