এক দশকেই চাঁদে মানব বসতির স্বপ্ন দেখছে নাসা

যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হলে চাঁদে মানব জীবনধারণের উপযোগী স্থাপনা গড়ার জন্য কাজ শুরু করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2022, 12:32 PM
Updated : 20 Nov 2022, 12:32 PM

এ দশক শেষ হওয়ার আগেই চাঁদে মানব বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে নাসা। আর্টেমিস প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ ও যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হলে চাঁদে মানব জীবনধারণের উপযোগী স্থাপনা গড়ার প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।

আর্টেমিস ওয়ান মিশনের অংশ হিসেবে ১৬ নভেম্বর চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে ওরিয়ন স্পেসক্র্যাফট। চাঁদে ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক মিশনগুলো পরিচালনার জন্য দীর্ঘ সময় মানব জীবন ধারণের উপযোগী বাসস্থান প্রয়োজন হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওরিয়ন নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান হাওয়ার্ড হু।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসএলএস রকেটে চড়ে ওরিয়নের চন্দ্রযাত্রাকে ‘মানব সভ্যতার মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

বর্তমানে চাঁদ থেকে ৫৮ হাজার ৮০০ মাইল দূরে আছে আর্টেমিস। চাঁদে নভোচারীদের বয়ে নেওয়ার জন্যই ওরিয়নের নকশা করেছে নাসা। তবে, পরীক্ষামূলক প্রথম মিশনে কোনো মানব যাত্রী যানটিতে। তার বদলে তিনটি পুতুল বা ম্যানিকিন রয়েছে এতে।

১৬ নভেম্বরের আর্টেমিস ওয়ান উৎক্ষেপণ দেখার অভিজ্ঞতাকে ‘একটি অবিশ্বাস্য অনুভূতি’ এবং ‘একটি স্বপ্প’ ছিল বিবিসিকে বলেছেন হু।

“গহীন মহাকাশে অভিযান চালানোর প্রথম পদক্ষেপ এটি, কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয় বরং পুরো মানব সভ্যতার জন্য।”

“আমি মনে করি দিনটি কেবল নাসার জন্যই ঐতিহাসিক ছিল না, যারা মহাকাশযাত্রার ভক্ত এবং গহীন মহাকাশে অভিযান নিয়ে আগ্রহী তাদের জন্যেও একটা ঐতিহাসিক দিন ছিল।”

“আমরা চাঁদে ফেরত যাচ্ছি। একটা প্রকল্প দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি আমরা এবং এ যানটি আমাদের আবারও চাঁদে অবতরণের সুযোগ করে দেবে।”

আর্টেমিস ওয়ান সফল হলে দ্বিতীয় মিশনে মানব নভোচারীরা থাকবেন বলে জানিয়েছেন হু। আর তৃতীয় মিশনে নভোচারীদের নিয়ে চাঁদে অবতরণ করবে ‍ওরিয়ন। শেষবারে চাঁদে কোনো নভোচারীর পদচিহ্ন পড়েছিল ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে।

এখন পর্যন্ত আর্টেমিস ওয়ান মিশনের সবকিছু পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন হু। ঠিকঠাক কাজ করছে ওরিয়ন যানের সকল যন্ত্রাংশ।

আর্টেমিস ওয়ান মিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হবে ওরিয়নকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। ফেরার সময় ঘণ্টায় ৩৮ হাজার কিলোমিটার গতিতে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে ওরিয়ন, যা শব্দের গতির ৩২ গুণ। বায়মণ্ডলে প্রবেশের সময় ওরিয়নের নিচের অংশ ৩ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত হবে।

আর্টেমিস প্রকল্পের ভিন্ন ভিন্ন অংশ এবং নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হলে এ দশকের মধ্যে নাসা চাঁদে দীর্ঘসময় নভোচারীদের থেকে যাওয়ার উপযোগী কাঠামো নির্মাণ করতে চায় বলে জানিয়েছেন হু।

নাসার চাঁদে ফিরতে চাওয়ার একটি বড় কারণ হচ্ছে, উপগ্রহটির দক্ষিণ মেরুতে পানির অনুসন্ধান করা। চাঁদে সত্যিই পানি থাকলে তা মঙ্গলগামী মহাকাশযানের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

“আমরা নভোচারীদের চন্দ্রপৃষ্ঠে পাঠাবো এবং তারা সেখানেই থেকে গিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবেন।”

“পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরের মহাকাশ নিয়ে আরও জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর মাধ্যমে মঙ্গলে যাওয়ার বড় পদক্ষেপটি নিতে পারবো আমরা। আর্টেমিস মিশনগুলো আমাদের একটা টেকসই প্ল্যাটফর্ম এবং পরিবহন ব্যবস্থা দিচ্ছে যা আমাদের গহীন মহাকাশে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শেখার সুযোগ দিচ্ছে।”

১১ ডিসেম্বর পৃথিবীতে ফেরার কথা রয়েছে ওরিয়ন ক্যাপসুলের।