‘ফাইনাল ফ্যান্টাসি’, ‘স্কাইরিম’ ও ‘ম্যাস ইফেক্ট’সহ ১৯৮৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত ৫০টি আরপিজি গেইমের সংলাপ বিশ্লেষণ করেন গ্লাসগো ও কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
Published : 24 May 2023, 04:28 PM
বিভিন্ন রোল-প্লেইং গেইমে নারীর তুলনায় পুরুষ চরিত্রগুলোর সংলাপ থাকে দ্বিগুণ। আর এটি গেইমিং শিল্পে ‘লিঙ্গ বৈষম্যের’ প্রতিচ্ছবি বলেইই উঠে এসেছে বিজ্ঞানীদের গবেষণায়।
‘আরপিজি’ বা রোল-প্লেয়িং ঘরানার গেইমে গেইমার সাধারণত কোনো কাল্পনিক জগতে বিভিন্ন অনুসন্ধান বা মিশন খেলার জন্য গেইমের একটি বা দুটি চরিত্র হয়ে খেলেন।
এই গবেষণায় ‘ফাইনাল ফ্যান্টাসি’, ‘স্কাইরিম’ ও ‘মাস ইফেক্ট’সহ ১৯৮৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত ৫০টি আরপিজি গেইমের সংলাপ বিশ্লেষণ করেন গ্লাসগো ও কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গেইমের ১৩ হাজার চরিত্রের ৬২ লাখ সংলাপ।
‘রয়াল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত ফলাফল অনুসারে, গবেষণা করা ৯৪ শতাংশ গেইমেই নারীদের তুলনায় পুরুষদের সংলাপ বেশি। এমনকি ‘ফাইনাল ফ্যান্টাসি এক্স-২’ বা ‘কিংস কোয়েস্ট ৭’-এর মতো গেইমে একাধিক মূল নারী চরিত্র থাকার পরও।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, প্রতি দশকে আরপিজি গেইমে নারীদের সংলাপের মাত্রা ছয় দশমিক তিন শতাংশ হারে বেড়েছে। অর্থাৎ ৮০’র দশকের প্রায় ১৮ শতাংশ থেকে এই দশক পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৪০ শতাংশে।
গবেষকরা আরও বলেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩৬ সালের আগ পর্যন্ত গেইমের সংলাপে ‘জেন্ডারভিত্তিক ভারসাম্য’ আসবে না।
“সামগ্রিকভাবে গেইমে পুরুষ চরিত্রের কথোপকথনের মাত্রা বেশি হবে, আমরা এমন আশা করলেও ৫০টি গেইমের কেবল তিনটিতে অর্ধেকের বেশি নারী চরিত্রের সংলাপ দেখে আমরা সত্যিই বিস্মিত।” --বলেন গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির ‘হিউম্যানিটিস’ বিভাগের দর্শন বিষয়ক গবেষণা সহযোগী ড. স্টেফানি রেনিক।
“গেইমের প্রধান চরিত্র থেকে শুরু করে ব্যাকগ্রাউন্ডের ‘নন-প্লেয়িং ক্যারেক্টার (এনপিসি)’ পর্যন্ত, গেইমের প্রতিটি স্তরে পুরুষের তুলনায় নারী চরিত্রের ঘাটতিও আমাদেরকে বিস্মিত করেছে।”
এই গবেষণার জন্য গবেষকরা গেইমগুলোয় ব্যবহৃত কথোপকথনের প্রতিলিপি সংগ্রহ করে প্রতিটি চরিত্রের কথোপকথন শনাক্ত করেছেন বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের’ প্রতিবেদনে।
“গেইমের চরিত্রগুলোর বাইনারি লিঙ্গ অনুমান না করে আমরা প্রতিটি চরিত্রের লিঙ্গ পৃথকভাবে শ্রেণিভুক্ত করেছি।”--বলেন কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের যোগাযোগ ও দর্শন বিষয়ক প্রভাষক ড. শন রবার্টস।
“এর মাধ্যমে আমরা প্রতিটি গেইমে প্রতি লিঙ্গের চরিত্রের জন্য কতগুলো শব্দ বরাদ্দ ছিল, তা গুনতে পেরেছি।”
“উদাহরণ হিসেবে, আমরা নারী ও পুরুষ চরিত্রগুলোর মাধ্যমে উচ্চারিত শব্দ সংখ্যার তুলনা করতে পারি।”
গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, কেবল ৩৫ শতাংশ শব্দ নারী চরিত্রের মাধ্যমে উচ্চারিত। আর এতে পুরুষ চরিত্রের তুলনায় তাদের ক্ষমা চাওয়ার, দ্বিধাবোধ করার বা ভদ্রতা দেখানোর প্রবণতাও বেশি।
বিশ্লেষণের সময় গবেষকরা ‘মাঙ্কি আইল্যান্ড’ নামে একটি গেইম খুঁজে পান, যা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। কারণ, এতে পুরুষের পাশাপাশি দুটি নারী নামধারী চরিত্রের পুরুষের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে কথা বলার প্রয়োজন ছিল।
এ ছাড়া, পরীক্ষা চলাকালীন কয়েকটি ‘প্রচলিত লিঙ্গ সংশ্লিষ্ট আচরণের’ নজিরও পেয়েছে গবেষণা দলটি।
গবেষকরা বলেন, গেইমারের চরিত্রের লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে পৃথক উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানায় ‘স্টারডিউ ভ্যালি’ গেইমের চরিত্রগুলো।
এর উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, নারী গেইমারদের সালাদ বা ওয়াইনের মতো খাবার দেওয়ার পাশাপাশি ভিডিও গেইমিংয়ে তাদের অভিজ্ঞতা কম, এমন অনুমান করে গেইমে তাদেরকে ‘সুন্দর’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। অন্যদিকে, পুরুষ গেইমারদের পাসতা বা ‘এইল’ (এক ধরনের বিয়ার) দেওয়ার পাশাপাশি তারা গেইমিংয়ে ভালো, এমন অনুমান করে তাদের ‘শক্তিতে ভরপুর’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৩ হাজার চরিত্রের মধ্যে কেবল ৩০টি ‘নন-বাইনারি’ লিঙ্গ শ্রেণিভুক্ত। গবেষকরা বলেন, এই সংখ্যা বাস্তব জীবনের প্রায় অর্ধেকের সমান।
“গেইমারদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী হলেও তারা প্রায়শই নিপীড়ন ও বাতিলের মতো অভিজ্ঞতায় পড়েন।”
“গেইমার ও ডেভেলপারদের এর চেয়েও বৈচিত্র্যময় প্রতিনিধিত্বের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।”
“তাই আমরা আশা করি, ডেভেলপাররা আমাদের খুঁজে পাওয়া ভারসাম্যহীনতা সমাধানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তুলনামূলক বেশি সম্পৃক্ত গেইম বানাবেন।”