প্রযুক্তির এই ব্যবস্থায় সড়কে বা বাড়ির আঙিনায় বসানো প্রযুক্তির পাশাপাশি জনগণ আর অংশীজনদের কাছে নেওয়া তথ্য দ্রুত বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া সম্ভব।
Published : 24 Dec 2024, 09:28 AM
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে আবাসন আর জ্বালানি সুরক্ষা; বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ আর অপরাধ দমন- নগর ব্যবস্থাপনার সব উপাদান একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে হুয়াওয়ে।
প্রযুক্তির এই ব্যবস্থায় সড়কে বা বাড়ির আঙিনায় বসানো প্রযুক্তির পাশাপাশি জনগণ আর অংশীজনদের কাছে নেওয়া তথ্য দ্রুত বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া সম্ভব।
‘স্মার্ট সিটি’ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে স্মার্ট সিটি ইন্টেলিজেন্ট অপারেশন সেন্টারের (আইওসি) মাধ্যমে এমন ব্যবস্থাপনায় গেছে বিশ্বের প্রায় সাতশ শহর।
চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ে এই ব্যবস্থাপনাকে বলছে ‘ওয়ান স্ক্রিন সিটি থ্রিসিক্সটি ডিগ্রি’। যাতে কেবল একটি স্ক্রিনেই সব ধরনের সমস্যা ও তার সমাধানের প্রক্রিয়া একীভূত করা হয়েছে।
সম্প্রতি বেইজিংয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদলের কাছে এই ব্যবস্থাপনার নানা দিক তুলে ধরেন কোম্পানির একজন মুখপাত্র।
তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন সরকারি বিভাগের জন্য ইন্টেলিজেন্ট কম্পিউটিং, বিশ্লেষণ ও ডিজিটাল সেবা দেওয়া হয়, যাতে ইন্টেলিজেন্ট ভিডিও ডিসকভারি, মানচিত্র ধরে তথ্যগ্রহণ এবং জনগণের অভিযোগ বা মতামতের দ্রুত নিষ্পত্তির সমন্বিত ব্যবস্থা থাকে।
এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে চীনের একটি শহর যে কোনো অভিযোগের বিষয়ে সাড়া দিতে ৫০ সেকেন্ড সময় লাগে, যেখানে আগে লাগত গড়ে ৪ মিনিট।
বেইজিংয়ে হুয়াওয়ের এক্সিকিউটিভ ব্রিফিং সেন্টারে ওই পরিদর্শনে কোম্পানির বেড়ে উঠার গল্প এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন মুখপাত্র।
হুয়াওয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি সরবরাহকারী কোম্পানি হিসেবে বেশি পরিচিত হলেও হুয়াওয়ে কাজ করে বিস্তৃত পরিসরে।
“হুয়াওয়ের রয়েছে মূলত পাঁচটি বিভাগ- আইসিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার, কনজ্যুমার, ক্লাউড কম্পিউটিং, ডিজিটাল পাওয়ার, ইন্টেলিজেন্ট অটোমোটিভ সলিউশন্স।”
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৮৭ সালে মাত্র ২০ হাজার চীনা ইউয়ান (বর্তমানে বাংলাদেশি তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা) নিয়ে চীনে যাত্রা শুরু করা হুয়াওয়ে গত বছর শুধু গবেষণা ও উন্নয়নেই বিনিয়োগ করেছে ১৬৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন চীনা ইউয়ান (প্রায় ২ হাজার ৮০০ বিলিয়ন টাকা)। বর্তমানে এ কোম্পানির কর্মীসংখ্যা দুই লাখের বেশি, যার ৫৫% কাজ করে গবেষণা ও উন্নয়নে।
বিশ্বজুড়ে ১৭০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলের মত বাংলাদেশেও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে পণ্য ও সেবা দেওয়ার কথা তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে।
হুয়াওয়ে বলছে, টেলিকম সেবার অবকাঠামো থেকে শুরু করে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের প্রতিটি স্তরেই হুয়াওয়ের অবদান ‘বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য’। কোম্পানির বৈশ্বিক লক্ষ্য অনুসারে বাংলাদেশের জন্য মূল লক্ষ্য হল ‘বিল্ডিং এ ফুললি কানেক্টেড ইন্টেলিজেন্ট বাংলাদেশ’ বা ‘একটি সম্পূর্ণ সংযুক্ত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বাংলাদেশ গঠন’।
বিবৃতিতে বলা হয়, “বিদ্যুতের কারণে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে এ খাতকে সোলার নির্ভর করার ধারণা প্রথম বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করে হুয়াওয়ে। সম্প্রতি বাংলাদেশের টেলিকম বিটিএসের (বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন) জন্য লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে হুয়াওয়ে ও ওয়ালটন।
এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে টেলিকম লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে ওয়ালটনকে প্রযুক্তিগত সহায়তা, নকশায় দক্ষ কর্মী, কাঁচামাল ও নির্দেশনা দেবে হুয়াওয়ে।
বাংলাদেশের প্রথম ই-গভর্নমেন্ট ক্লাউড প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্ধশতাধিক কোম্পানিকে হুয়াওয়ের ক্লাউড সেবা দেওয়ার কথাও তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে।
সেখানে বলা হয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হাই-পারফরম্যান্স কম্পিউটিং (এইচপিসি), ক্লাউড, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট শিক্ষার সুযোগ ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিআরইএন)-এর সঙ্গে হুয়াওয়ে সম্প্রতি কৌশলগত সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছে।
“এই প্রক্রিয়ায় হুয়াওয়ে বিডিআরইএনের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে উচ্চগতির ইন্টারনেট বা ডেটা সংযোগ হার্ডওয়্যার, তারযুক্ত (সুইচ) ও তারহীন ওয়াই-ফাই (এপি) সরন্জাম এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন অপারেশনাল সফটওয়্যার সরবরাহ করবে।”
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হুয়াওয়ে স্মার্ট হাইওয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ইনটেলিজেন্ট হাইওয়ে সিস্টেম তৈরির কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, এই প্রকল্পের আওতায় সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য লাইসেন্স প্লেট শনাক্তকরণ ক্যামেরা, স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ ক্যামেরা ও নিয়ম লঙ্ঘন শনাক্তকরণ সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে।
“এটি বাংলাদেশের হাইওয়ে নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ফলে পুলিশ কন্টোল রুম টিম অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় অ্যালার্ম পেয়ে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিতে পারে এবং সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটর করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।”