প্রচলিত ও সাশ্রয়ী মূল্যের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে এ নিরাপদ কি বিনিময়ের এক উপায় খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যেমন– ঘরবাড়ি ও ভবনে এরইমধ্যে ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন ফাইবার অপটিক কেবল।
Published : 09 Apr 2025, 04:39 PM
সাইবার অপরাধীদের থামাতে পারে নতুন এক ইন্টারনেট নিরাপত্তা প্রযুক্তি। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে হ্যাকিংও ঠেকাবে বলে দাবি করেছে এর নির্মাতারা।
ভবিষ্যতের হুমকি থেকে ইন্টারনেটের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে রক্ষার এই নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছেন জার্মানির ‘কার্লসরুয়ে ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ বা কেআইটি’র গবেষকরা।
তারা বলছেন, এটি শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য হুমকি হতে পারে এমন হামলাও ঠেকাবে।
কেআইটি’র অধ্যাপক লরেন্ট শ্ম্যালেন বলেছেন, বর্তমানের বেশিরভাগ এনক্রিপশন পদ্ধতি নির্ভর করে বড় সংখ্যাকে মৌলিক সংখ্যায় ভেঙে ফেলার ওপর, যার সীমাবদ্ধতা আছে।
এ কাজটি সাধারণ কম্পিউটারের জন্য কঠিন হলেও বিভিন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার এসব কাজ আরও দ্রুত করতে পারে, যা বর্তমানের এনক্রিপশন পদ্ধতিকে অকেজো করে তুলবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ ঝুঁকি ঠেকাতে কেআইটি’র গবেষকদের দলটি তাদের অংশীদারদের সঙ্গে মিলে এমন এক পদ্ধতি তৈরিতে কাজ করেছে, যেখানে ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ঝুঁকির বিরুদ্ধে কাজ করতে প্রচলিত এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, এ পদ্ধতিটি তৈরি হয়েছে ‘সিমেট্রিক এনক্রিপশন’ নামের এক পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে, যেখানে আলাপচারিতার সময় উভয় পক্ষই বার্তা বা টেক্সট লক ও আনলক করতে একই ডিজিটাল কি ব্যবহার করবে।
কাজটি সঠিকভাবে করা গেলে এ পদ্ধতিটি খুব নিরাপদ। তবে সমস্যাটি হচ্ছে, কি’টি নিরাপদে ভাগ করে নেওয়ার বিষয়টি ব্যয়বহুল এবং এজন্য জটিল টুলেরও প্রয়োজন।
এ প্রকল্পের বড় সাফল্য হচ্ছে, প্রচলিত ও সাশ্রয়ী মূল্যের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে এ নিরাপদ কি বিনিময়ের এক উপায় খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যেমন– ঘরবাড়ি ও ভবনে এরইমধ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফাইবার অপটিক কেবল।
যার মানে হচ্ছে, বিশেষ ডিভাইসের প্রয়োজন ছাড়াই বিশ্বজুড়ে ব্যবহার করা যেতে পারে এ পদ্ধতিটি, যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও ব্যবহারিক ও সবার কাছে সহজ করে তুলবে এটিকে।
সম্প্রতি ‘লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখ’ বা এলএমইউ মিউনিখে রিয়েল টাইমে তাদের এ পদ্ধটিটি পরীক্ষা করেছে গবেষণা দলটি। নতুন পদ্ধতিটি ব্যবহার করে তাদের ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে নিরাপদে একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন তারা।
উভয় পক্ষই ঠিক একই এনক্রিপশন কি পেয়েছে তা নিশ্চিত করতে ও অন্য কেউ যাতে তা চুরি করতে না পারে সেজন্য স্মার্ট অ্যালগরিদম তৈরি করেছেন গবেষকরা, যা পরিবর্তনশীল নেটওয়ার্ক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কেউ আড়ি পাতার চেষ্টা করলেও কি বিনিময় নিরাপদ তা নিশ্চিত করবে এসব অ্যালগরিদম।
‘এডিভিএ নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি’র গবেষণা ও উন্নয়ন পরিচালক টোবিয়াস ফেহেনবার্গার বলেছেন, ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে নিরাপদ করার ক্ষেত্রে এ প্রকল্পটি বড় একটি পদক্ষেপ।
তিনি বলেছেন, আদর্শ টুল’সহ কার্যকর এক ব্যবস্থা তৈরিতে তাদের এ সাফল্য থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, এ ধরনের নিরাপত্তার বিষয়টি কেবল ল্যাবের জন্যই নয়, বরং শিগগিরই বাস্তব বিশ্বের পরিস্থিতিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, শক্তিশালী বিভিন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার বাস্তবে পরিণত হওয়ার পরেও বিভিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিরাপদ থাকতে পারে বলে এ নতুন পদ্ধতিটিকে ধন্যবাদ।